1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রসনা বিলাস ও ইন্দ্রিয়

ড্যানি মিৎসমান/জেকে২৬ মে ২০১৪

কাঁটা চামচে গেঁথে মুখে পুরে চিবিয়ে কোৎ করে গিলে ফেললেই হবে না, একটি খাবার পুরোপুরি উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে সবকটি ইন্দ্রিয়৷ মানে চোখ, কান, নাক, জিব এবং ত্বক৷

https://p.dw.com/p/1C6YS
Smell Festival in Bologna Italien Mai 2014
ছবি: www.smellfestival.it

মানব মস্তিষ্কে কী করে স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি সৃষ্টি হয় এবং আবেগ আর সাংস্কৃতিক ভিন্নতার সঙ্গে সঙ্গে কী করে স্বাদের পার্থক্য তৈরি হয় – সে বিষয়টিই বোঝার চেষ্টা চলছে বিজ্ঞানের নতুন এক শাখায়, যাকে বলা হচ্ছে ‘নিউরোগ্যাস্ট্রোনমি'৷

ইটালির বোলোনিয়া শহরে বার্ষিক ঘ্রাণ উৎসব বা স্মেল ফেস্টিভালে এবার দর্শনার্থীদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল, যাতে নিউরোগ্যাস্ট্রোনমির বিদ্যা দিয়ে খাবারের স্বাদ-গন্ধের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা৷

‘ঘ্রাণেন অর্ধভোজনম'

একটি খাবারের স্বাদ নেয়ার আগে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে তা হলো খাদ্যবস্তুটির ঘ্রাণ৷ তবে আমরা মুখ দিয়ে খাই, আর নাক দিয়ে ঘ্রাণ নিই – এ ধারণা পুরাপুরি ঠিক নয়৷

Smell Festival in Bologna Italien Mai 2014
নিউরোগ্যাস্ট্রোনমির বিশেষজ্ঞ মার্কো ভালুসিছবি: www.smellfestival.it

নিউরোগ্যাস্ট্রোনমির বিশেষজ্ঞ মার্কো ভালুসির ভাষায়, খাবার সময় আমরা আসলে ঘ্রাণ নেই দু'ভাবে৷ খাবার মুখে তোলার আগেই নাকে শুঁকে আমরা গন্ধ নিই৷ আবার মুখে নেয়ার পর জিভ বুলিয়ে, চুষে এবং চিবিয়েও আমরা এর গন্ধ পাই৷ কিন্তু স্বাদগ্রহণ আর ঘ্রাণ নেয়ার বিষয়টি একইসঙ্গে চলে বলে আমরা এর পার্থক্য টের পাই না৷

ঘরে বসে ছোট্ট একটি পরীক্ষার মাধ্যমেই এই পার্থক্য বোঝা সম্ভব৷ এ জন্য আমাদের ছোটো ছোটো চৌকো আকারের কয়েক টুকরো আপেল আর পেঁয়াজ কেটে একটি পাত্রে নিতে হবে৷ এরপর ভালোভাবে হাত ধুয়ে এক হাতে চেপে ধরতে হবে নাক৷ চোখ বুজে অন্য হাতে পাত্র থেকে তুলে নিতে হবে একটি টুকরো৷ তারপর মুখে পুরে জিভ বুলিয়ে স্বাদ নিতে হবে৷

মার্কো ভালুসি বলেন, ‘‘কেবল জিভ বুলিয়ে আমরা এর স্বাদ চিনতে পারব না৷ কিন্তু নাক থেকে হাত সরিয়ে নিলেই আমরা বুঝতে পারব – মুখের ভেতরের টুকরোটা আপেল না পেঁয়াজ৷''

এর কারণ হলো, জিভ দিয়ে আমরা টক, মিষ্টি, নোনতা, তেতো ও ঝাল – এরকম পাঁচ ধরনের স্বাদ নিতে পারি৷ কিন্তু নাক যে ঘ্রাণ নেয়, তা থেকে আমাদের মস্তিষ্কে তৈরি হতে পারে কয়েক লাখ ধরনের অনুভূতি৷

Smell Festival in Bologna Italien Mai 2014
ঘ্রাণ উৎসব – আহা, কী মজা!ছবি: www.smellfestival.it

‘পেহলে দর্শনধারী, বাদ মে গুণবিচারী'

কেবল নাকে-মুখে খেলে হবে না, স্বাদ বুঝতে হলে খেতে হবে চোখেও৷ একটি খাবার আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে আমরা বুঝতে পারি তা শক্ত না নরম, গরম না ঠান্ডা৷ কিন্তু দুটো গ্লাসে যদি দুই রঙের পানীয় থাকে তখন?

ঘ্রাণ উৎসবের কর্মশালায় এ পরীক্ষাটিও করা হয়েছিল৷ দর্শনার্থীদের প্রত্যেককে দুই গ্লাস পানীয় দেয়া হয়েছিল, যার একটিতে ছিল বর্ণহীন জ্যুস, অন্যটিতে লাল৷

চেখে দেখে অংশগ্রহণকারীরা জানালেন, লাল পানীয়র স্বাদই বেশি তীব্র, যেন কোনো জংলি ফলের রস৷ আর বর্ণহিন পানীয়টি নিতান্তই সাধারণ, হয়ত আপেল জাতীয় কোনো ফলের নির্যাস৷

পরীক্ষা শেষে আসল সত্যটি প্রকাশ করলেন ভালুসি৷ তিনি জানালেন, দুটি গ্লাসে আসলে একই পানীয় দেয়া হয়েছিল৷ একটিতে কেবল যোগ করা হয়েছিল সামান্য লাল রঙ৷

‘‘চোখে দেখে আমরা যে ধারণা পাই, তাতে স্বাদ নেয়ার বিষয়টি অনেকখানি প্রভাবিত হয়৷ একটি খাবার দেখতে কেমন, তার রংটি কেমন – এ সব বিষয় ওই খাবার সম্পর্কে মস্তিষ্কে ভিন্ন ভিন্ন আগ্রহ তৈরি করে৷ সেই আগ্রহই আমাদের স্বাদ গ্রহণের ধরন বদলে দেয়৷ যখন আমরা গাঢ় রংয়ের পানীয় দেখি, আমরা ধরেই নিই যে সেটি হবে অনেক বেশি সুস্বাদু৷''

Smell Festival in Bologna Italien Mai 2014
মুখে পুরে জিভ বুলিয়ে স্বাদ নিতে হবে...ছবি: www.smellfestival.it

শুনতেও হতে হবে মিষ্টি...

অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়টি খেয়াল করে দেখেন না, কিন্তু রসনা তৃপ্তির জন্য কানের ভূমিকাও উপেক্ষা করা চলে না৷

ভালুসি বলেন, ‘‘যখন আমরা কুড়মুড়ে বা মচমচে কিছু খাই, এই যেমন ধরুন পটেটো চিপস বা বিস্কুট, তখন মুখের ভেতর যত বেশি শব্দ হয়, আমরা ধরে নেই খাবারটি তত বেশি ‘ফ্রেশ'৷'' এ কারণে কর্মশালায় যখন অংশগ্রহণকারীদের দুই ধরনের খাবার খেতে দেয়া হলো, তাঁরা সেই খাবারটিকেই বেশি ভালো বললেন, যেটা চিবানোর সময় বেশি কুড়মুড়ে শব্দ হলো৷

সাংস্কৃতিক নৈকট্য

খাবারের স্বাদ গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা কতটা প্রভাব রাখে তা বুঝতে নিউরোগ্যাস্ট্রোনমির পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের পাঁচ ধরনের চিনির শরবত খেতে দেয়া হয়৷ তারপর তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয় – কোনটি বেশি মিষ্টি৷

অধিকাংশের উত্তর ছিল ভ্যানিলা ফ্লেভার দেয়া শরবতের পক্ষে, যদিও পাঁচটি শরবতের সবগুলোতেই একই রকম চিনি দেয়া হয়েছিল৷

মার্কো ভালুসি বলেন, সাংস্কৃতিকভাবেই ভ্যানিলা মিষ্টি স্বাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে৷ অংশগ্রহণকারীরা ভ্যানিলা ফ্লেভারের শরবতকেই বেশি মিষ্টি বলেছেন, কারণ তাঁরা মিষ্টি খাবারের মধ্যেই ভ্যানিলার গন্ধ পেয়ে অভ্যস্ত৷

‘‘আপনি যদি চিনির শরবতে মরিচের গন্ধ যোগ করেন, তাঁদের কাছে তা কম মিষ্টি মনে হবে, কারণ মরিচ বলতে তাঁরা কেবল ঝাল স্বাদই বোঝেন৷''

অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃতির নিয়মের বাইরে গিয়েও মানুষ বিভিন্ন খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে শুরু করে৷ যেমন মরিচের ঝাল মুখ জ্বালিয়ে দেয়, কিন্তু ঝাল ঠিকমতো না হলে তরকারির স্বাদই মাটি৷ যিনি কখনো খাননি তাঁর কাছে পনিরের গন্ধ অসহ্য মনে হতে পারে৷ কিন্তু যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের কাছে নয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য