রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো একজোট যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ
৩১ মার্চ ২০২২রাষ্ট্রজোট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিভিন্ন বিষয়ে একমত হতে না পারায় বিশ্বের অন্যান্য শক্তির সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতার ক্ষেত্রে বার বার সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার একবার প্রশ্ন করেছিলেন, ইউরোপের সঙ্গে কথা বলতে গেলে কাকে ফোন করবো? ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে ন্যাটোর মতো ইউরোপীয় রাষ্ট্রজোটেও যে ঐক্য দেখা যাচ্ছে, তার ফলে অতীতের সেই দুর্বলতা এক ধাক্কায় অনেকটাই কেটে গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ এমনই এক প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ‘কৌশলগত সংলাপ’ নামের এক কাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু হলো৷
বুধবার ওয়াশিংটনে দুই পক্ষ ‘রাশিয়া সংক্রান্ত ইইউ-মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ’ কাঠামোর প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ রাজনৈতিক বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত মার্কিন উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিক্টোরিয়া নিউল্যান্ড এবং ইইউ পররাষ্ট্র বিষয়ক উপ মহাসচিব এনরিকে মোরে এই আলোচনার নেতৃত্ব দেন৷ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আচরণ মোকাবিলা পক্ষে দুই পক্ষ কৌশলগত লক্ষ্যের ভিত্তিতে পারস্পরিক সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলস একযোগে বিনা প্ররোচনায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অযৌক্তিক এবং বর্বর যুদ্ধের তীব্র নিন্দা করেছে৷ বিশেষ করে নিরীহ মানুষের উপর রুশ সামরিক হামলা অবিলম্বে বন্ধ করার ডাক দিয়েছে দুই পক্ষ৷
ইউক্রেন সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার মতো কোনো বড় দেশের উপর অভূতপূর্ব নিষেধাজ্ঞা ও রপ্তানি সঙ্কুচিত করার দ্রুত পদক্ষেপ সব পক্ষেরই বিস্ময়ের কারণ হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে রাশিয়াকে আরও কতটা বিচ্ছিন্ন করা যায়, নিউল্যান্ড ও মোরে সে বিষয়েও আলোচনা করেছেন৷ ইউক্রেনে অবিলম্বে অস্ত্রবিরতি ও মানবিক করিডোর সৃষ্টির ক্ষেত্রে চীনের সমর্থন আদায়ের বিষয়েও দুই কর্মকর্তা শলাপরামর্শ করেছেন৷ তাঁরা চীনের উদ্দেশ্যে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলার বিষয়ে সতর্ক করে দেন৷ ইউক্রেনের উপর হামলার ক্ষেত্রে রাশিয়াকে কোনো রকম সহায়তা থেকে বিরত থাকার ডাকও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ৷ চীন অবশ্য এখনো রাশিয়ার প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন দেখিয়ে আসছে৷
যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়ে উৎসাহ ততটা কমে যাবে বলে একটা আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে৷ ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসের মধ্যে সমন্বয়ের আনুষ্ঠানিক কাঠামো সেই ‘অবসাদ’ দূর করবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে৷ তাছাড়া জ্বালানির ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর ইউরোপের নির্ভরতার কারণে পুটিন প্রশাসনের বিশাল আয়ের ফলে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া এখনো পর্যন্ত যেভাবে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে, তার মূলে আঘাত হানতে চায় ইউক্রেনসহ পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশ৷ সে ক্ষেত্রেও নতুন সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা চলছে৷ অ্যাটলান্টিকের দুই প্রান্ত এবং ইউরোপের মধ্যে জ্বালানির ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও সমন্বয় আরও জোরদার করতে পারে নতুন এই কাঠামো৷
চলতি বছরের শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-র মধ্যে শীর্ষ কূটনৈতিক পর্যায়ে দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবার কথা৷ গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ শীর্ষ সম্মেলনেই নতুন এই কাঠামো গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)