1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রামমন্দিরের ভূমিপুজো ৫ অগাস্ট

২০ জুলাই ২০২০

শুরু হয়ে যাচ্ছে রামমন্দিরের কাজ। করোনার মধ্যেই। ভূমিপুজোয় থাকবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এর পিছনে রাজনৈতিক লক্ষ্যও কাজ করছে।

https://p.dw.com/p/3faYR
ছবি: picture-alliance/dpa

অযোধ্যায় রামমন্দিরের জন্য ভূমিপুজোর কাজ শুরু হবে আগামী ৩ অগাস্ট। ভূমিপুজো হবে ৫ অগাস্ট। সে দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অযোধ্যায় উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম অযোধ্যায় রামজন্মভূমিতে পা রাখবেন মোদী।

রামজন্মভূমি ট্রাস্টের তরফে জানানো হয়েছে, বারণসীর পুরোহিতরা ভূমিপুজোর দায়িত্বে থাকবেন। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন অযোধ্যার পুরোহিতরাও। ভূমিপুজোর দিন গর্ভগৃহে পাঁচটি রুপোর ইট রাখা হবে। গর্ভগৃহ হবে আটকোণা। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মন্দিরের যে নকশা বানিয়েছিল, মূলত তাকেই অনুসরণ করা হচ্ছে, তবে তা আরও বড় করা হয়েছে। তিনটি গম্বুজের জায়গায় পাঁচটি গম্বুজ থাকবে। মন্দিরের আয়তন হবে প্রায় ৮৪ হাজার বর্গফুট।

প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, সেই সঙ্গে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অমিত শাহ, মোহন ভাগবত, নীতীশ কুমার, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে সহ প্রায় শতিনেক অভ্যাগতকে। তবে উদ্ধব যাবেন কি না, তা জানা যায়নি। 

কিন্তু এই করোনাকালে রামমন্দির নির্মাণ শুরু করে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিক শরদ পাওয়ার। তিনি বলেছেন, ''কোন কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, সেটা আগে ঠিক করতে হয়। এখন যেমন করোনাকে থামানো এবং অর্থনীতির হাল ফেরানোর কাজটাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কিছু লোক হয়ত ভাবেন, মন্দির তৈরি করলে করোনা সেরে যাবে। কিন্তু আমাদের কাছে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই ও অর্থনীতির হাল ফেরানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।''

এর জবাবে বিজেপি-র মুখপাত্র সুদেশ বর্মা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গে রামমন্দিরনির্মাণের তুলনা হওয়া উচিত নয়। এখন আনলক-পর্ব শুরু হওয়ার পর সবকিছুই খুলে গিয়েছে। পুজো এবং উপাসনা চালু হয়েছে। সরকার করোনার সঙ্গে লড়াই করছে এবং সফল হয়েছে। দিল্লি ও মুম্বইতে করোনার প্রকোপ কমেছে। বাকি জায়গাতেও কমবে। এর পাশাপাশি রামমন্দিরের ভূমিপুজো হতে অসুবিধা কোথায়? পুরোহিতরা এই সময় ঠিক করেছেন। তা নিয়ে বিতর্ক অনর্থক।''

তবে অগাস্টের পাঁচ তারিখ ভূমিপুজো করার মধ্যে অন্য একটা বার্তা আছে বলে মনে করেন প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''ঠিক এক বছর আগে ৫ অগাস্ট কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এক বছর পরে আবার রামমন্দিরের ভূমিপুজো হচ্ছে। তার থেকে মনে হচ্ছে, ৫ অগাস্ট দিনটা ভেবেচিন্তেই বেছে নেওয়া হয়েছে।''

এতদিনে একটা কথা পরিষ্কার, মোদী-শাহ সবসময়ই একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেন। তাঁরা অনেকদূর পর্যন্ত ভেবে রাখেন। বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, এই দিন ঠিক করার ক্ষেত্রেও বড় রাজনৈতিক পরিকল্পনা রয়েছে। আর কয়েক মাস পরে বিহারে বিধানসভা ভোট। সামনের বছর পশ্চিমবঙ্গে। আর রামমন্দির তৈরি হতে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর লাগবে। যখন রামমন্দির শেষ হবে, লোকের জন্য খুলে যাবে, তখন  লোকসভা নির্বাচন এসে যাবে। রামমন্দির তাঁদের বিধানসভা তো বটেই, লোকসভাতেও জেতার ক্ষেত্রে বড় অস্ত্র হবে বলে বিজেপি নেতাদের আশা। 

তবে শরদ মনে করেন, ''বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরেই তো অযোধ্যায় রামমন্দির ছিল। সেই মন্দির এ বার বিশাল করে গড়ে উঠবে। সেটা রামভক্তদের কাছে শ্লাঘার বিষয় হতে পারে, কিন্তু তার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সম্ভবত খুব বেশি হবে না। সেটা আর ভাবাবেগের ঘটনা হয়ে উঠবে না। মনে রাখবেন বাবরি ধ্বংসের এক বছর পর উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি হেরেছিল।'' বিজেপি নেতাদের অবশ্য দাবি, উত্তর ভারতে যদি রামমন্দিরের প্রভাব না পড়ে তো কীসে পড়বে? মোদী ক্ষমতায় আসার পর তিন তালাক বন্ধ করেছেন, ৩৭০ ধারা বিলোপ করেছেন, এ বার রামমন্দিরও হচ্ছে। এর মধ্যে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি যদি হয়ে যায়, তা হলে তো কথাই নেই। জেতার জন্য এটাই যথেষ্ট।

একসময় রামরথের সওয়ার হয়েই নিজেদের জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়িয়ে নিয়েছিল বিজেপি। এখন আবার রামমন্দিরে সওয়ার হয়ে তারা একের পর এক নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। সেই সঙ্গে আবার সেই স্লোগানটা উঠবে, মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়, মানে মোদী থাকলে সবই সম্ভব। রামমন্দির তৈরি শুরু হওয়ার পর সেই সম্ভবের তালিকায় রামমন্দিরও সম্ভবত যোগ করবে বিজেপি।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷