1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যজার্মানি

যেভাবে ‘অলস গ্রিকদের' শায়েস্তা করেছিলেন ম্যার্কেল

ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম মূলত রাজনীতি, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, শরণার্থী এবং অভিবাসন সম্পর্কিত ইস্যু কভার করেন৷ পাশাপাশি জার্মানি ও ইউরোপে জীবনযাপনের নানা দিকও তুলে ধরেন তিনি৷
আরাফাতুল ইসলাম
১৭ মে ২০২৪

গত দশকের শুরুর দিকে গ্রিসের দেউলিয়া হওয়ার দশা হয়েছিল৷ বিষয়টি নাড়া দেয় গোটা ইউরোজোনকে৷ একজন ব্যক্তি সেসময় কঠোর হস্তে গ্রিসকে লাইনে আনার উদ্যোগ নেন৷ তিনি আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷

https://p.dw.com/p/4fxlW
২০২০ সালে এথেন্সে গ্রিক প্রধানমন্ত্রী ও অন্যদের সাথে তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল
গ্রিসের অর্থনীতিকে বাঁচাতে জার্মানির অগ্রণী ভূমিকার পেছনে মুখ্য চরিত্র ছিলেন ম্যার্কেলছবি: John Macdougall/AFP/Getty Images

আঙ্গেলা ম্যার্কেল টানা ১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন৷ এই সময়ে শুধু জার্মানি নয়, গোটা ইউরোপের নানা সমস্যার সমাধান করতে দেখা গেছে তাকে৷ শান্ত প্রকৃতির এই রাজনীতিবিদ অনেক সময় কঠোর থেকে কঠোরতর উদ্যোগ নিয়েছেন৷ কিন্তু কখনো অশান্ত বা অস্থির হতে দেখা যায়নি তাকে৷

ম্যার্কেল তার মেয়াদকালে আলোচিত যা কিছু করেছিলেন তার একটি গ্রিসের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার৷ অনেকের কাছেই খটকা লাগতে পারে যে জার্মানির চ্যান্সেলর কীভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র গ্রিসের অর্থনীতি উদ্ধারে কঠোর হয়েছিলেন?

ইউরোপে অভিন্ন মুদ্রা চলে এমন ইউরোজোনভুক্ত দেশগুলোর একটি গ্রিস৷ এই জোনে একটি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে অন্যদের ওপরও তার প্রভাব পড়ে৷ ফলে জোনের শক্তিশালী দেশ হিসেবে জার্মানির উপর বাড়তি দায় রয়েছে নানা কিছু সামলানোর৷ ম্যার্কেল সেই কাজটাই করেছিলেন কঠোরভাবে৷

তার কঠোরতা গ্রিকদের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে গত দশকে যতবার তিনি দেশটি সফরে গেছেন ততবারই সেখানে তার বিরুদ্ধে চরম প্রতিবাদ, বিক্ষোভ হয়েছে৷ একপর্যায়ে দেশটির সরকার ম্যার্কেলের সফরের সময় সেখানে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ নিষিদ্ধও করেছিল৷ আর তিনি যখন সেখানে থাকতেন, সেখানকার রাস্তাঘাটে হাজার হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হতো৷

শুধু সাধারণ প্রতিবাদকারীরাই নয়, দেশটির সংবাদমাধ্যমও ম্যার্কেলের উপর বেশ চটেছিল৷ তাকে তুলনা করা হতো নাৎসি শাসক অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে৷ এমনকি হিটলারের গোঁফ ম্যার্কেলের নাকের নিচে বসিয়ে পোস্টারও বানানো হয়েছিল গ্রিসে৷

এসবের মধ্যেও অবশ্য ম্যার্কেল তার মিশনে অটল ছিলেন৷ ২০০৯ সালে গ্রিক সরকার যখন হঠাৎ করে ভয়াবহ রকম বাজেট ঘাটতির কথা জানান দেয় তখন থেকেই দেশটিকে উদ্ধারে মনোযোগী হয় জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ এবং দাতাগোষ্ঠী৷ নানা ধাপে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ এবং সেই প্রক্রিয়ায় জার্মানি ছিল সর্বোচ্চ একক ঋণদাতা৷ এমনকি ঋণের জামিনদারও হয়েছিল জার্মানি৷

গ্রিসের অর্থনীতিকে বাঁচাতে জার্মানির এই অগ্রণী ভূমিকার পেছনে মুখ্য চরিত্র ছিলেন ম্যার্কেল৷ কিন্তু ঋণ দেয়ার সঙ্গে অত্যন্ত কঠোর সব উদ্যোগ নিতেও একরকম বাধ্য করা হয়েছিল গ্রিসকে৷ এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সরকারের খরচ কমানো এবং কর বাড়ানোর মতো নানা অপ্রিয় বিষয়৷ বিশেষ করে সরকারি কর্মীদের বোনাস বাতিল, বাৎসরিক ছুটিসহ নানা সুযোগসুবিধা কমানো, বেতন বৃদ্ধি তিন বছরের জন্য স্থগিত, অবসর ভাতা উল্লেখযোগ্য হারে কমানো, অবসরের বয়স বাড়ানো, জ্বালানি, মদ আর তামাকের কর বাড়ানো, ভ্যাট বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগ নিতে হয়েছিল ইউরোপের দেশটিকে৷    

মিতব্যয়িতার এসব উদ্যোগ অনেক গ্রিকেরই পছন্দ হয়নি৷ সেসময় তাদের ‘অলস' হিসেবেও আখ্যা দেয়া হয়েছিল নানা তরফ থেকে৷ বিদেশি ঋণদাতাদের চাপিয়ে দেয়া নানা কৃচ্ছসাধনের উদ্যোগের প্রতিবাদে গ্রিসের নানা শহরে বিক্ষোভও হয়েছে৷ বারবার পরিবর্তন ঘটেছে সরকারে৷ একা ম্যার্কেলই আটবার গ্রিসের সরকার প্রধান বদল হতে দেখেছেন৷    

এক দশকের চেষ্টার পর অবশ্য গ্রিসের অর্থনৈতিক অবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে৷ দেশটির দেউলিয়া হওয়ার শঙ্কা এখন আর একদমই নেই৷ বরং ইউরোপের অন্যতম অগ্রসমান অর্থনীতির দেশ এখন গ্রিস৷

চ্যান্সেলর ম্যার্কেল শেষবার গ্রিস সফরে গিয়েছিলেন ২০২১ সালে, জার্মানির ক্ষমতা ছাড়ার আগে৷ এথেন্সে তখন তাকে হাসি মুখে অভ্যর্থনা জানান গ্রিক প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস৷ ম্যার্কেল সেসময় অকপটে স্বীকার করেছিলেন যে দেশটি তাকে কখনো কখনো স্বাগত জানায়নি৷ তবে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন গ্রিসের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয়৷ নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় সাফল্য ম্যার্কেলের৷ ইউরোপ তার শূণ্যতা এখনো অনুভব করে৷