রাশিয়ার জ্বালানির বিষয়ে অবিচল ম্যার্কেল
১৪ অক্টোবর ২০২২ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার জের ধরে জার্মানিতে যে জ্বালানি সংকট চলছে, তার জন্য অতীতে মস্কোর উপর অতি নির্ভরতার নীতিকে দায়ী করা হচ্ছে৷ বছরের পর বছর ধরে রাশিয়া থেকে সস্তায় গ্যাস আমদানি বাড়িয়ে এবং সে দেশ থেকে সরাসরি গ্যাস পেতে দু-দুটি পাইপলাইন গড়ে তুলে সেই নির্ভরতা আরো বাড়িয়ে জার্মানি নিজের ভুলেই আজ বড় ফাঁদে পড়েছে বলে সমালোচকরা মনে করছেন৷ অভিযোগের তির মূলত সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দিকেই চালিত হচ্ছে, যাঁর দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনকালে জার্মানি রাশিয়ার জ্বালানির উপর নির্ভরতা বাড়িয়ে এসেছে৷ ফলে গত বছর জার্মানির গ্যাস আমদানির প্রায় ৫৫ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে৷
বৃহস্পতিবার পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে এক পুরস্কার গ্রহণ করতে গিয়ে ম্যার্কেল সেই অভিযোগের জবাব দিয়েছেন৷ সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, নিজের আমলের জ্বালানি নীতি সম্পর্কে তার কোনো অনুশোচনা নেই৷ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময়ে ম্যার্কেল বলেন, এ ক্ষেত্রে সময়ের প্রেক্ষাপট মনে রাখা জরুরি৷ অর্থাৎ, পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷ ম্যার্কেল বলেন, বাণিজ্যের মাত্রা বাড়িয়ে রাশিয়ায় পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে তিনি কখনোই বিশ্বাস করেন নি৷ যুগের বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি মনে করিয়ে দেন, তাঁর আমলে পরমাণু শক্তি ও কয়লা ব্যবহার করে জ্বালানি উৎপাদন ধাপে ধাপে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল৷ রাশিয়া থেকে সস্তায় গ্যাস সেই সিদ্ধান্ত আদৌ সম্ভব করেছিল৷ বিকল্প জ্বালানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ সম্ভব হওয়া পর্যন্ত জার্মানির সামনে সেটাই একমাত্র বাস্তব সমাধানসূত্র ছিল বলে ম্যার্কেল মনে করেছিলেন৷ বিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির ব্যয় অনেক বেশি হতো বলে তিনি মনে করিয়ে দেন৷ ম্যার্কেল মনে করিয়ে দেন যে, এমনকি শীতল যুদ্ধের সময়েও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন নির্ভরযোগ্যভাবে জ্বালানি সরবরাহ করে এসেছিল৷
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে বলে আঙ্গেলা ম্যার্কেল স্বীকার করেন৷ ফলে জার্মানির জ্বালানি নীতি রাতারাতি বদলে ফেলতে হয়েছে৷ ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বে বর্তমান সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে বলে ম্যার্কেল মনে করেন৷ উল্লেখ্য, জ্বালানি সংকট সামাল দিতে ও মূল্যস্ফীতিতে রাশ টানতে পরমাণু শক্তি ও কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মেয়াদ আরও কিছুকাল বাড়াতে বাধ্য হয়েছে জার্মান সরকার৷ সেইসঙ্গে কোটি কোটি ইউরো ব্যয় করে সাধারণ মানুষ ও শিল্পজগতের সহায়তার নীতি গ্রহণ করতে হয়েছে৷ রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানির উপর এখনো নিষেধাজ্ঞা চাপানো না হলেও সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে৷ দ্রুত গতিতে একাধিক এলএনজি টার্মিনাল গড়ে তুলে বিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকে জাহাজে করে গ্যাস আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে শলৎসের সরকার৷
আত্মপক্ষ সমর্থন করলেও ম্যার্কেলের জ্বালানি নীতির সমালোচনা সহজে বন্ধ হবার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ ফিনল্যান্ড-ভিত্তিক ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার’ এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে ম্যার্কেলের আমলে জার্মানিতে বায়ুশক্তির বিকাশের অভাব তুলে ধরেছে৷ সেই রিপোর্ট অনুযায়ী ইউরোপের বাকি দেশের তুলনায় জার্মানিতে ২০১৫ সালের পর বায়ুশক্তি কেন্দ্র গড়ে তোলার হার অনেক কমে গেছে৷ সংস্থার হিসেব অনুযায়ী ম্যার্কেলের তৃতীয় কার্যকালের পর থেকে এ ক্ষেত্রে ইউরোপের বাকি দেশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলে গত বছরের শেষেই জার্মানি ৩২ গিগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে পারতো৷ সে ক্ষেত্রে গ্যাস ও পরমাণু শক্তির উপর নির্ভরতা অনেক কমে যেতো৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এপি)