‘রবিনসন ক্রুসো’ থেকে ‘লস্ট’: পপ সংস্কৃতিতে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের জীবন
পপ সংস্কৃতিতে বিখ্যাত কিছু বই, সিনেমা এবং টিভি সিরিজের জন্য যুগ যুগ ধরে নির্জন দ্বীপে আটকে পড়া মানুষের গল্প তুলে ধরা হয়েছে৷ কিন্তু এসব গল্পে আসলে কী বলা হয়েছে!
রবিনসন ক্রুসো (১৭১৯)
২০২৪ সালে এসে যদি কেউ ড্যানিয়েল ডিফো-এর ‘দ্য লাইফ অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চারস অফ রবিনসন ক্রুসো’ পড়েন, তাহলে এই গল্পে তিনি কেবল নির্জন দ্বীপে আটকে পড়া ২৮ বছরের একজন ব্রিটিশ বণিকের জীবন কাহিনী দেখবেন না৷ বরং গল্পের নায়ক ছিলেন একজন দাস ব্যবসায়ী, যিনি আদিবাসীদের ‘বর্বর’ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন এবং ম্যান ফ্রাইডে নামে এক আদিবাসীকে দাস হিসাবে ব্যবহার করেন৷
‘লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস’ (১৯৫৪)
ব্রিটিশ লেখক উইলিয়াম গোল্ডিং-এর ‘লর্ড অব দ্য ফ্লাইস’ গল্পে বর্ণনা করা হয় কীভাবে ব্রিটেন থেকে একদল স্কুলছাত্র নিয়ে যাওয়া একটি প্লেন নির্জন এক দ্বীপে বিধ্বস্ত হয়৷ সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় তাদের প্রচেষ্টা বর্বরতায় পরিণত হয়৷ বিশৃঙ্খলার মধ্যে যৌক্তিক আচরণ অনুশীলন করা কতটা কঠিন, সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যম এবং ভুয়া খবরের যুগে সেই গল্প আজও প্রাসঙ্গিক হয়ে রয়েছে৷
‘গিলিগানস আইল্যান্ড’ (১৯৬৪-১৯৬৭)
সাত আটকে পড়া ব্যক্তি নির্জন এক দ্বীপ থেকে পালানোর চেষ্টা করেন৷ তবে তাদের সব চেষ্টা প্রায়শই নির্বুদ্ধিতার কারণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়৷ গল্পের প্লটে অনেক ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও এই মার্কিন সিটকমের লক্ষ্য ছিল সবাই মিলে বাঁচতে শেখার বার্তা ছড়িয়ে দেয়া এবং মানুষকে হাসতে উদ্বুদ্ধ করা৷
‘দ্য ব্লু লেগুন’ (১৯৮০)
সিনেমাটিতে তুলে ধরা হয়েছে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপে আটকে পড়া চাচাতো ভাই-বোন থেকে প্রেমিক-প্রেমিকায় পরিণত হওয়া দুই তরুণ-তরুণীর গল্প৷ বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তন, সামাজিক বিধিনিষেধের অভাব, প্রেমে পড়া এবং অবশেষে একটি শিশুর জন্ম দেয়া নিয়ে সিনেমার কাহিনী৷ সিনেমার চিত্রগ্রহণের সময় ক্রিস্টোফার অ্যাটকিন্স এবং ব্রুক শিল্ডস (ছবিতে) এর বয়স ছিল যথাক্রমে ১৮ এবং ১৪ বছর৷
‘দ্য বিচ’ (২০০০)
অ্যালেক্স গারল্যান্ডের উপন্যাসটিকে বড় পর্দায় রূপান্তরিত করেছেন ড্যানি বয়েল৷ মূল চরিত্র রিচার্ডের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও৷ রিচার্ড এক তরুণ ভ্রমণকারী যিনি থাইল্যান্ডের একটি নির্জন, আদিম সৈকতে বসবাসকারী একটি বিচ্ছিন্ন ইউটোপিয়ান সম্প্রদায়ের খোঁজ পান৷ ত্রুটিপূর্ণ মানবচরিত্র কীভাবে ইউটোপিয়ান একটি সুন্দর ব্যবস্থাকেও নস্যাৎ করে দিতে পারে, সেই সতর্কবার্তাই তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমাতে৷
‘সারভাইভার’ (২০০০)
২০০০ এর দশকে ‘আউটউইট, আউটপ্লে, আউটলাস্ট’ শব্দগুচ্ছকে জনপ্রিয় করে তোলে অ্যামেরিকান রিয়েলিটি টিভি সিরিজ সারভাইবার৷ ১৯৯৭ সালের সুইডিশ টিভি শো ‘এক্সপেডিশন: রবিনসন’ এর ফরম্যাট অনুসরণ করে তৈরি করা হয় এই সিরিজ৷ ১৬ থেকে ২০ জন প্রতিযোগী প্রত্যন্ত ও দুর্গম একটি অবস্থানে থেকে নগদ পুরস্কার পাওয়ার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতা করেন৷ এই বছর টিভি সিরিজটির ৪৬ তম মৌসুমে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে ১০ লাখ মার্কিন ডলার৷
‘কাস্ট অ্যাওয়ে’ (২০০০)
এই সিনেমায় টম হ্যাংকস একজন ফেডএক্স ট্রাবলশ্যুটারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন৷ দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরে একটি জনবসতিহীন দ্বীপে আটকা পড়েন তিনি৷ গল্পটি তার বেঁচে থাকার এবং দেশে ফিরে আসার মরিয়া প্রচেষ্টাকে ফুটিয়ে তুলেছে৷ হ্যাংকসের একটি ভলিবল, যাকে তিনি সিনেমাতে নাম দেন ‘উইলসন দ্য ভলিবল’ আইকনে পরিণত হয়৷ টম হ্যাংকসের অটোগ্রাফ শিকারীদের সবচেয়ে পছন্দের বস্তু এই চরিত্রটি৷
‘লস্ট’ (২০০৪)
একাধিক অ্যামি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী আমেরিকান সিরিজ ‘লস্ট’কে অনেকেই বর্ণনা করেছেন উত্তেজনাকর এবং পরাবাস্তব হিসাবে৷ এই সিরিজ এমন একদল লোককে নিয়ে যাদের বিমান আছড়ে পড়ে প্রশান্ত মহাসাগরের এক প্রত্যন্ত দ্বীপে৷ বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা দ্বীপ সম্পর্কে অনেক রহস্যময় ঘটনা আবিষ্কার করতে শুরু করেন৷