রাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে পারে রামপাল
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ একরাম উল্লাহ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘‘দ্রুত উৎপাদন শুরু করতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি৷ সব ঠিকঠাক থাকলে আজ রাতে কেন্দ্রটি থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে৷''
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হলে দেশে চলমান লোডশেডিং বন্ধ হবে বলে আশা করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা৷
তারা বলছেন, দেশে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কম চালানো হচ্ছে৷ আবার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না৷ এর মধ্যে হঠাৎ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়৷ এ কারণে এখন প্রতিদিন গড়ে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে৷
এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুই ইউনিটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বিনিয়োগে৷ চুক্তির প্রায় ১০ বছর পর গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়৷ কিন্তু কয়লার অভাবে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়৷ মূলত, ডলার-সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় কয়লা আমদানি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়৷ এর জেরে কয়লার অভাব দেখা দেয়৷
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি সূত্র বলছে, ৯ ফেব্রুয়ারি ৩০ হাজার টন কয়লা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে একটি জাহাজ মোংলায় এসে পৌঁছায়৷ এছাড়া ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরেকটি জাহাজ ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে৷
বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দিনে ৫ হাজার টন কয়লা লাগে৷ সে হিসাবে এখন মাত্র ছয় দিনের কয়লা আছে৷ এই কয়লা শেষ হওয়ার আগেই পরের জাহাজটি দেশের বন্দরে এসে পৌঁছাবে৷
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে৷ দ্বিতীয় ইউনিট আগামী এপ্রিল মাসে চালুর কথা রয়েছে৷
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র বলছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট চালু হলে দিনে কয়লা লাগবে ১০ হাজার টন৷ বর্তমানে তাদের ৬ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ দেওয়া আছে৷ নতুন করে ডাকা দরপত্রে অংশ নিয়ে আরও ৬০ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ পেয়েছে দেশের বেসরকারি খাতের একটি শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ৷ শুরু থেকে তারাই এই কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করছে৷ ৬০ লাখ টন কয়লা দিয়ে আগামী তিন বছর রামপাল কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে৷ ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হচ্ছে এসব কয়লা৷
প্রথম ইউনিট চালুর পর রামপাল থেকে দিনে অন্তত ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ আসত ঢাকায়৷ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধের আগেই পিডিবিকে ডলার-সংকটের বিষয়টি জানায় রামপাল৷ এরপর বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি অবহিত করে বিদ্যুৎ বিভাগ৷ এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়৷ এরপর ঋণপত্র খোলার ব্যবস্থা করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় নেওয়া হয় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প৷ ২০১২ সালে গঠিত হয় বিআইএফপিসিএল৷ ২০১৩ সালে পিডিবির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয় এই কোম্পানির৷ ২০১৬ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরুর কথা থাকলেও তা হয় ২০১৭ সালে৷ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রটির৷ কিন্তু বারবার শুধু সময় পিছিয়েছে৷ সুন্দরবনের কাছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানান পরিবেশবাদীরা৷
একেএ/জেডএইচ (প্রথম আলো)