এখনো নিখোঁজ ১৮২ শ্রমিক
২৯ মার্চ ২০১৪এছাড়া রানা প্লাজা ধসের দিন ২৪ এপ্রিলকে ‘শ্রমিক নিরাপত্তা ও শোক দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে ঐদিন সকল কারখানায় ছুটি ঘোষণারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি৷
শনিবার তোপখানা রোডে ‘নির্মল সেন মিলনায়তন'এ আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সংগঠনের সমন্বয়ক শ্রমিক নেত্রী তাসলিমা আখতার এই দাবি করেন৷ তিনি বলেন, এ পর্যন্ত যে তালিকা পাওয়া গেছে তা অসংলগ্ন৷
সংবাদ ব্রিফিংয়ের পর ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে তাসলিমা আখতার বলেন, এখনো যে ১৮২ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে এর মধ্যে ১৪৬ জনের ডিএনএ ও কবর খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ আর ৩৬ জনের ডিএনএ শনাক্ত হলেও তাদের যোগাযোগের ঠিকানা ও ফোন নম্বরে গরমিল রয়েছে৷ ব্রিফিংয়ে তিনি ১৪৬ জন শ্রমিকের নামের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেন৷
তাসলিমা আখতার বলেন, নিখোঁজ শ্রমিকের নামের তালিকা সরকার, সেনাবাহিনী, বিজিএমইএসহ যারা রানা প্লাজা নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠনের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে৷ নিখোঁজদের অবিলম্বে নিহত ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আর কিছুদিন পরই রানা প্লাজা ধসের এক বছর পূর্ণ হবে৷ অথচ এখনো নিখোঁজ শ্রমিকদের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করা হয়নি৷ এমনকি বিজিএমইএতে রানা প্লাজার কারখানাগুলোর সেলারি শিট (মজুরি তালিকা) থাকলেও তারা প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করছে না৷''
ইতোমধ্যে নিখোঁজদের যেসব তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে গরমিল রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম সরকার যথাযথ তালিকা তৈরি করে শ্রমিকদের হয়রানি থেকে মুক্ত করবে৷ কিন্তু বেশিরভাগ তালিকা জনসাধারণের নাগালের বাইরে৷ আর যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তাতে রয়েছে নানা অসঙ্গতি৷ এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে দু'টি ডিএনএ রিপোর্ট প্রকাশ করা হলেও তাতেও নানা অসঙ্গতি রয়েছে৷ এটা অবিলম্বে দূর হওয়া দরকার৷''
সেনাবাহিনীর তৈরি করা তালিকা অপেক্ষাকৃত গোছানো উল্লেখ করে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ঐ তালিকাতেও কিছু শ্রমিকের নামের পুনরাবৃত্তি আছে৷
সরকারের কারখানা পরিদর্শক কমিটি এবং সেনাবাহিনীর তালিকায় নাম নেই এমন অনেকের নাম প্রথম ডিএনএ রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়৷ তালিকায় নাম নেই অথচ ডিএনএ মিলেছে – এর অর্থ তালিকা দুটির কোনোটিই পূর্ণাঙ্গ না বলে মনে করে শ্রমিক সংগঠনটি৷
নিখোঁজদের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করে তাদেরকে জরুরি সহায়তা প্রদান করারও দাবি জানানো হয় ব্রিফিংয়ে৷ এসময় রানা প্লাজার নিখোঁজ শ্রমিকদের অনেকের স্বজনেরা ‘সন্ধান চাই' লেখা প্লাকার্ডসহ উপস্থিত ছিলেন৷
সংগঠনের নেতারা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা এখনো তাদের ক্ষতিপূরণ পায়নি৷ ৪০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দেয়ার ঘোষণা আসলেও এখন পর্যন্ত এর অগ্রগতি সম্পর্কে তাঁরা স্পষ্টভাবে কিছুই জানতে পারেননি৷ অথচ ইতিমধ্যে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা একটি মামলায় জামিন পেয়ে গেছে এবং আইনের ফাঁক গলে অন্য অভিযুক্তরাও বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন৷
সংবাদ সম্মেলনে তাসলিমা আখতার সাত দফা দাবি জানান৷ এর মধ্যে রয়েছে সকল তালিকার অসঙ্গতি দূর করতে হবে, প্রকৃত তালিকা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, অবিলম্বে সকল ক্ষতিগ্রস্ত আহত-নিহত নিখোঁজদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, ডিএনএ শনাক্তকারীদের কবর বুঝিয়ে দিতে হবে, রানা প্লাজার ধ্বংসাবশেষে পাওয়া সকল হাড় কঙ্কালের ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে এবং দ্রুত রিপোর্ট দিতে হবে৷ সকল নিখোঁজদের প্রয়োজনীয় তথ্যের ভিত্তিতে নিহত ঘোষণা করতে হবে৷ নিখোঁজদের সন্ধানে ডিএনএ পরীক্ষা একমাত্র পদ্ধতি হিসেবে ধরা যাবে না৷ সোহেল রানার জামিন বাতিলসহ সকল দোষীদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে৷ জমি বা অনুদান প্রদানের নামে যারা ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদেরকে নানাভাবে প্রতারিত করছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে৷
এছাড়া ব্রিফিং শেষে কর্মসূচি ঘোষণা করে সংগঠনটি৷ এর মধ্যে রয়েছে – ৩১ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত গামেন্টস সংহতির নিখোঁজ তালিকা শ্রম মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ, সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ ও আইএলও'তে প্রদান৷ ৪ এপ্রিল নিখোঁজ নিহত, আহত পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময়৷ ২৪ এপ্রিল সকাল ৮টায় রানা প্লাজায় শ্রদ্ধাঞ্জলী এবং প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল এবং ২৫ এপ্রিল বিকাল ৪টায় ঢাকায় শাহবাগে যাদুঘরের সামনে সংহতি সমাবেশ৷