1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির সফলতম রাজনৈতিক দল

৭ জুলাই ২০১৭

ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৯, ১৯৮২ থেকে ১৯৯৮ এবং ২০০৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত একক দল বা জোট সরকারের বড় তরফ হিসেবে ক্ষমতায় থেকেছে খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ ও তাদের বাভেরীয় সহযোগী সিএসইউ৷

https://p.dw.com/p/2g9Yg
CDU und CSU stellen Wahlprogramm zur Bundestagswahl vor
ছবি: picture alliance/dpa/K.Nietfeld

নাৎসি জার্মানির পতনের পর জার্মানিতে যখন একটি নতুন রাজনৈতিক ধারার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন নাৎসি-পূর্ব ভাইমার প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন রাজনীতিক মিলে জার্মান রাজনীতির পুনর্বিন্যাসের জন্য সচেষ্ট হন৷ বিভিন্ন শহরে বিক্ষিপ্ত আলাপ-আলোচনা থেকে জন্ম নেয় একটি ঐক্যবদ্ধ ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন বা খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী সংঘ৷ তারিখটা ছিল ১৯৪৫ সালের ২৬শে জুন৷ মনে রাখতে হবে, সরকারিভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে তখনও মাস দু'য়েক বাকি৷

ভাইমার প্রজাতন্ত্রের আমলে গণতান্ত্রিক দলগুলির মধ্যে অনৈক্যের ফলেই নাৎসিরা ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়েছিল, এই ধারণা থেকেই ‘ইউনিয়ন' – অর্থাৎ সিডিইউ-সিএসইউ দলগুলির জন্ম৷ বিশেষ করে রোমান ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্টদের মধ্যে বিরোধ থেকে আডল্ফ হিটলারের উত্থান সম্ভব হয়েছে, বলে ইউনিয়ন দলগুলির নেতৃবর্গের ধারণা ছিল৷ সেই বিভেদ অতিক্রম করার জন্য উভয় সম্প্রদায়ের খ্রিষ্টানদের নিয়ে ও ‘সংঘ' নাম দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টির প্রচেষ্টা করা হয়৷ সেই সঙ্গে যুক্ত হয় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিচারে একটি উদারপন্থি-রক্ষণশীল ধারা৷ কনরাড আডেনাউয়ার ছিলেন এই সামগ্রিক মনোভাবের ধারক ও বাহক৷ ১৯৫০ সালের ২১শে অক্টোবর তারিখে সিডিইউ দলের প্রথম দলীয় সম্মেলনে তিনি দলের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন৷

জার্মানির পূর্বাংশ সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার ফলে গোড়ার দিকে সিডিইউ দলের কিছু সদস্য সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণার দিকে ঝুঁকলেও, ১৯৫০ সালে প্রথম দলীয় সম্মেলনের আগেই খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীরা বহুলাংশে এ বিষয়ে একমত হন যে, ‘‘সামাজিক খোলাবাজারের অর্থনীতি'' জার্মানির পক্ষে সেরা পন্থা – অর্থাৎ খোলাবাজারের পুঁজিবাদের সঙ্গে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও কল্যাণরাষ্ট্রের সংমিশ্রণই দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে৷

সিডিইউ দল ও তাদের বাভেরীয় ‘সহোদরা' ক্রিস্টিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন অর্থাৎ খ্রিষ্টীয় সামাজিক সঙ্ঘ বা সিএসইউ দল ১৯৪৯ সালের নির্বাচন ও পঞ্চাশের দশকের নির্বাচনগুলিতে বিপুল সাফল্য লাভ করে প্রধানত দু'টি কারণে: প্রথমত, দলের প্রথম দুই নেতা, কনরাড আডেনাউয়ার ও তাঁর উত্তরসুরি লুডভিশ এর্হার্ড; দ্বিতীয়ত, সিডিইউ দলের প্রতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী শক্তিদের, এক্ষেত্রে মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকারের পরোক্ষ সমর্থন৷

চল্লিশের দশকের শেষেই পশ্চিমি শক্তিদের চোখে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল সিডিইউ দলের চেয়ে বেশি জাতীয়তাবাদী ও জার্মান পুনর্মিলনের পক্ষপাতী বলে বিবেচিত হতে শুরু করেছিল – প্রয়োজনে সোভিয়েত ইউনিয়নকে সুযোগসুবিধা দিতেও এসপিডি দ্বিধা করবে না, বলে মিত্রশক্তিদের ধারণা ছিল৷ অপরদিকে সিডিইউ দলের অর্থনৈতিক ধ্যানধারণা ও কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে আরো একটি শক্তি হিসেবে দলটি পশ্চিমি শক্তিদের সমর্থন পাচ্ছিল৷

আডেনাউয়ারের আমল

যুদ্ধপরবর্তী জার্মানিকে ধ্বংস থেকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়া ও জার্মানিকে ইউরোপীয় তথা পশ্চিমি দেশগুলির কাছে পুনরায় গ্রহণযোগ্য করে তোলার পিছনে কনরাড আডেনাউয়ার-এর অবদান জার্মানি তথা বিশ্বে সর্বজনস্বীকৃত৷ ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৩ সাল অবধি চ্যান্সেলর ছিলেন আডেনাউয়ার – তথাকথিত ‘জার্মান অর্থনৈতিক আশ্চর্যের' সূচনা তাঁরই কর্মকালে৷ ১৯৫২ সালে ইউরোপীয় কয়লা ও ইস্পাত সমিতি গঠনে সংশ্লিষ্ট ছিলেন আডেনাউয়ার – যা কিনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক পূর্বসুরি বলে গণ্য করা যায়৷ ১৯৫৫ সালে ‘বুন্ডেসভের' নাম দিয়ে নতুন জার্মানি সেনাবাহিনি সৃষ্টিও তাঁর কাজ৷ আডেনাউয়ারের পর চ্যান্সেলর হন লুডভিশ এরহার্ড, যাঁকে ‘জার্মান অর্থনৈতিক আশ্চর্যের' জনক বলা হয়ে থাকে এবং যিনি চ্যান্সেলর হবার আগে আডেনাউয়ারের মন্ত্রীসভায় অর্থমন্ত্রী ছিলেন৷ এরহার্ড চ্যান্সেলর ছিলেন ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৬ সাল অবধি৷ তাঁর পরে চ্যান্সেলর হিসেবে আসেন কুর্ট গেয়র্গ কিসিংগার, যিনি ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সাল অবধি ঐ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন৷ অতঃপর সিডিইউ দলকে পুনরায় চ্যান্সেলর পদাভিষিক্ত হবার জন্য দীর্ঘ ১৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়৷

হেলমুট কোল-এর আমল

তবে সে প্রতীক্ষা স্বার্থক হয়, বলা চলে৷ সদ্য প্রয়াত হেলমুট কোলকে দুই জার্মানির পুনর্মিলনের জনক বলা হয়ে থাকে৷ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তিনি প্রথমে পশ্চিম জার্মানি, অতঃপর পুনরেকীকৃত জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন৷ অপরদিকে আডেনাউয়ারের ‘পৌত্র' প্রজন্মের রাজনীতিক হেলমুট কোল ছিলেন ‘পিতামহের' মতোই ইউরোপীয় ঐক্যের ধারণার ধারক ও বাহক – স্ট্রাসবুর্গের পার্লামেন্টে প্রথম ইউরোপীয় রাজনীতিক হিসেবে তাঁর জন্য বিশেষ শোকানুষ্ঠান যার প্রমাণ৷

কোল ও তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া মিতেরঁ-র মধ্যে সখ্যতা যে শুধু জার্মান পুনর্মিলনের পথ খুলে দিয়েছিল, শুধু তাই নয়; অতঃপর ইউরো মুদ্রার প্রচলন থেকে শুরু করে শেঙেন চুক্তি বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্বমুখী সম্প্রসারণ – এক কথায় ইইউ বলতে মানুষ আজ যা কিছু বোঝে, তার সব কিছুর পিছনেই কাজ করেছে ঐ ফরাসি-জার্মান মৈত্রী, যা এমন একটি ধারা, যা হালের ম্যার্কেল-ম্যাক্রোঁ সম্পর্কেও অটুট আছে৷

আঙ্গেলা ম্যার্কেলের আমল

হেলমুট কোল ১৯৮২ থেকে ১৯৯৮ সাল অবধি জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির যে সিডিইউ রাজনীতিককে তিনি তাঁর উত্তরসুরী হিসেবে অজান্তেই গড়ে দিয়েছিলেন, তিনি হলেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল, যিনি ২০০৫ সাল থেকে জার্মানির চ্যান্সেলর পদে অধিষ্ঠিত – এবং জরিপ বলছে যে, আগামী সেপ্টেম্বরের সংসদীয় নির্বাচনে তাঁর একটি চতুর্থ কর্মকাল প্রাপ্তির সম্ভাবনা কম নয়৷ অপরদিকে যাকে একদিন কিছুটা তাচ্ছিল্য করে ‘কোল-এর খুকি' বলা হত, তিনি আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাস্তবিক নেতা, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নারী ও স্বাধীন বিশ্বের নেত্রী হিসেবে বর্ণিত ও বিবেচিত হচ্ছেন৷ 

রক্ষণশীল কিন্তু বাস্তববাদী

খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন বা সিডিইউ একটি রক্ষণশীল দল – রাজনৈতিক বিচারে তারা নিজেদের ‘মধ্যম-ডান' বলে থাকে৷ একটি ‘ফল্কসপার্টাই' বা গণদল হিসেবে দলের জনসমর্থনের প্রশস্ত ভিত্তি বজায় রাখাই হল দলের সর্বোচ্চ লক্ষ্য৷ নয়তো অপরাধীদের দণ্ডদানের মাত্রা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদের ঘটনায় সেনাবাহিনীকে নিয়োগ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রসঙ্গে দলের রক্ষণশীল মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়৷ অপরদিকে বিপুল সংখ্যায় উদ্বাস্তু আগমন সত্ত্বেও আঙ্গেলা ম্যার্কেল দলের খ্রিষ্টীয় কর্তব্যের দোহাই দিয়েছেন ও কোনো সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্দিষ্ট করতে অস্বীকার করে এসেছেন৷ সিডিইউ দল চায় যে, বহিরাগতরা জার্মান ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হোন ও জার্মান সমাজের অঙ্গ হয়ে উঠুন৷ বিদেশনীতির ক্ষেত্রে সিডিইউ দল ইউরোপীয় সংহতির সমর্থক – অপরদিকে সিডিইউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে বিশ্বাস করে৷ সিডিইউ দল বর্তমান পরিস্থিতিতে তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সদস্য হওয়ার বিরোধী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য