জাতীয় পার্টিতেও সংঘাত
২৮ নভেম্বর ২০১৩এরশাদ গত ১৮ নভেম্বর নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে কাজী জাফরের দ্বন্দ্ব শুরু৷ জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় যোগ দেন ৭ জন৷ এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সেসময় হাসপাতাল থেকে বিবৃতি দিয়েছিলেন কাজী জাফর আহমেদ৷ এরশাদের সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত হওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি৷ তবে তাতে এরশাদ তেমন রাগ করেননি৷ বলেছিলেন তিনি (কাজী জাফর) অসুস্থ, হয়তো অভিমান করেছেন৷ সেসময় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছিলেন এরশাদ৷
তবে কাজী জাফরের সর্বশেষ মন্তব্য এরশাদ মানতে পারেননি৷ কারণ কাজী জাফর তাঁকে ‘জাতীয় বেঈমান' এবং ‘বিশ্বাসঘাতক' বলেছেন৷ বলেছেন সুস্থ হয়ে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বসবেন৷ নেতা-কর্মীদের তিনি সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বানও জানান তিনি৷ এর প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার এরশাদ কাজী জাফরকে দল থেকে বহিষ্কার করেন৷ সাংবাদিকদের সেই খবর দিয়ে এরশাদ বলেন, ‘‘তিনি প্রতিদিন আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিবৃতি দিচ্ছেন৷ তিনি আজ থেকে আমার দলে নেই৷ তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের আদেশে সই করেছি''৷ এরশাদ দাবি করেন কাজী জাফর অসুস্থ হলে তাঁর চিকিৎসার জন্য ৩০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন তিনি৷ তখন কাজী জাফর এরশাদকে বলেন, ‘‘আপনি আমাকে জীবন দিয়েছেন, চিরকাল আপনার সঙ্গে থাকব''৷
তবে এর পর একই দিনে এরশাদকে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন কাজী জাফর আহমেদ৷ তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী গোলাম মোস্তফা সংবাদ মাধ্যমকে এই খবর নিশ্চিত করেছেন৷ জানা গেছে ‘গণবিরোধী' অবস্থান নেয়ায় এরশাদকে বহিষ্কার করেছেন কাজী জাফর৷
এই অবস্থায় জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ৷ তারা জানান, জাতীয় পার্টিতে কাজী জাফরের নেতৃত্বে সরকার বিরোধী অংশই শক্তিশালী ছিল৷ আর এরশাদও তাদের গুরুত্ব দিতেন বেশি৷ রহুল আমীন হাওলাদারের নেতৃত্বে সরকার সমর্থক অংশ ছিল কোণঠাসা৷ তবে এরশাদের ডিগবাজিতে রহুল আমীন গ্রুপ শক্তিশালী হয়৷ নির্বাচনকালীন সরকারে জাতীয় পার্টির সরকার সমর্থকরাই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপদেষ্টা হয়েছেন৷ এরশাদের নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনেও কাজী জাফর গ্রুপের কেউ ছিলেন না৷ ফলে তারা এখন জাতীয় পার্টি ভেঙে নতুন একটি গ্রুপ করে সরকার বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে৷ এব্যাপারে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের কাছে জানতে চাইলে তিনি ডয়চে ভেলের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ বহিষ্কার পাল্টা-বহিষ্কারে দল ভাঙছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না'৷ জাতীয় পার্টির নেতারা এখনো প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য এবং তীব্র হতে বেশি সময় লাগবে না বলে জানা গেছে৷
ডাকসাইটে শ্রমিক নেতা কাজী জাফর আহমেদ এরশাদের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন৷ ছিলেন এরশাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী৷ ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতনের পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদসহ অনেক নেতা এরশাদকে ছেড়ে চলে গেলেও কাজী জাফর আহমেদ তাঁর সঙ্গেই ছিলেন৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজী জাফরও আর এরশাদের সঙ্গে নেই৷ এর আগে বিভিন্ন সময়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টি থেকে বের হয়ে গিয়ে প্রায় একই নামে আলাদা দল গঠন করেন৷ দুটি উপধারাই এখনো সক্রিয় আছে৷