1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এখনো নিখোঁজ ১৮২ শ্রমিক

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৯ মার্চ ২০১৪

সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এখনো ১৮২ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি নামে শ্রমিকদের একটি সংগঠন৷

https://p.dw.com/p/1BYJw
ছবি: Reuters

এছাড়া রানা প্লাজা ধসের দিন ২৪ এপ্রিলকে ‘শ্রমিক নিরাপত্তা ও শোক দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে ঐদিন সকল কারখানায় ছুটি ঘোষণারও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি৷

শনিবার তোপখানা রোডে ‘নির্মল সেন মিলনায়তন'এ আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সংগঠনের সমন্বয়ক শ্রমিক নেত্রী তাসলিমা আখতার এই দাবি করেন৷ তিনি বলেন, এ পর্যন্ত যে তালিকা পাওয়া গেছে তা অসংলগ্ন৷

সংবাদ ব্রিফিংয়ের পর ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে তাসলিমা আখতার বলেন, এখনো যে ১৮২ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে এর মধ্যে ১৪৬ জনের ডিএনএ ও কবর খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ আর ৩৬ জনের ডিএনএ শনাক্ত হলেও তাদের যোগাযোগের ঠিকানা ও ফোন নম্বরে গরমিল রয়েছে৷ ব্রিফিংয়ে তিনি ১৪৬ জন শ্রমিকের নামের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেন৷

Bangladesch Demonstration der Textilarbeiter in Dhaka
এখনো স্বজনদের খুঁজে ফিরছেন আত্মীয়রাছবি: Imago/Xinhua

তাসলিমা আখতার বলেন, নিখোঁজ শ্রমিকের নামের তালিকা সরকার, সেনাবাহিনী, বিজিএমইএসহ যারা রানা প্লাজা নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠনের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে৷ নিখোঁজদের অবিলম্বে নিহত ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আর কিছুদিন পরই রানা প্লাজা ধসের এক বছর পূর্ণ হবে৷ অথচ এখনো নিখোঁজ শ্রমিকদের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করা হয়নি৷ এমনকি বিজিএমইএতে রানা প্লাজার কারখানাগুলোর সেলারি শিট (মজুরি তালিকা) থাকলেও তারা প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করছে না৷''

ইতোমধ্যে নিখোঁজদের যেসব তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে গরমিল রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম সরকার যথাযথ তালিকা তৈরি করে শ্রমিকদের হয়রানি থেকে মুক্ত করবে৷ কিন্তু বেশিরভাগ তালিকা জনসাধারণের নাগালের বাইরে৷ আর যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তাতে রয়েছে নানা অসঙ্গতি৷ এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে দু'টি ডিএনএ রিপোর্ট প্রকাশ করা হলেও তাতেও নানা অসঙ্গতি রয়েছে৷ এটা অবিলম্বে দূর হওয়া দরকার৷''

সেনাবাহিনীর তৈরি করা তালিকা অপেক্ষাকৃত গোছানো উল্লেখ করে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ঐ তালিকাতেও কিছু শ্রমিকের নামের পুনরাবৃত্তি আছে৷

সরকারের কারখানা পরিদর্শক কমিটি এবং সেনাবাহিনীর তালিকায় নাম নেই এমন অনেকের নাম প্রথম ডিএনএ রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়৷ তালিকায় নাম নেই অথচ ডিএনএ মিলেছে – এর অর্থ তালিকা দুটির কোনোটিই পূর্ণাঙ্গ না বলে মনে করে শ্রমিক সংগঠনটি৷

নিখোঁজদের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করে তাদেরকে জরুরি সহায়তা প্রদান করারও দাবি জানানো হয় ব্রিফিংয়ে৷ এসময় রানা প্লাজার নিখোঁজ শ্রমিকদের অনেকের স্বজনেরা ‘সন্ধান চাই' লেখা প্লাকার্ডসহ উপস্থিত ছিলেন৷

সংগঠনের নেতারা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা এখনো তাদের ক্ষতিপূরণ পায়নি৷ ৪০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দেয়ার ঘোষণা আসলেও এখন পর্যন্ত এর অগ্রগতি সম্পর্কে তাঁরা স্পষ্টভাবে কিছুই জানতে পারেননি৷ অথচ ইতিমধ্যে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা একটি মামলায় জামিন পেয়ে গেছে এবং আইনের ফাঁক গলে অন্য অভিযুক্তরাও বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন৷

সংবাদ সম্মেলনে তাসলিমা আখতার সাত দফা দাবি জানান৷ এর মধ্যে রয়েছে সকল তালিকার অসঙ্গতি দূর করতে হবে, প্রকৃত তালিকা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, অবিলম্বে সকল ক্ষতিগ্রস্ত আহত-নিহত নিখোঁজদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, ডিএনএ শনাক্তকারীদের কবর বুঝিয়ে দিতে হবে, রানা প্লাজার ধ্বংসাবশেষে পাওয়া সকল হাড় কঙ্কালের ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে এবং দ্রুত রিপোর্ট দিতে হবে৷ সকল নিখোঁজদের প্রয়োজনীয় তথ্যের ভিত্তিতে নিহত ঘোষণা করতে হবে৷ নিখোঁজদের সন্ধানে ডিএনএ পরীক্ষা একমাত্র পদ্ধতি হিসেবে ধরা যাবে না৷ সোহেল রানার জামিন বাতিলসহ সকল দোষীদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে৷ জমি বা অনুদান প্রদানের নামে যারা ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদেরকে নানাভাবে প্রতারিত করছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে৷

এছাড়া ব্রিফিং শেষে কর্মসূচি ঘোষণা করে সংগঠনটি৷ এর মধ্যে রয়েছে – ৩১ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত গামেন্টস সংহতির নিখোঁজ তালিকা শ্রম মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ, সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ ও আইএলও'তে প্রদান৷ ৪ এপ্রিল নিখোঁজ নিহত, আহত পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময়৷ ২৪ এপ্রিল সকাল ৮টায় রানা প্লাজায় শ্রদ্ধাঞ্জলী এবং প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল এবং ২৫ এপ্রিল বিকাল ৪টায় ঢাকায় শাহবাগে যাদুঘরের সামনে সংহতি সমাবেশ৷