রাশিয়াকে নিয়ে সমস্যা
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁদের যুগ্ম সাংবাদিক সম্মেলনে ঐক্য প্রদর্শন করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের প্রতি বিরোধিতায় পশ্চিমা জোটে কোনো ভাঙন ধরেনি৷
পদার্থবিদ্যায় ডক্টর খেতাবধারী ম্যার্কেল নিশ্চয় জানতেন যে, সব কিছু পাওয়া সম্ভব নয়৷ কিন্তু রাজনীতিক ম্যার্কেল সম্ভবত ঐক্য প্রদর্শন ছাড়া আর কোনো পন্থা দেখেননি – বিশেষ করে ওবামা যদি শেষমেষ বিপন্ন ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীকে তাদের অতি প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র দেবার সিদ্ধান্ত নেন৷
কিন্তু ওবামা এবং ম্যার্কেল কাউকে বোকা বানাতে পারবেন না: রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন বহুদিন আগেই পশ্চিমি জোটে একটি ফাটল আবিষ্কার করেছেন এবং তিনি জানেন, সেটাকে কিভাবে নিজের কাজে লাগাতে হয়৷ পুটিন অ্যামেরিকা এবং ইউরোপকে পরস্পরের থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, একটু একটু করে, ধীরে ধীরে৷
যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মধ্যে সমঝোতা এখন আগের চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ – শুধুমাত্র রাশিয়ার সঙ্গে বিরোধেই নয়, বরং তথাকথিত ‘‘ইসলামিক স্টেট''-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামেও, ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলাপ-আলোচনায়, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে এবং আফগানিস্তানে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যাবৎ জগৎ সম্ভবত এতগুলি অগ্নিগর্ভ সংঘাত দেখেনি, এবং সর্বত্র মার্কিনি ও ইউরোপীয়রা পরস্পরের উপর নির্ভরশীল৷ ঐকমত্য এবং কার্যকরি সংকট নিয়ন্ত্রণ এখন প্রায় বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র৷
সবই ম্যার্কেলের উপর নির্ভর
স্বদেশে ওবামার সমালোচকরা এ সব ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহী নন৷ সেনেটর জন ম্যাককেইন-এর নেতৃত্বে তারা আবার এক দ্বিধাগ্রস্ত, দুর্বল প্রেসিডেন্টের ছবি তুলে ধরেছে, যিনি নাকি সিরিয়া ও ইরাকে তাঁর দুর্বল প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যামেরিকার শত্রুদের আরো আশকারা দিচ্ছেন৷ রাশিয়ার প্রতি ইউরোপীয় এবং মার্কিনিদের মনোভাব কিছুটা আলাদা, এ কথা জানা সত্ত্বেও এই সমালোচকরা ম্যার্কেলকে – অর্থাৎ একজন বিদেশি সরকারপ্রধানকে এক হাত নিতে ছাড়েননি৷
কোনো বিকল্প পরিকল্পনা আছে কি?
তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব ও প্রভাব সত্ত্বেও, চ্যান্সেলর ম্যার্কেল ইউক্রেন সংঘাতের বর্তমান পর্যায়ে বিশেষভাবে অরক্ষিত৷ তাঁর সর্বাধুনিক কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি নিজেকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এসেছেন, যা কিনা একটা ঝুঁকি৷ ওবামা সেটা বুঝতে পেরে তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত – অর্থাৎ ইউক্রেনকে অস্ত্রপ্রদানের সিদ্ধান্ত আগামী মিনস্ক শীর্ষবৈঠকের পর অবধি পিছিয়ে দিয়েছেন৷
ঐ শীর্ষবৈঠক যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে অস্ত্র সরবরাহের প্রশ্নটা আরো বড় হয়ে দেখা দেবে৷ পুটিনকে একটি যৌথ বার্তা পাঠানোর যোগ্য কারণ আছে৷ পশ্চিম যদি শুধুমাত্র শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কিছুটা জোরদার করে, তাহলে পুটিন নিশ্চয় সেটাকে দুর্বলতার লক্ষণ বলে ধরে নেবেন৷ এছাড়া ইউক্রেনে যে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার একটা নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে৷
নতিস্বীকার
কিন্তু থমকে থাকা বা জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া: রাশিয়ার সঙ্গে আচরণের মূল প্রশ্নই হলো তাই৷ পুটিনের সঙ্গে কী রকম ব্যবহার করা উচিত? যে দেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ব্যবস্থাপনাকেই চ্যালেঞ্জ করছে, যে দেশে এক নতুন জাতীয়তাবাদের হাওয়া চলেছে, যে দেশ আধুনিকীকরণে অনাগ্রহী, সে দেশের সঙ্গে কী রকম আচরণ করা উচিত?
আঙ্গেলা ম্যার্কেল রাশিয়াকে খুব ভালো বোঝেন৷ তিনিও সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে, তাঁর কাছেও কোনো উত্তর নেই৷ ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া হবে কিনা, এই প্রশ্নে পশ্চিমের অসহায়তাই প্রকাশ পেয়েছে৷ অস্ত্রপ্রদানের অর্থ হবে স্বীকার করে নেওয়া যে, কূটনীতি এবং সাধারণ বাস্তববুদ্ধি ব্যর্থ হয়েছে৷