রাজনীতি নিয়ে জার্মান তরুণদের ভাবনা
৫ এপ্রিল ২০১৩১৮ বছর বয়সি হালিল এর্গিনকে এক আদর্শ তরুণ বলা চলে৷ ভারবুর্গের শরণার্থী সাহায্য প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সে৷ সমবয়সি অন্যান্য তরুণদের সাথে নর্থরাইনওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের হ্যেক্সটারে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের দেখাশোনা করছে হালিল৷ শরণার্থীদের দৈনন্দিন ও দাপ্তরিক কাজ কর্মে সহায়তা দিচ্ছে৷ অফিস আদালতে যেতে হলে বা কোনো ফর্ম পূরণ করতে হলে অত্যন্ত অসহায় বোধ করেন শরণার্থীরা আর এক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় হালিল এর্গিন৷ শুধু তাই নয় সমবয়সিদেরও বিষয়টি সম্পর্কে সংবেদনশীল করে তুলতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মানবদরদী এই তরুণ৷
রাজনীতিতে অনীহা
হালিল এর্গিন জানায়, ‘‘আমরা তরুণদের কাছ থেকে আরো অনেক কিছু পেতে পারি৷ মানুষকে সাহায্য করতে যারা আনন্দ পায়, আমরা তাদের কাছে টানতে পারি৷''
তবে জার্মান শিশু সাহায্য সংস্থার এক সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকই রাজনীতিতে আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছে৷ এই বিষয়ে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সি ৮৩০ জনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল৷ কারণ হিসাবে তারা জানিয়েছে, রাজনীতিতে তাদের তো উপেক্ষাই করা হয়েছে৷ উত্তরদাতাদের দুই তৃতীয়াংশের ধারণা জার্মান সরকার তরুণদের বিষয়গুলি নিয়ে খুব কমই মাথা ঘামায়৷ স্থানীয় রাজনীতিকদের সম্পর্কে অল্পবয়সীদের মতামত আরো নেতিবাচক৷ মাত্র ১৫ শতাংশ মনে করে রাজনীতিকরা শিশু কিশোরদের ব্যাপারে আগ্রহী৷
কঠিন কাজ নয়
কিন্তু কিশোর ও তরুণদের রাজনীতি ও সমাজের নানা বিষয়ে অনুপ্রাণিত করাটা খুব কঠিন কাজ নয়৷ শিশুসাহায্যসংস্থার সমীক্ষায় দেখা গেছে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোরদের রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করার ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে৷ এরপরই যেন একটা ভাঙন ধরে৷ বয়ঃসন্ধি কালে মনমানসে পরিবর্তন দেখা দেয়৷ ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগ্রহ ও ইচ্ছায় ভাটা পড়তে পারে৷ আর অন্যদিক দিক থেকে হাত বাড়ানো না হলে নিরাসক্তির পথটাই প্রশস্ত হয়৷ শিশু সাহায্য সংস্থার প্রধান টমাস ক্র্যুগার এজন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে তরুণদের অংশগ্রহণের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর ওপর জোর দেন৷
প্রাণবন্ত করে তুলতে হবে
‘‘তরুণ ও কিশোরদের রাজনীতি ও সমাজনীতিতে উত্সাহিত করতে হলে সক্রিয় ব্যবস্থাও নিতে হবে৷ বিষয়গুলিকে প্রাণবন্ত করে তুলে ধরতে হবে৷ নয়ত তা শুধুই কথার কচকচানি বলে মনে হবে৷ হয়ে পড়বে একঘেয়ে৷'' ১৮ বছরের হালিল এই ভাবেই তার বক্তব্য তুলে ধরে৷ তরুণরা যে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েও অনেক কিছু করতে পারে, তা বোঝা যায় একটি আন্দোলন থেকে৷ আর তা হলো, আণবিক জ্বালানি শক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনটি৷ একসঙ্গে কাজ করলে সামাজিক পরিবর্তন যে সম্ভব তা বোঝা যায় এই কর্মসূচি থেকে৷ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অল্পবয়সীদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো৷
বহু তরুণ তরুণী রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যোগ দিতে আগ্রহী হলেও কীভাবে তা করা যায়, এই তথ্যটিই পায় না৷ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেকই বলে যে, স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজকারবারে যোগ দেওয়া সম্ভব কিনা, তা তারা জানেই না৷ এখানে শুধু তথ্য ও খবরাখবর দিলেই চলবে না৷ স্কুলের পাঠ্যসূচিতে রাজনীতিকে ছাত্রছাত্রীদের কাছাকাছি নিয়ে আসতে হবে৷
শ্রেণিগত পার্থক্য নেই
সমীক্ষার ফলাফলে একটি বিষয় সবাইকে বিস্মিত করেছে আর তা হল, রাজনীতি ও সমাজনীতির প্রশ্নে শ্রেণিগত তেমন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না৷ অর্থাৎ সব শ্রেণির পরিবার থেকে আসা ছেলে মেয়েরা কম বেশি একই ধরনের উত্তর দিয়েছে৷ অভিবাসীদের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়৷ অল্প কিছু তরুণ তরুণী রাজনীতিতে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করা, যেমন কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারে বলে জানিয়েছে৷ সামাজিক ক্ষেত্রে সক্রিয় হওয়ার আগ্রহ অবশ্য অনেকেই দেখিয়েছে৷
টমাস ক্রুগার এ প্রসঙ্গে বলেন, এজন্য স্কুল, পরিবার ও প্রতিবেশী সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷ রাজনীতি এমন একটা বিষয়, যা সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই এটি সবার জন্যই সুগম করতে হবে৷