1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রবীন্দ্রনাথ কার, তৃণমূল না কি বিজেপির

২১ ডিসেম্বর ২০২০

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট রবীন্দ্রময়। তৃণমূল এবং বিজেপি দুই পক্ষই রবীন্দ্রনাথকে তুলে ধরছে শিক্ষিত বাঙালির মন পেতে। 

https://p.dw.com/p/3mzt2
শান্তিনিকেতন
ছবি: DW/P. Samanta

মৃত্যুর এত বছর পরেও তৃণমূল এবং বিজেপির সংকীর্ণ রাজনীতির চক্রে আটকে পড়লেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নতুন এই বিতর্ক বেড়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বোলপুর সফরকে কেন্দ্র করে।

রোববার শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। সেখানে একটি রোড শো-ও করেন তিনি। তার আগে বিশ্বভারতী ঘুরে দেখেন। যান রবীন্দ্রনাথের বাড়ি এবং উপাসনাগৃহে। এরপর বাউল বাসুদেব দাসের বাড়িতে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করেন। বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্যের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে ঘুরে দেখে সাংবাদিকদের শাহ বলেছেন, সুযোগ পেলে সাত দিনের ছুটি নিয়ে শান্তিনিকেতনে যাবেন এবং রবীন্দ্রসংগীত শুনবেন। একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই কথায় রাজনীতি খোঁজার কারণ নেই। কিন্তু ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আবহে তা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। আলোচনায় উঠে আসছে আরো বেশ কিছু তথ্য।

শাহের সফরের আগেই তৃণমূল অভিযোগ করেছিল, বিজেপি শাহের বোলপুর সফর নিয়ে যে ব্যানার তৈরি করেছে সেখানে রবীন্দ্রনাথের ছবি ছোট, শাহের ছবি বড়। শাহকে পশ্চিমবঙ্গে বহিরাগত বলেও কটাক্ষ করা হয়েছিল। শান্তিনিকেতনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনৈতিক প্রচার চালাতে এসেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছিল রাজ্যের শাসক দলের তরফে।

যে অভিযোগ তৃণমূল তুলেছে, সেই অস্ত্রে তৃণমূলকেই অভিযুক্ত করা যায়। এ বছর রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ২৫ বৈশাখ পালনের সময় বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছিল, তৃণমূলের নির্দেশে পাড়ায় পাড়ায় রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান চালানো হচ্ছে। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব না কি এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ২৫ বৈশাখের অনুষ্ঠানে বড় বড় করে লেখা হয়েছে 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায়'। যেন দলনেত্রীর অনুপ্রেরণা না থাকলে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন করা যেত না। রাজ্যের বিরোধীরা সে সময় একাধিকবার অভিযোগ করেছে, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে সংকীর্ণ রাজনীতি করছে তৃণমূল। কয়েক মাস আগে পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়া নিয়েও তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ, তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা পাঁচিল ভাঙতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের আমলে তৈরি দরজাও ভেঙে দিয়েছে। সে সময়েও শান্তিনিকেতনে তৃণমূলের রাজনৈতিক দাদাগিরির অভিযোগ উঠেছিল। অবশ্য ২০১৬তে ভোটে জিতে রাস্তার মোড়ে, ট্রাফিক সিগন্যালে রবীন্দ্রসংগীত বাজাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা।

শাহের সফরে একই ধরনের রাজনীতির অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। শান্তিনিকেতনের একাংশের ছাত্র অভিযোগ করেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর ঘিরে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়, তার জন্য বেশ কিছু ছাত্রকে কার্যত গৃহবন্দি করে রেখেছিল পুলিশ। বিশ্বভারতীর ছাত্র ফাল্গুনী পান সোশ্যাল নেটওয়ার্কে লিখেছেন, তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, যে বাউলের বাড়িতে অমিত শাহ দুপুরের খাবার খেয়েছেন, তাঁর পরিবারকেও দুইদিন বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি। বাজার হাটে পুলিশের সঙ্গে যেতে হয়েছে। এমনিতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোথাও গেলে এ ধরনের প্রোটোকল মানতেই হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যের সঙ্গে এ ধরনের প্রোটোকল মেলে না।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শান্তিনিকেতনের এক স্বনামধন্য আশ্রমিক ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, এক সময় জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী শান্তিনিকেতনে আসতেন। তাঁরাও দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু শান্তিনিকেতনে তাঁরা কোনো প্রোটোকলের ধার ধারতেন না। তাঁরা আশ্রমিকদের বাড়িতে খেতেন। মেলায় ঘুরতেন। বিশিষ্ট শিল্পী, অধ্যাপকদের বাড়িতে আড্ডা মারতেন। কিন্তু এত প্রোটোকলের বিষয় থাকতো না। ইদানীং প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নিয়ে যে কাণ্ড চলছে, তা অনভিপ্রেত এবং শান্তিনিকেতনের ঐাতিহ্যের বিরোধী।

তৃণমূল এবং বিজেপি দুই দলই ভোটের সময় শান্তিনিকেতনকে ব্যবহার করার চেষ্টা করে বলে রাজ্যের বহু বিশিষ্ট মানুষের অভিমত। রবীন্দ্রনাথকে এ ভাবে সংকীর্ণ রাজনীতির মধ্যে টেনে আনার বিরোধিতা করছেন কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের একাংশ।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো