যে শহর হিমালয়ে বিলীন
উত্তরাখণ্ডের জোশাীমঠ বসে যাচ্ছে। বাড়িতে বড় বড় ফাটল। ছয়মাস আগের শুরু এই পরিস্থিতির। অবস্থা এখন আরো খারাপ।
আবার বাড়িতে ফাটল
গত মে মাসে আবারও জোশীমঠের কিছু বাড়িতে নতুন করে ফাটল দেখা যায়। এ বার আর পার্বত্য এলাকায় নয়। জোশীমঠের তুলনামূলক সুরক্ষিত এলাকার বাড়িগুলিতে ফাটল দেখা দিয়েছে।
শুরু মাস ছয়েক আগে
মাস ছয়েক আগের দগদগে ঘা এখনও শুকোয়নি। গত জানুয়ারিতে জোশীমঠের পার্বত্য এলাকার বাড়িগুলিতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। বহু মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, যাদের অনেকেই এখনও গৃহহীন। রয়েছেন অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে।
জোশীমঠের রেড জোন
জানুয়ারির গোড়াতেই জোশীমঠের সুনীল, মনোহর বাগ, রবিগ্রাম, সিঙ্গধার, মারওয়াড়ি এলাকার প্রায় পাঁচশ বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। উত্তরাখণ্ডের প্রশাসন ওই এলাকাকে রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। সে সময় বাসিন্দারা ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।
কী বলছেন ভূতাত্ত্বিকরা?
ভূতত্ত্ববিদেরা মনে করেন, জোশীমঠ শহরটি প্রাচীনকালে তৈরি হয়েছিলই ভূমিধসের উপর। তাই এর ভূমিরূপ স্থিতিশীল নয়। এই ভঙ্গুর ভূমিতেই যথেচ্ছভাবে বাড়ি তৈরি হয়েছে, যা বিপদ বাড়িয়েছে।
ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
ভারতের উত্তরাঞ্চলের এই শহর এবং আশপাশের এলাকায় ভূমিধস ও ফাটলের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, এই নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভবিষ্যৎ কত অনিশ্চিত। বারংবার সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যেখানে সেখানে বাঁধ, সুড়ঙ্গ, পাহাড় কাটা
এই অঞ্চলে এখনো পাহাড় কেটে তৈরি হচ্ছে সুড়ঙ্গ, নির্মিত হচ্ছে বাঁধ। পাহাড়ি নদীকে যত্রতত্র বাঁধ দিয়ে বেঁধে স্বাভাবিক জলধারাকে নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে বলে মনে করছেন প্রকৃতিবিদেরা।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় সমানে হচ্ছে
হিমালয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিধস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালে চামোলির হড়পা বানে বহু মানুষের মৃত্যু হয় এবং মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
ত্রাণশিবিরে মানুষ
মাস ছয়েক আগে থেকে মাটি বসে যাওয়ার কারণে জোশীমঠের বিভিন্ন বাড়িতে ফাটল নজরে আসতে শুরু করে। প্রাথমিক সমীক্ষায় জানা যায়, শহরের ২৫ শতাংশ এলাকার জমি ধসে যাচ্ছে, যেখানে অন্তত ২৫ হাজার মানুষের বাস। ওই এলাকাগুলি থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয় জানুয়ারি থেকে। কিন্তু এখনও জোশীমঠে বহু মানুষ রয়ে গিয়েছেন।
ভিটে আঁকড়ে শিবলাল
আটাত্তর বছরের শিবলাল। আত্মীয় স্বজনদের অনেকেই ত্রাণ পেয়ে অন্যত্র চলে গেলেও, শিবলাল ভিটে ছেড়ে নড়েননি। পরিজনদের পরিত্যক্ত ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান শিবলাল।
ভাঙা বাড়ি
পঙ্কজ জৈনদের কেউ আর এই বাড়িতে থাকেন না। আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ায় এখনও। ভাঙা বাড়িটার যেটুকু পড়ে রয়েছে এখনও, এবারের বর্ষায় হয়ত সেই অস্তিত্বটুকুও থাকবে না।
চিন্তায় চিন্তায়
লক্ষ্মী যোশিহাল এই বাড়িতে ভাড়াটে বসিয়েছিলেন। তারা কেউই নেই আর। ত্রাণের টাকা হাতে পেলেও ভাড়ার রোজগারে সংসার চালাতেন, তাতে টান পড়েছে। বললেন, সকরকার যেখানে ত্রাণ শিবিরে থাকার জায়গা দিয়েছে সেখান থেকে বাচ্চাদের স্কুল ১৫ কিলোমিটার দূরে। ওখানে থাকলে বাচ্চাদের আর পড়াশোনা হবে না।
দোকানে বিক্রি নেই
কুলদীপ সিং রাওয়াতের দোকান আগে রমরম করে চলত। ধসের কারণে এলাকা ফাঁকা। বাড়িওয়ালারা কয়েকজন রয়ে গেলেও ভাড়াটেরা সকলেই জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে। সারাদিন এখন ফাঁকাই থাকে দোকান।
স্থানীয়দের মতে
জোশীমঠের ভূ-বিপর্যয়ের জন্য এনটিপিসির তপোবন বিষ্ণুগাড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকেই দুষছেন সেখানকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, এই প্রকল্পে একাধিক নিয়মভঙ্গের জন্যই ক্রমশ ফাঁপা হয়ে গিয়েছে হিমালয়ের কোলে থাকা এই ছোট জনপদটির মাটির তলা। যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসি। তাঁদের দাবি, নিয়ম মেনেই সব কাজ হয়েছে।
অস্তিত্বসংকট
ফি বর্ষাতেই গাড়োয়াল হিমালয়ের বিভিন্ন অংশে পাহাড়ের ঢালে ধস নামে। জোশীমঠে তা আরও মারাত্মক আকার নিতে পারে বলে রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ দলের এক ভূতত্ত্ববিদ বলেন, ‘‘এ বারের বর্ষাতেই বোঝা যাবে, জোশীমঠের অস্তিত্ব থাকবে কি না।’’