প্রসঙ্গ: যুদ্ধাপরাধ বিচারের স্বচ্ছতা
২৫ মার্চ ২০১৬বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তৈরি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ২২ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে চারজনের৷ এই বিচার নিয়ে সমালোচনা থাকলেও রয়েছে ভিন্নমতও৷
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ৷ সেই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে কেউ সমালোচনা করতেই পারেন৷ এটাকে আমরা স্বাভাবিকভাবেই দেখি৷ মুশকিল হলো, এই সমালোচনাগুলো যৌক্তিক এবং তথ্যভিত্তিক হলে তা গ্রহণ করা যেত৷ কিন্তু সমালোচকদের অধিকাংশ সমালোচনারই কোনো ভিত্তি নেই৷''
তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে আপিলের সুযোগ আছে৷ ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে যা ছিল না৷ তাছাড়া এই বিচারে আপিলের পরও রিভিউ এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন অভিযুক্তরা৷ তাদের সব ধরনের আইন ও সাংবিধানিক অধিকার এবং সুযোগ দেয়া হচ্ছে৷ এছাড়া আরও একটি সুযোগ তারা পাচ্ছেন৷ আর সেটা হলো জামিন৷ বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে অভিযুক্তের জামিনের সুযোগ আছে বলে আমার জানা নাই৷''
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আরো বলেন, ‘‘ট্রাইব্যুনাল আইন যে একটা আলাদা আইন, এটা অনেকে বুঝতে পারেন না৷ একবছর পরও পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে বিচার হচ্ছে৷ যারা সমালোচনা করছেন, তারা কিন্তু বিচার প্রক্রিয়াতেও অংশ নিচ্ছেন৷ তাই রায় তাদের বিপক্ষে গেলেই বলছেন বিচার মানি না৷ এটা তো আদালত অবমাননার সামিল৷''
এ বিষয়ে শহিদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা খুশি যে, দেরীতে হলেও বিচার পাচ্ছি৷ আমাদের স্বজন হত্যার বিচার পাচ্ছি৷ দেশ কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে৷ বাংলাদেশে একজন যুদ্ধাপরাধী বেঁচে থাকা পর্যন্ত এই বিচার অব্যাহত রাখতে হবে৷ একমাত্র তবেই আমাদের স্বাধীনতা দিবস-বিজয় দিবস পূর্ণতা পাবে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘এই ঘাতক এবং স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে৷ এখনো তারা পাকিস্তানি ভাবধারা লালন করে৷ তাই তাদের কোনো ক্ষমা নাই৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘‘আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার চাই৷ কিন্তু তারাও যাতে বিচারের সব সুযোগ পাক, সেটাও চাই আমরা৷ আমার মনে হয় তারা আইনগত সব সুবিধাই পাচ্ছেন৷ বরং আমরা যারা বিচারপ্রার্থী, তারা দীর্ঘদিন কোনো বিচার পাইনি৷ আর এখনো বিচার হচ্ছে সাধারণ গতিতে৷ এটা কোনো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল নয়৷ আমিও চাই যে, স্বাভাবিক গতিতেই বিচার চলুক৷ কারণ বিচারটা তো সব পক্ষের৷''
ইতিহাসবিদও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যারা বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন তারা রাজনৈতিক কারণে করেন৷ ট্রাইব্যুনালের রায় শুধু মানোত্তীর্ণ নয়, কালোত্তীর্ণ বলে আমি মনে করি৷ এই রায় একসময় অনুসরণীয় হবে বলেই আমার বিস্বাস৷''
তাঁর কথায়, ‘‘বিচারে আন্তর্জাতিক মানের কোনো ঘাটতি নেই৷ আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে যারা সমালোচনা করছেন তারা অধিকাংশই আসামিদের পক্ষে কাজ করছেন৷ তাদের পক্ষে কথা বলার জন্যই তারা নিযুক্ত৷''
আপনিও কি মনে করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো ঘাটতি নেই? জানান নীচের ধরে৷