যুদ্ধ থেকে পালিয়ে ফ্রান্স মাতাচ্ছে ইউক্রেনীয় সার্কাস দল
১০ জুলাই ২০২২একটি রিং থেকে ঝুলে বিপজ্জনক ব্যালে দেখাচ্ছেন তিনি। এভাবেই মনোরঞ্জন করছেন দর্শকদের।
এই ব্যালে শিল্প বিপজ্জনক নয় বছর একত্রিশের মাজুরের কাছে। রুশ আগ্রাসন দেখেছেন তিনি। রাশিয়া তার নিজের দেশে হামলা চালানোর কয়েক সপ্তাহ পরে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মাজুরের মতো আরো কয়েকজন।
প্রায় এক ডজন অ্যাক্রোব্যাট, ক্লাউন, জাগলার এবং কনটর্শনিস্ট (নিজের দেহকে যে কোনো দিকে বেঁকিয়ে পেশির খেলা দেখানোয় দক্ষ) ফরাসি থিয়েটারের এক পরিচালকের প্রস্তাবে সাড়া দেন। ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসেন ফ্রান্সে। যুদ্ধ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে ইউক্রেনীয় শিল্পীদের শো করার সুযোগ দিয়েছিলেন ওই পরিচালক।
‘‘আমি এখানে রয়েছি, আমার পরিবার রয়েছে জার্মানিতে’’, মহড়ার মাঝে রয়টার্সের প্রতিনিধিকে সাক্ষাত্কার দিতে গিয়ে এমনটাই বলেন মাজুর।
তার কথায়, ‘‘যুদ্ধ তো থামছে না। আমরা চাই আরো বেশি মানুষ এ বিষয়ে জানুক। দ্রুত যুদ্ধ থেমে যাক, এমন আশা রাখি।’’
নতুন এই দলটি নিজেদেরকে 'জিরকা' বলে উল্লেখ করছে। ইউক্রেনীয় ভাষায় যার অর্থ হল তারা। তাদের কেউ ইউক্রেনে প্রিয়জনদের রেখে এসেছেন। কেউ বা সন্তানদের নিয়ে এসেছেন। কেউ সামান্য কিছু জিনিসপত্র সঙ্গে আনতে পেরেছেন, যেটুকু বহন করা সম্ভব।
আয়োজকরা বলছেন, এটি আশা ও স্বাধীনতার প্রদর্শনী। শোয়ের সময় কেউ বা সামরিক পোশাক পরেছেন, রণক্লান্ত সেনার ভূমিকায় অভিনয় করছেন। কেউ বা দেশের জাতীয় পতাকায় নিজেকে মুড়ে রেখেছেন।
মঞ্চ পরিচালক জেরার্ড ফাসোলি বলেন, ‘‘ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতিকে বোঝানো হচ্ছে । হালকাচ্ছলে গভীর বার্তা দেয়ার চেষ্টা। আমাদের পরিবেশনা থেকে দর্শকরা এ গল্পের নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করবেন৷’’
ভ্যাচেস্লাভ ইরোশনিকভ নামে এক শিল্পী বলেন রুশ আগ্রাসনে নিজের দেশ ছেড়ে আসা বেদনাদায়ক।কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি এবং তার সঙ্গী, সার্কাস দলের একজন সহ অভিনেতা, তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন।
তার কথায়, ‘‘আমার মনের একদিক বলছিল, ‘তোমাকে এখানে থাকতে হবে' অন্যদিক বলছিল, ‘তোমার পরিবার আছে, তোমায় তাদের দেখতে হবে’।’’
শো মাস্ট গো অন, শিল্পী জীবনের এই মন্ত্রেই এগিয়ে চলেছেন তারা সবাই। সার্কাসের এই ব্যালে রিং আসলে হয়তো তাদের জীবনের রূপক।
আরকেসি/এডিকে (রয়টার্স)