সতীত্ব ও ধর্ম রক্ষার নামে বিয়ে
৩১ জুলাই ২০১৩পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে সরকার বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ঠিক করে দিয়েছে ২০০২ সালে৷ সে অনুযায়ী ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনি৷ কিন্তু কিছু ধর্মীয় সংগঠন সে নিয়মের বিরুদ্ধে৷ বাবা-মা-ও চাননা মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে৷ তাই ২০১১ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের শিশু তহবিলের বার্ষিক প্রতিবেদন দেখা যায়, খুব কম বয়সে মেয়েদের বেশি বিয়ে দেয়া হয় এমন দেশগুলোর মধ্যে নাইজার একেবারে ওপরের দিকে৷
বয়স ১৮ হওয়ার আগে বিয়ে বেআইনি ঘোষণা করার ১১ বছর পরও সাধারণ মানুষ কেন তা মানছেনা? অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার এল হাজি সাউলি মুসা কারণ জানাতে গিয়ে বললেন, ‘‘একটি কম বয়সি মেয়েকে বিয়ে করায় গর্বের একটা ব্যাপার থাকে৷ বিয়ে করে আসলে মেয়েটিকে বিয়ে না করেও অন্তঃসত্ত্বা হওয়া থেকে বাঁচানো হয়৷'' তাই ২০১২ সালের জরিপের ফলাফলে দেখা গেল দেশের শতকরা ৭৫ ভাগ মেয়েরই বিয়ে হয়ে যায় বয়স ১৮ হওয়ার আগে৷
আমিনাতু আব্দু দু মেয়ের মা৷ মেয়েদের বিয়ে দিয়ে এখন তিনি নিশ্চিন্ত৷ বিয়ের সময় এক মেয়ের বয়স ছিল ১৫, আরেক মেয়ের ১৬৷ কেন এত অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিলেন? ৫৩ বছর বয়সি গৃহিণী বললেন, ‘‘আমাদের মতো মুসলমানদের জীবনে বিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ বয়সন্ধিকাল শুরু হওয়ার পরও কোনো মুসলিম মেয়ের স্বামী থাকবে না, এটা কখনো মেনে নেয়া যায়না৷''
নাইজারে তাই কমবয়সে বিয়ে এবং বিয়ের পরপরই মা হতে গিয়ে মেয়েদের অকালে মারা যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে৷ এল হাজি সাউলি মুসা এবং আমিনাতু আব্দুর মতো অনেকে ধর্মের কথা বলে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দেয়া সমর্থন জানালেও এর বিরুদ্ধেও এখন গড়ে উঠছে জনমত৷ আবিদজান বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্বের ছাত্র আব্দু সানি মনে করেন, অজ্ঞতা এবং দারিদ্র্যের কারণেই মানুষ ধর্মের অপব্যখ্যা দিয়ে মেয়েদের তড়িঘড়ি বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে৷ শিক্ষিকা হাফিজা ইসোফু তাঁর সঙ্গে একমত৷ কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেয়া বন্ধ করার উপায় দেখাতে গিয়ে একটা কথাই বললেন হাফিজা, ‘‘মেয়েদের লেখাপড়ার ওপর খুব জোর দিতে হবে৷ অবস্থা পরিবর্তন করতে মেয়েদের অবশ্যই স্কুলে ধরে রাখতে হবে৷''
নাইজারের অধিকাংশ মেয়েরই স্কুলজীবন শেষ হয়না৷ অনেকের লেখাপড়াই করা হয়না, যাদের হয়, বাবা-মা তাদেরও বিয়ে দিয়ে দেন বয়স ১৪-১৫ হলেই৷ তারপর তো সন্তান জন্ম দেয়া আর সন্তান বড় করার কাজ, লেখাপড়ার সুযোগ কোথায়!
এসিবি / এসবি (আইপিএস)