রাজ্য সরকারের হুমকি সত্ত্বেও সরকারি কর্মীদের ধর্মঘট
১০ মার্চ ২০২৩বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘভাতা দেয়ার দাবিতে রাজ্যজুড়ে সরকারি কর্মীদের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ। তাদের সমর্থন করেছে বামেদের সরকারি কর্মী সংগঠন কোঅর্ডিনেশন কমিটি। আর সরকার জানিয়ে দেয়, ধর্মঘটে অংশ নিলেই শাস্তি পেতে হবে কর্মীদের।
কতটা প্রভাব পড়েছে?
রাজ্য সরকারি সচিবালয় নবান্নে কর্মীদের হাজিরা স্বাভাবিক ছিল। সল্ট লেকের বিকাশ ভবন যেখানে বেশ কিছু দপ্তর আছে, সেখানেও সরকারি কর্মী ধর্মঘটের বিশেষ প্রভাব পড়েনি।
কিন্তু নব মহাকরণ, খাদ্য ভবন, ক্রেতা সুরক্ষা ভবন, কৃষি বিপণন ভবনে কর্মীর সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল। রস্তায় বাস চলাচল অবশ্য স্বাভাবিক ছিল। বিধানসভার অধিবেশন চলছে বলে সেখানেও কর্মীদের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক।
তবে জেলাগুলির ক্ষেত্রে বেশ কিছু জায়গায় ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। বালুরঘাটে জেলা আদালত চত্বরে কর্মীরা বকেয়া ডিএ-র দাবিকে বিক্ষোভ দেখান। বর্ধমানে প্রশাসনিক ভবন, স্কুল বোর্ড ও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সামনে পিকেটিং করেন ধর্মঘটীরা। জেলা আদালতেও এর প্রভাব দেখা যায়।
কোচবিহারে ডিআই অফিস পুরো বন্ধ ছিল। ধর্মঘটী কর্মীরা এখানে কাউকে ঢুকতে দেননি। ডানকুনিতে শ্রীরামকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ২৫জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে সকলে অনুপস্থিত ছিলেন। আলিপুরে আবগারি বিভাগের সামনে কোঅর্ডিনেশন কর্মীরা সকলকে হাতজোড় করে অফিসে যোগ না দেয়ার অনুরোধ করেন। মেদিনীপুরে কলেজ গেটের সামনে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান।
এসএফআইয়ের বিধানসভা অভিযান
কলেজে নির্বাচন করা সহ বিভিন্ন দাবিতে বিধানসভা অভিযানের ডাক দিয়েছিল বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই। পুলিশ তাদের মিছিলের অনুমতি দেয়নি। তা সত্ত্বেও বাম ছাত্রসংগঠনের নেতা-নেত্রীরা হওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে বিধানসভায় পৌঁছে যায়।
এসএফআইয়ের নেতা সৃজন ভট্টাচার্য পুলিশের বাধা সত্ত্বেও বিধানসভার গেটে চড়েন। তিনি ও অন্য কয়েকজন এসএফআই কর্মী গেট ধরে ঝাঁকাতে থাকেন। বিরাট পুলিশ বাহিনীআসে। তাদের টেনেহিঁচড়ে ভ্যানে তোলে পুলিশ। সৃজন বলেন, ''বিধানসভায় পৌঁছাতে দেবে না বলে হুমকি দেয়া হয়েছিল। আমরা পেরেছি।''
দাবি, পাল্টা দাবি
রাজ্য সরকারের ধর্মঘটী নেতারা দাবি করেছিলেন, সরকারের কাজকর্ম স্তব্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। কিছু সরকারি অফিস, স্কুল, কলেজ, আদালতে ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। আবার কিছু জায়গায় একেবারেই পড়েনি। কিন্তু ধর্মঘটীদের নেতা তাপস চক্রবর্তী বলেছেন, ''ধর্মঘটের সর্বাত্মক প্রভাব পড়েছে।'' কোঅর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরীর দাবি, ''সরকারি কর্মীরা ধর্মঘটে যোগ দিয়ে সব অচল করে দিয়েছেন।''
সরকার ঘোষণা করেছিল, ধর্মঘটে সরকারি কর্মীরা যোগ দিলেই শাস্তির মুখে পড়তে হবে। সব ছুটি বাতিল করে দেয়া হয়েছিল। তার উপর ধর্মঘটে যোগ দিলে কর্মজীবনে একটা ছেদ পড়েছে বলে ধরে নেয়া হবে। সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে এই ছেদ একেবারেই কাম্য নয়। কারণ, তারা যতদিন চাকরি করবেন, তার মধ্যে এই একদিন বাদ পড়বে। একদিনের কোনো অবসরকালীন সুবিধা তারা পাবেন না।
তৃণমূলের সরকারি কর্মচারি ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ''ধর্মঘটের কোনো প্রভাবই পড়েনি। নবান্নে অন্যদিনের থেকে বেশি কর্মী কাজে যোগ দিয়েছেন। আসল প্রশাসনিক ভবনে যখন কোনো প্রভাব পড়েনি, তখন এটা মানতে হবে যে, ধর্মঘট পুরোপুরি ব্যর্থ।''
জিএইচ/এসিবি (পিটিআই, টিভি৯, আনন্দবাজার)