‘যে প্রবাসীরা আইন মানেন না, তারা কুলাঙ্গার'
২০ মার্চ ২০২০ডয়চে ভেলে : ইউরোপে থাকা বাংলাদেশিরা এখন যদি ফিরতে চান সরকার কি ব্যবস্থা নেবে?
ড. এ কে আব্দুল মোমেন : অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে৷ আপাতত আমরা যেগুলো সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা, সেখান থেকে বাংলাদেশের ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছি৷
যারা ভ্রমণে গেছেন, তাদের কাছে তো বিপুল পরিমাণ অর্থ নেই৷ তারা কিভাবে চলবেন?
যারা এসেছেন, স্বদেশি বা বিদেশি, তাদের ১৪ দিন কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে৷ সেটার দায়-দায়িত্ব তাদের৷ যারা বিদেশে আছেন; আমাদের মিশনগুলো তাদের কিছু কিছু সাহায্য করবে৷
যারা আটকে পড়েছেন, তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা আছে?
তারা আমাদের মিশনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করুক৷ কারণ, এটা একটা বিশেষ ব্যবস্থা৷
করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইবে?
দেখেন, আন্তর্জাতিকভাবে যারা সহায়তা দেয়, তারা কিন্তু দেখে কত মানুষ মারা গেছে, কত মানুষ আক্রান্ত৷ এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে৷
করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ কি স্বয়ংসম্পূর্ণ?
এখন পর্যন্ত আমরা নিজেরাই করছি৷ যা করা দরকার, সরকার সবই করতে বদ্ধপরিকর৷
এখনও যারা বিদেশ থেকে আসছেন, তাদের কি ঠিকভাবে কোয়ারান্টাইন হচ্ছে?
যারা আসছেন, তাদের ১৪ দিনের কোয়ারাইন্টাইন করার কথা৷ এখানে দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ যাদের কোনো উপসর্গ আছে, তাদের সরাসরি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছি৷ আমাদের পয়সায় তাদের চিকিৎসা করছি৷ থাকা-খাওয়ার কাজটাও আমরা করছি৷ আর যাদের কোনো উপসর্গ নেই, তাদের নিজেদের বাসায় ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইনে থাকতে বলা হচ্ছে৷ তারা যদি সেটা না মানেন, তাহলে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেছি৷ একজনকে আমরা ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছি৷ আমরা ডিসি-পুলিশ কমিশনারদের নির্দেশনাও দিয়েছি তারা যেন এটা এনফোর্স করেন৷
যারা দেশে ফিরছেন, তাদের তো হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা?৷এখানে তো বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে!
দু-একটি ঘটনা ঘটছে৷ এই কারণেই এটাকে আরো কার্যকর করতে আমাদের দলের লোকজনকে নিয়োগ করেছি৷
কোয়ারান্টাইনে যেখানে তাদের রাখা হচ্ছে, সেটা স্বাস্থ্যসম্মত না এমন অভিযোগও অনেকে করছেন...
এটা খুবই দুঃখজনক৷ সর্বশেষ ইটালি থেকে ১৪২ জন এসেছেন৷ যেখানে আমরা বন্ধ করে দিয়েছি৷ ইটালির রাষ্ট্রদূত আমাদের জানিয়েছেন, ইটালির নিয়মে বাসা থেকে বের হওয়া বেআইনি৷ কেউ বের হলে তাকে ২০৬ ইউরো জরিমানা দিতে হয়৷ জেলও হয়৷ তিনি বলেছেন, এদের যদি নাম-ঠিকানা দেওয়া হয়, তাহলে তারা শাস্তি দেবেন৷ দেশে ফেরার পর তাদের কোয়ারান্টাইনে রাখতে একটা ক্যাম্পে নিয়ে গেছি৷ তাদের সেটা পছন্দ হয়নি৷ এখানে আগেও ৩১২ জনকে রেখেছি৷ কিন্তু তারা এসে প্রথমেই বলেছে, তারা ইটালি থেকে এসেছেন, তারা আমাদের আইন মানেন না৷ কোয়ারান্টাইনে থাকবেন না৷ এখানকার ব্যবস্থা খুবই খারাপ৷ বড় বড় হোটেলে থাকতে চান৷ আমরা আমাদের বেস্ট খাবার, পর্যটন কর্পোরেশন থেকে খাবার তাদের দিয়েছি, তারা এটা খাবেন না৷ তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা আমাদের খাবার খাবেন না, তারা নিজেদের পয়সায় যে কোনো জায়গা থেকে খাবার কিনে এনে খেতে পারবেন৷ যখন তারা এলো, তাদের মধ্যে গুটিকয়েক লোক ছিল, তাদের ব্যবহার ছিল খুবই উচ্ছৃঙ্খল৷ এমনিই করোনা ভাইরাসের কথা শুনলে লোকজন কাছে যায় না৷ এর মধ্যে ওখানে যারা সহায়ক ছিলেন, তাদের তারা গালিগালাজ করেছেন, মারধরও করেছেন৷ কিছু সংখ্যক প্রবাসী, প্রবাসীদের বদনাম করছেন৷ আমি ৩৮ বছর বিদেশে প্রবাসী হিসেবে ছিলাম৷ কিন্তু আমরা কখনোই বিদেশেও আইন অমান্য করিনি৷ এরকম কয়েকজন আমাদের প্রবাসীদের জন্য কুলাঙ্গার৷ তাদের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা বাংলাদেশে এলে এ দেশের নিয়ম-কানুন আইন মেনে চলতে হবে৷ আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু এটা ইমার্জেন্সি অবস্থা, এটাও বুঝতে হবে৷
বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলে সামাল দেওয়ার সামর্থ আমাদের আছে?
আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত৷ তবে ব্যাপক হলে আমাদের সমস্যা হবে৷ আমাদের সবকিছুরই সীমাবদ্ধতা আছে৷ এটা তো হোম-গ্রোন ভাইরাস না৷ তাই যারা এটা নিয়ে আসতে পারেন, তাদের মনিটরিংয়ে রাখতে চাচ্ছি৷ আমরা সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে তাদের ধৈর্য্য্ ধরার চেষ্টা করতে বলেছি৷ কিন্তু তারা অনেকেই এটা মানতে চাচ্ছেন না৷
এমনিতেই আমাদের অর্থনীতি নড়বড়ে৷ এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতি কতটা স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে?
এই কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতিই আঘাত পাবে৷ আমরা গ্লোবাল ওয়ার্ল্ডে থাকি৷ সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের অর্থনীতিও আঘাত পেতে পারে৷ এর আরেকটি দিক আছে, আমরা গার্মেন্ট পণ্য্য এক্সপোর্ট করি৷ যেহেতু এটা চায়নাতে হয়েছে, তাই অনেকেই আমাদের মার্কেটের দিকে তাকাচ্ছে৷ ভালো-মন্দ দুই-ই আছে৷ তবে এটা সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দাভাব নিয়ে আসতে পারে৷
প্রবাসীদের আগে আপনি ‘নবাবজাদা' বলেছেন৷ আজ যারা আইন মানেন না ,তাদের ‘কুলাঙ্গার' বললেন, এই ধরনের মন্তব্য কি ঠিক হয়েছে?
যারা আইন মানেন না, যারা আমাদের লোকজনকে বাজেভাবে গালিগালাজ করেছেন, পিটাপিটি করেছেন৷ আমি প্রবাসীদের বলিনি নবাবজাদা৷ এই ১৪২ জনের মধ্যে ১৫-২০ জন৷ তারা আমাদের এই ব্যবস্থা মানেন না৷ তাহলে টাকা দেন, ভালো জায়গায় নিয়ে যাবো৷ তাদের এই ধরনের ব্যবহার দুঃখজনক৷ প্রবাসীরা এদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া উচিত৷ কারণ, তারা প্রবাসীদের বদনাম করেছেন৷ আমি নিজেও একজন প্রবাসী৷ এটা আমার খারাপ লেগেছে৷ আমরা এই ধরনের ব্যবহার কখনোই করি না৷