রানি নেফারতিতির ভাস্কর্যকে নকল বলে দাবি
১১ মে ২০০৯নেফারতিতি প্রাচীন মিশরের ১৮তম রাজবংশের রানি এবং ফারাউ আখেনাটেন এর প্রথম স্ত্রী৷ আখেনাটেন খ্রীষ্টপূর্ব ১৩৫০ সালের দিকে রাজা ছিলেন৷ নেফারতিতির অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য তাঁকে প্রাচীন কালের ‘মোনালিসা' বলা হয়৷ সুইজারল্যান্ডের শিল্প বিষয়ক ঐতিহাসিক হেনরি স্টিয়ারলিন বলছেন, এই ভাস্কর্যটি ১৯১২ সালে তৈরি যা নেফারতিতির প্রাচীন মূর্তি থেকে নকল করা হয়েছে৷ মিশর, মধ্য প্রাচ্য এবং ইসলামের প্রাচীন ঘটনাবলীর উপর এক ডজন বইয়ের লেখক স্টিয়ারলিন সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর একটি বইয়ে এ দাবি করেন৷ তাঁর মতে, বার্লিনে রাখা ৫০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এই মূর্তিটি জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ লুডভিগ বর্শার্ট এর আদেশে শিল্পী গেরার্ট মার্কস তৈরি করেছিলেন৷ বর্শার্ট মূলত প্রাচীন মিশরীয়দের ব্যবহৃত রঙের ধরণ ও স্থায়িত্ব সম্পর্কে পরীক্ষা চালানোর জন্য এই মূর্তিটি তৈরি করিয়েছিলেন৷
স্টিয়ারলিন বলেন, ১৯১২ সালের ৬ ডিসেম্বর জার্মানির এক রাজপুত্র মূর্তিটি দেখার পরে এটাকে মৌলিক কাজ বলে এতটা প্রশংসা করেছিলেন যে, বর্শার্ট তাঁর অতিথিদের নিরাশ না করতে এটির প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেননি৷ স্টিয়ারলিনের যুক্তি হচ্ছে, মূর্তিটির কাঁধের কাছে খাড়াভাবে কাটা হয়েছে যা ১৯ শতকের একটি ধারা৷ অথচ মিশরীয়রা তাদের ভাস্কর্যগুলোকে অনুভূমিকভাবে কাটতো৷
স্টিয়ারলিন তাঁর বই-এ তাঁর দাবির স্বপক্ষে মূর্তিটি মিশর থেকে জার্মানি আনার সময়ের কিছু সমস্যার উল্লেখ করেন এবং সেসময় প্রকাশিত বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন৷ এটি আবিষ্কারের ১১ বছর পর ১৯২৩ সালে এই বিষয়ে বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনগুলো প্রকাশিত হয়েছিল৷ তিনি বলেন, ব্যতিক্রমধর্মী এই মূর্তিটি কি করে এমন অক্ষত উদ্ধার করা সম্ভব হলো সে বিষয়েও প্রত্নতত্ত্ববিদ কোন ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি – এটা আশ্চর্যজনক৷ স্টিয়ারলিন বলেন, যে বর্শার্ট জানতেন এটা নকল এবং সম্ভবত সেকারণেই তিনি ১০ বছর যাবত এই মূর্তি তৈরিতে অর্থ দাতা ব্যক্তির বসার ঘরে এটিকে ফেলে রেখেছিলেন৷
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে এমন দাবি তোলা হয়েছিল, যে রানি নেফারতিতির এই মূল্যবান মূর্তিটি আদৌ আসল নয় বরং আসলটি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ অনেকের আশংকা, তখন আডল্ফ হিটলার মিশরীয়দের কষ্ট লাঘব করতে অনুরূপ একটি মূর্তি তৈরি করিয়েছিলেন৷ অবশ্য অনেকে আরো মারাত্মক অভিযোগ তুলেছিলেন, যে হিটলার আসল ভাস্কর্যটি ব্যক্তিগত সংগ্রহে রেখে দিয়ে সেখানে একটি নকল ভাস্কর্য স্থাপন করেন৷ সম্প্রতি জার্মানির চ্যারিটি হাসপাতালের ইমেজিং সায়েন্স ইন্সটিটিউট এই ভাস্কর্যটির নানা আঙ্গিকে অত্যাধুনিক সিটি স্ক্যান করে এসব শংকা দূর করেছে৷ এই সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে গবেষকরা আরো জানতে পেরেছেন, যে ভাস্কর্যটির উপরে প্লাস্টার প্রলেপ দেয়া থাকলেও ভেতরে আরেকটি স্তরে রয়েছে চুনা পাথরের আবরণ৷
উল্লেখ্য, বার্লিনের প্রাচীন জাদুঘরে স্থান পাওয়া অন্যান্য সামগ্রীর সাথে নেফারতিতির এই মূর্তিটিও অক্টোবর মাসে নবনির্মিত জাদুঘরে স্থানান্তরিত করা হবে৷ এদিকে, ১৯২৩ সালে ভাস্কর্যটি জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত করা হলে তখন থেকেই মিশর এটি তাদেরকে ফেরত দেয়ার জন্য জার্মানিকে চাপ দিয়ে আসছে৷ এই বিখ্যাত ভাস্কর্যটি দেখতে প্রতিবছর বার্লিনের ঐ জাদুঘরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ভিড় করে৷
প্রতিবেদক: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক