1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজনীতির অপভাষা যেখানে ছিল সেখানেই আছে

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ
২৭ মার্চ ২০২৪

নির্বাচন কমিশন যা-ই বলুক, রাজনীতিকদের ভাষা ব্যবহারে এখনো কোনো বদল নেই। দিলীপ ঘোষ উদাহরণ মাত্র।

https://p.dw.com/p/4eAHt
দিলীপ ঘোষ
ফের কুকথা বললেন দিলীপ ঘোষছবি: Subrata Goswami/DW

বর্ধমানে নিজের কেন্দ্রে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মেদিনীপুর থেকে তাকে বর্ধমানে নিয়ে যাওয়ায় তিনি মোটেই খুশি নন বলে তার ঘনিষ্ঠ মহল বলছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই দিলীপ তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে চূড়ান্ত অপভাষা ব্যবহার করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতৃপরিচয় নিয়ে কার্যত প্রশ্ন তুলেছেন দিলীপ। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিসরে যা নিয়ে রীতিমতো আলোড়ন তৈরি হয়েছে। তৃণমূল নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। দিলীপের দল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাবেক রাজ্য-সভাপতিকে শোকস নোটিস পাঠিয়েছে। দিলীপকে জানাতে হবে, কেন তিনি একথা বলেছেন। দিলীপের মন্তব্য থেকে দূরত্ব তৈরি করেছে বিজেপি। নোটিসে বলা হয়েছে, এধরনের ভাষা বিজেপি পছন্দ করছে না।

নির্বাচন কমিশনের অবস্থান

খেয়াল রাখা দরকার, সম্প্রতি লোকসভা ভোটের সময়সূচি জানানোর সময় নির্বাচন কমিশন দীর্ঘসময় ব্যয় করেছিল নির্বাচনি বিধির তালিকা জানাতে। আট দফা বিধির দুই নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, রাজনীতিবিদেরা বিশেষ করে তারকা প্রার্থী এবং প্রচারকেরা নির্বাচনি বক্তৃতায় কোথাও কোনো ব্যক্তিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে পারবেন না। সমালোচনা করতে হলে তার কাজের কথা বলতে হবে।

ওই একই নির্বাচনি বিধির পাঁচ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নারীর প্রতি অসম্মানজনক কথা বলা যাবে না। যদি বলা হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে চরম শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

কী শাস্তির কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন? বলা হয়েছে, যে কোনো দলের তারকা প্রার্থীরা যদি এমন আচরণ করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে তো বটেই তার দলের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেড়ে নেয়া হতে পারে দলীয় প্রতীকও। ভারতীয় সংবিধানের পরিসরে নির্বাচন কমিশন চাইলে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই পারে। সে এক্তিয়ার তাদের আছে। কমিশন জানিয়েছে, প্রত্যেক জেলায় একজন করে নোডাল অফিসার বসানো হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে হবে সেই জেলার জেলাশাসক। তার রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দিলীপের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রাজ্যের অফিসারের হাত ঘুরে তা কেন্দ্রীয় কমিশনের কাছে যাবে।

বাস্তবে কিছুই হয় না

এবারের নির্বাচনে নির্বাচনি বিধি নিয়ে একটু বেশিই সরব হয়েছে কমিশন। তবে প্রতি বারেই নির্বাচনী বিধি থাকে। এবং প্রতি বারেই রাজনীতিবিদেরা সেই বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অপভাষার বন্যা বইয়ে দেন। উদাহরণ দিতে গেলে নিউজ প্রিন্টের কালি শেষ হয়ে যাবে।

কিছু উদাহরণ

তবু কিছু ঘটনার উল্লেখ করতেই হয়। বিগত লোকসভা নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কোমরে দড়ি পড়িয়ে ঘোরানোর কথা বলেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে নানা সুরে 'দিদি' উচ্চারণ করে মমতাকে কার্যত ব্যক্তি আক্রমণের রাস্তাই নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। শরণার্থীদের উইপোকার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিরোধীদের নিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ দিয়ে 'মণিমানিক্য' ঝড়েছে। এমন সব কথা তিনি বলেছেন, যা লেখারও অযোগ্য। অধুনা তিহারবন্দি অনুব্রত মন্ডলের মুখনিঃসৃত বাণী উবাচে পরিণত হয়েছে। তা সে পুলিশকে বোম মারাই হোক, বিরোধীকে গাঁজা কেস দেয়াই হোক অথবা চড়াম চড়াম ঢাক।

এক সময় বামেরাও এসব কথা কম বলেনি। কৃষকনেতা বিনয় কোঙার মেধা পটেকরকে নিয়ে যা বলেছিলেন, তা এখনো সিঙ্গুর মনে রেখেছে। দল থেকে বিতাড়িত সিপিএম নেতা অনিল বসু মমতার নামে ভয়ংকর সব শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন। এদিকে বিজেপির সাংসদ এবং এবারের ভোটেও প্রার্থী সুভাষ সরকার এই কিছুদিন আগেই বলে বসেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ কি বন্দুকে নিরোধ পরিয়ে রেখেছে?'' এদিকে বিষ্ণুপুরে যুযুধান দুই প্রার্থী একদা স্বামী-স্ত্রী সৌমিত্র খান এবং সুজাতা মন্ডল। চলতি নির্বাচনে তাদের কথাবার্তাও খেউড়ে পরিণত হয়েছে।

গত আড়াই দশকে এটাই আসলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী নেতাদের উল্লেখ করতে গিয়ে 'তুই-তোকারি' করেন, সে রাজ্যে এটাই রাজনৈতিক সংস্কৃতি হওয়ার কথা ছিল। ফলে দিলীপ ঘোষ কোনো ব্যতিক্রম নন। তিনি এই অপ-রাজনীতির অন্যতম ধারকবাহক। তার বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা করতে গেলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশন যেমন একথা জানে, তেমন জানেন দিলীপ এবং তার গোত্রীয় রাজনীতিবিদেরা। তারা জানেন, এসব কথা বললে বরং কিছু ফুটেজ বেশি পাওয়া যায়। ফলে বাংলার রাজনীতি যে চলছিল, তেমনই চলবে। একথা হলফ করে বলে দিতে কোনো দ্বিধা নেই। দ্বন্দ্বও নয়।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷