1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রবীন্দ্রনাথের ছবিতা

৩১ আগস্ট ২০১১

রবীন্দ্রনাথ একই সঙ্গে কবিতা লিখতেন এবং ছবি আঁকতেন৷ তার প্রমাণ তাঁর অনেক কবিতা ও গানের পাণ্ডুলিপিতে পাওয়া যাবে৷ বিষয়টি নিয়ে বিশেষ ভাবনা-চিন্তা করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রথিতযশা ইংরিজির অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী৷

https://p.dw.com/p/12QEs
Screenshot der Seite tagoreweb.in Flash-Galerie Rabindranath Tagore ###Hinweis: Bild nur in Zusammenhang mit der Berichterstattung der Seite verwenden!###
ইন্টারনেটে রবীন্দ্রনাথছবি: tagoreweb.in

এক ফরাসি সমালোচক একবার বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ যখন কবিতা লেখেন, তখন ছবি আঁকেন৷ আর যখন ছবি আঁকেন, তখন লেখেন কাব্য৷ পরে রাণী চন্দের ‘আলাপচারী রবীন্দ্রনাথ'-এ পাওয়া যাবে: রবীন্দ্রনাথ বলছেন, আমার ছবিকে নন্দলাল - অর্থাৎ নন্দলাল বসু - এত বড় কেন বলে জানি না৷ ওরা আমার একটা দর্শন মাত্র৷ একদিন দেখলাম শান্তিনিকেতনের বড় বড় গাছের ডালগুলি নানারকম জন্তু জানোয়ারের মূর্তি নিয়েছে৷ ছবিতে সেই দর্শনটিই রূপায়িত করতে চেষ্টা করলাম৷

রবীন্দ্রনাথের কবিতা লিখতে গিয়ে আঁকিবুকি কাটার অভ্যাস ছিল, ইংরিজিতে যাকে বলে ‘ডুডলিং'৷ অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী তাঁর ‘মেটাফিসিক্স অফ টেক্স্ট' গ্রন্থটিতে এই ডুডলিং নিয়ে আলোচনা করেছেন৷ তবে তাঁর বক্তব্য শোনার আগে রবীন্দ্রনাথের ডুডলিং'এর দু'তিনটি সহজ দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে৷

আমার গীতবিতানটি বৈশাখ ১৩৮৯'এর মুদ্রণ৷ রবিকবির সেই গানসাগরে দুটি মাত্র চিত্রণের ভেলা ভাসতে দেখেছিলাম, তাই মনে আছে৷ প্রথমটি ‘বিধির বাঁধন কাটবে তুমি, এমন শক্তিমান' গানটির পাণ্ডুলিপি: দেখে তো মনে হয় কবি কপি করতে গিয়ে আবার কিছু কিছু শব্দের রদলবদল করেছেন৷ তবে শুধু শব্দ কাটাকুটি করে নয়৷ কাটা শব্দগুলি কালি দিয়ে কালো করে, গোল করে ঘিরে পাতা কি ফুল কি কুঁড়ির আকার দিয়ে, শেষমেষ লাইন দিয়ে দিয়ে জুড়ে একটি লতানো গাছে পরিণত করছেন৷ মজার কথা, গানটির কথার সঙ্গে কিন্তু ছবির কোনো সম্পর্ক নেই৷ নিছক অলঙ্করণ৷

‘হে মাধবী, দ্বিধা কেন' গানটির সঙ্গে যে পাণ্ডুলিপির চিত্র, তা সম্পূর্ণ আলাদা৷ কবি সাদা পাতায় শুধু গানের বাণীটি বাদ দিয়ে বাকি পাতাটাকেই কালো করে দিয়েছেন৷ ডানপাশে শুধু একটি দীর্ঘ নারীমূর্তি৷ কি যেন একটা অশরীরি ভাব৷

Rabindranath Tagore was a Bengali poet, novelist, musician, painter and playwright who reshaped Bengali literature and music. As author of Gitanjali with its "profoundly sensitive, fresh and beautiful verse", he was the first non-European to be awarded the Nobel Prize for Literature (1913). Bild: Hasibur Rahman (DW-Korrespondent) Aufnahmeort: Kushtia, Bangladesch Aufnahmedatum: 30. April 2011 Bilder geliefert von Arafatul Islam
ছবি: DW

সুকান্ত চৌধুরীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের এই ধরনের ছবিতা নিয়েই কথা হচ্ছিল৷ তিনি বললেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের এই লিপিচিত্র, এটা সত্যি একটা আশ্চর্য জিনিস এবং আমার জ্ঞানত কোনো ভাষায়, কোনো দেশে অন্য কোনো কবি বা সাহিত্যিক এটা কখনো করেননি, বা অন্য কোনো চিত্রকরও করেননি৷ ভেবে দেখুন ব্যাপারটা: একসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ দুটো কাজ করছেন৷ একদিকে তিনি একটা কবিতা লিখছেন যেটা শেষ পর্যন্ত শুধু ছাপার অক্ষরে, অর্থাৎ শুধু শব্দের সমষ্টি হিসাবেই বই'য়ে মুদ্রিত হয়ে পাঠকের কাছে যাবে৷ সেই সঙ্গে পাশাপাশি তিনি একটা ছবি আঁকছেন৷ সেই ছবিটা কিন্তু আর কেউ দেখবে না৷ সেটা শুধু কবি নিজে দেখছেন, হয়তো তাঁর খুব কাছের মানুষ দু'চারজনকে তিনি দেখাচ্ছেন৷ একদিকে যেমন কাব্যরচনার শিল্পকর্মটা করছেন পাঠককুলের কথা ভেবে, একই সঙ্গে পাশাপাশি তিনি সম্পূর্ণ নিজের কথা ভেবে যেন একটা নিজের একান্ত, ব্যক্তিগত একটা শিল্পচেতনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য আরেকটা শিল্পকীর্তি সৃষ্টি করে চলেছেন৷ একসঙ্গে এই দুটো শিল্পের কাজ একই পাতায়, একই কলমের ডগার থেকে বেরচ্ছে, এটা একটা আশ্চর্য জিনিস৷ এবং আমার জ্ঞানত এটা একমেবাদ্বিতীয়, এটা ইউনিক৷ আর কেউ কখনো করেছেন বলে আমি জানি না৷''

পাণ্ডুলিপিগুলো দেখে আমার এককালে মনে হতো, এগুলো রবীন্দ্রনাথের কবিতা আর রবীন্দ্রনাথের ছবির মাঝামাঝি একটা ছায়াময় অস্তিত্ব যাপন করে৷ সুকান্ত চৌধুরী উৎসাহিত হয়ে বললেন, ‘‘অবশ্যই, অবশ্যই৷ দুটো কথা আমরা সকলেই জানি: একটা হচ্ছে, যদিও রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রথম জীবনের পাণ্ডুলিপিতেও মাঝে মাঝে এরকম কিছু আঁকিবুকি কেটেছেন, এই বেশ ঘটা করে, বড় মাপের এরকম লিপিচিত্র তিনি করতে শুরু করলেন পূরবীর পাণ্ডুলিপি থেকে৷ অর্থাৎ তিনি তখন রীতিমতো মাঝবয়সে পৌঁছেছেন৷ এবং তাঁর ছবি আঁকার প্রয়াসও কিন্তু তাঁর মাঝবয়সের শেষের দিক থেকে, জীবনের শেষ পর্যায়ে, এটা আমরা জানি৷ এবং এটা যেন মনে হয় যে, তিনি যখন হয়তো কবি হিসেবে সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত, তিনি জানেন যে তাঁর কবিতা সম্বন্ধে পাঠকের একটা প্রত্যাশা আছে৷ শুধু কবি হিসেবে তিনি যেন একান্ত নিজের আর থাকতে পারছেন না৷ তখন তিনি তাঁর নিজের জন্য যেন একটা আলাদা জমি খুঁজছেন, যেখানে তিনি একান্ত আপন হতে পারেন, তাঁর স্বকীয় বৈশিষ্ট্যটা পুরোপুরি নিজের জন্যই তিনি ফুটিয়ে তুলতে পারেন৷ এবং হয়তো কবিতা লেখার ফাঁকে এই আঁকিবুকি দিয়ে প্রথমে শুরু করেছেন৷ এবং তারপরে সেই কল্পনার ধারাটাই আরো টেনে নিয়ে গেছেন তাঁর ছবিতে৷''

প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক