1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যেভাবে হলোকস্ট থেকে বেঁচে যাওয়াদের গল্প শুনছে নতুন প্রজন্ম

২২ এপ্রিল ২০১৯

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর জার্মান কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে হত্যা করা হয় ৬০ লাখেরও বেশি নিরপরাধ মানুষকে৷ সেই হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়াদের জীবনের গল্প ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছে জার্মান একটি সংগঠন৷

https://p.dw.com/p/3HDky
Niederlande Erna de Vries
ছবি: DW/M. Strauß

প্রতিদিনই অন্ধকার অতীতের কোনো-না-কোনো স্মৃতি উঁকি দেয় ৯৫ বছর বয়সি এরনা ডে ফ্রিস-এর মনে৷ রুটির টুকরো পড়ে থাকতে দেখলেই মনে পড়ে না খেয়ে থাকা দিনগুলোর কথা৷ সাদা বাকলের বার্চ গাছ মনে করিয়ে দেয় আউশভিৎ্স বির্কেনাউ বন্দী শিবিরের কথা৷ ১০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে৷

এরনার বাবা ছিলেন প্রটেস্ট্যান্ট আর মা ইহুদি৷ শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছেন৷ ১৯৪৩ সালে মা নির্বাসিত হন আউশভিৎসে৷ সাথে এরনাকেও নিয়ে যান তিনি৷ মায়ের শেষদিনগুলোর কথা এখনো তাঁর স্পষ্ট মনে আছে৷

নিজের ঘরের সোফায় বসে এরনা বিষন্ন চিত্তে হলোকস্টের ভয়াবহ দিনগুলোর স্মৃতি বলছিলেন৷ অবশ্য এর আগেও তিনি বহুবার সেসব কথা বলেছেন৷ উত্তর জার্মানিতে, যেখানে তিনি বসবাস করেন, সেখানকার একটি স্কুল আর কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্মমতার সেসব কাহিনী শুনিয়েছেন৷ তিনি কোনোভাবেই ভুলতে পারেন না মায়ের সাথে শেষ দেখার কথাগুলো, ‘‘এরনা তোমাকে অবশ্যই লড়াই করতে হবে, অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে এবং তারা আমাদের সাথে যা করেছে, তা সবাইকে জানাতে হবে৷''

Holocaust-Überlebende Erna de Vries
এরনা উত্তর জার্মানিতে তার বাড়িতে স্থানীয় ছাত্রদের সাথে তার গল্প ভাগাভাগি করছেনছবি: Samir Saad

এরনা বলে চলেন, ‘‘সেই শেষ দেখাটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়৷ আমি নিশ্চিত জানতাম, তিনি কখনোই আউশভিৎস থেকে মুক্তি পাবেন না৷'' 

এরনা এখন আর চোখে তেমন একটা ভালো দেখেনা না, শুনতেও পান না খুব একটা৷ সাহায্যকারী ছাড়া চলাফেরাও করতে পারেন না৷ এর মাঝেও ২৯ বছরের ভানেসা আইজেনহার্ড্ট তাঁকে অতীতের কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন৷ তাতে খুশি এরনা৷ আইজেনহার্ড্ট একটি সংস্থার হয়ে কাজ করেন, যারা হলোকস্টের জীবিতদের সাথে দেখা করে তাদের গল্প সংরক্ষণ করে এবং সেগুলো তরুণদের শোনায়৷ কিছুদিন আগেই এক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফ্রিজের জীবন সংগ্রামের কথা শুনিয়েছেন তিনি৷ এরপর সবাইকে তাঁর উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখতে বলেন৷

শুধু যে হলোকস্টের গল্পই শোনান তা নয়, এরনার ডাক্তার হবার স্বপ্ন, নার্স হিসেবে তাঁর চাকুরিজীবন, ভালোবাসার মানুষের সাথে দেখা হওয়া সবই ছিল আইজেনহার্ড্টের নেয়া সাক্ষাৎবারে৷ এরনা তাকে ইসরায়েল যাওয়ার স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন, কেমন চলছে ৩ সন্তান আর ৬ নাতি নাতনি নিয়ে তাঁর এখনকার জীবন– সেইসব কথাও শুনিয়েছেন তিনি৷  

আইজেনহার্ড্ট এবং তাঁর সংগঠনের সদস্যরা এভাবে জার্মানির স্কুলগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, শোনাচ্ছেন এরনার মতো হলোকস্ট থেকে বেঁচে ফেরাদের গল্প৷ গত কয়েক বছরে তাঁরা ইসরায়েল, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ৩০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন৷ তাঁদের কেউ এখনো বেঁচে আছেন, আবার অনেকে মারাও গেছেন৷ 

ইতিহাসে পিএইচডি করা আইজেনহার্ড্ট বলেন, স্কুলে ইতিহাসের ক্লাসগুলোতে ব্যক্তিজীবনের গল্প তেমন একটা বলা হয় না৷ তাঁর বদলে তাদের সামনে কিছু বিমূর্ত সংখ্যা আর চিত্র তুলে ধরা হয়৷ যেমন হলোকস্টে ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছে৷ কিন্তু এর মাধ্যমে নির্যাতনের প্রকৃত পরিস্থিতিটি বোঝা কঠিন৷ এ কারণে নাৎসিরা এরনার মতো মানুষদের কতটা কষ্ট দিয়েছে, তা তিনি স্কুল শিক্ষার্থীদের বলতে চান৷ আইজেনহার্ড্ট বলেন, ‘‘এসব গল্পের মাধ্যমে তারা বুঝতে পারে যে, বর্ণবাদ আর ইহুদিবিদ্বেষ চলতে দিলে তার ফলে কী ঘটে৷''

Holocaust-Überlebende
আইজেনহার্ড্ট হোলোকাস্টের বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের জীবিত রাখার জন্য কাজ করছেনছবি: DW/M. Strauß

এরনার বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রাম আর অতীত স্মৃতির গল্পে আবেগান্বিত হচ্ছেন শিশুরাও৷ ১৪ বছর বয়সি এক শিক্ষার্থী আম্ব্রা রিজো বলল, ‘‘আমি তাঁর গল্প শুনে প্রায় কেঁদে ফেলেছিলাম৷''

১৫ বছর বয়সি সানিয়া শুবার্থের কাছে সবচেয়ে খারাপ লেগেছে এরনার মায়ের সাথে শেষ দেখার মুহূর্তটি৷ কেননা এরনাকে তাঁর মা সেই সময় বলেননি যে, ‘‘আমি তোমাকে ভালবাসি, আমাদের আর কখনো দেখা হবে না৷'' তার বদলে তিনি মেয়েকে বেঁচে থাকার সাহস দিয়েছেন আর লড়াই চালিয়ে যেতে বলেছেন৷

স্কুল শিক্ষার্থীদের এইসব অনুভূতির চিঠি আইজেনহার্ড্ট এরনার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন৷ সেখানে একজন লিখেছে, ‘‘প্রিয় এরনা, আমি নিশ্চিত তুমি একজন মহৎ এবং সাহসী নারী৷ আমি এর চেয়ে বেশি কিছু আর বলতে পারছি না, তোমাকে আমার অনেক শ্রদ্ধা জানাচ্ছি৷‘ 

এরনার কাছে এখন এমন অসাধারণ সব চিঠিভর্তি একটি বাক্স রয়েছে৷ তিনি খুশি যে, শিশুরা মনযোগ দিয়ে তাঁর গল্প শুনেছে, কেননা, অনেক সময় এইসব বিষয় নিয়ে মানুষ আর আগ্রহই দেখায় না৷

যুদ্ধের পরের সময়টার কথা ভেবে এরনা অবশ্য বেশ খুশি৷ সন্তান আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে সুখের জীবনই কাটিয়েছেন তিনি৷ আর ভানেসা আইজেনহার্ড্টরা তো আছেনই৷ তাঁরা তাঁর জীবনের গল্পকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে, যেন তা কখনোই হারিয়ে না যায়৷

মারিনা স্ট্রাউস/এফএস