চামড়াজাত পণ্য বর্জন করুন!
১২ মে ২০১৬একটা বড় কুমির মুহূর্তেই পানিতে টেনে নিয়ে যায় মেয়েটাকে৷ তাঁর বান্ধবীদের তা দেখা আর চিৎকার করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না৷ বলছি একটি ভিডিও-র কথা৷ ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিওটির শেষ দৃশ্যে একটি ব্যাগ ভেসে উঠতে দেখা যায়৷
ভিডিওটি বানানো৷ চামড়া না ব্যবহারে উৎসাহ দিতেও সেটি তৈরি হয়নি৷ তবে সেটি ইন্টারনেটে এমনভাবে ছড়িয়েছে যাতে মনে হয় মেয়েটি কুমিরের চামড়ার তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করায় সেটির প্রতিশোধ নিয়েছে একটি কুমিড়৷ কুমিড় কিংবা অন্য প্রাণীরা ঠিক কতটা প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠতে পারে আমি ঠিক জানি না৷ তবে এতটুকু জানি, তাদের সেই সাধ্য থাকলে মানবজাতির উপর বড় ধরনের প্রতিশোধই নিত তারা৷
ভাবছেন কেন বলছি এ কথা? কিছুদিন আগে প্রাণী অধিকার বিষয়ক সংগঠন পেটা-র একটি ভিডিও দেখার সুযোগ হয় আমার৷ সেখানে দেখানো হয়েছে, কিভাবে জীবন্ত প্রাণীর চামড়া ছিলে ফেলা হয় চামড়াজাত পণ্য তৈরিতে৷ বিভৎস সেই দৃশ্য কুমিড়ের ভিডিও-র মতো বানানো নয়৷ বরং অনেকক্ষেত্রে প্রাণীকে পিটিয়ে বেহুশ করে ফেলা হয় সেটি চামড়া বের করে নিতে৷ সেই ভিডিও দেখার পর চামড়াজাত পণ্য ব্যবহার বেশ কঠিন৷
যারা পশুপ্রাণীকে কষ্ট দিতে চাননা, তারা একটু কষ্ট করে চামড়াজাত পণ্য ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে পারেন৷ আর যদি সেটা করতে গিয়ে কিছু কারণের দরকার হয়, তাহলে লেখার বাকি অংশও পড়ুন৷
প্রথম কারণ হতে পারে, অনেকে মনে করেন, চামড়া বোধহয় মাংস উৎপাদনের ‘বাই প্রোডাক্ট' হিসেবে আসে৷ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা কিছুটা সত্য বটে৷ তবে বৈশ্বিক বিবেচনায় বিষয়টি সেরকম নয়৷ গরু ছাড়াও আরো অনেক প্রাণী যেমন কুমিড়, সাপ, ক্যাঙ্গারুর মতো প্রাণীর চামড়াও ব্যবহার করা হয় অনেক পণ্য তৈরিতে৷ আর এসব প্রাণীর থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হয় বর্বর উপায়ে৷ সেগুলোকে মেরে ফেলা হয় শুধু চামড়ার জন্য৷
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে প্রাণী নির্যাতনের কথা৷ চামড়ার অন্যতম উৎস হচ্ছে গরু৷ তবে শুধু গরু জবাই করে চামড়া সংগ্রহ করা হয় সেটা ঠিক নয়৷ বরং প্রাণী সংরক্ষণবিদদের দাবি, চামড়া তৈরি করতে গিয়ে গরুকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়৷ অনেকক্ষেত্রে সেগুলোকে বেদম পেটানো হয়৷ পাশাপাশি ওষুধ খাইয়ে সেগুলোর ওজন বাড়ানো হয়৷ আর সবচেয়ে নরম চামড়া কিন্তু বুড়ো গরু থেকে আসে না৷ সেটা সংগ্রহ করা হয় গরুর বাছুর হত্যা করে৷
তৃতীয় কারণ হিসেবে বেছে নিতে পারেন চামড়া শিল্পের শ্রমিকদের দুর্দশাকে৷ পশুর শরীর থেকে চামড়া আলাদা করার পর সেটিকে শুকাতে হয়৷ সেই শুকানোর প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ৷ আর বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে চামড়া শুকানোর প্রক্রিয়ায় কাজ করা শ্রমিকদের কোনোরকম প্রতিরোধক ব্যবস্থা ছাড়াই কাজটা করতে হয় যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর৷
এ সব কারণ বিবেচনায় এনে চামড়াজাত পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে পারেন৷ তাছাড়া ‘সিনথেটিক লেদার', যা তৈরিতে কোনো প্রাণীকে হত্যা করা হয় না, সেই লেদারের জুতা, জ্যাকেট, ব্যাগ সবই এখন সহজে পাওয়া যায়৷ বিকল্প হিসেবে সেগুলো ব্যবহারের কথাও বিবেচনা করতে পারেন৷
বন্ধু, আপনি চামড়ার কী কী জিনিস ব্যবহার করেন? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷