1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের নীতি থেকে সরে আসা সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ

১৯ জানুয়ারি ২০২৪

বিএনপিসহ নিবন্ধিত ১৬ দলের বর্জনের মধ্যে ‘শান্তিপূর্ণ' নির্বাচনে আবারও দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ৷ নতুন সরকারের জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে তা নিয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে আলোচনা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4bSAw
২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদপত্র
টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে অর্থনীতি সামলানোসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছেছবি: Indranil Mukherjee/AFP

মোটাদাগে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক – এই তিনটি খাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের কথা সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর বিশেষজ্ঞরা বলছেন৷ সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সাংবাদিকদের কাছে এই তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন৷ কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই তিনটি খাতের যেসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেগুলোর প্রায় সবই পুরাতন বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত৷

জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতি বা ডলার সংকট, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা কিংবা পশ্চিমা ক্ষমতাধর দেশগুলোর সাথে দূরত্ব – এই চ্যালেঞ্জগুলো গত কয়েক বছর ধরে সরকারকে ভোগাচ্ছে৷ এদিক থেকে বলা যায়, সরকার এ চ্যালেঞ্জগুলো যে প্রক্রিয়ায় মোকাবিলা করে আসছে সে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়াতে ভুল আছে৷ সে কারণে চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের জন্য গৃহীত কর্মসূচির নীতি ও প্রক্রিয়াগত পরিবর্তনই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে৷ কারণ, গোড়ায় গণ্ডগোল থাকলে সাময়িক লাভ হতে পারে কিন্তু সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক ও কার্যকরী ফলাফল আসতে পারে না৷ 

উত্তরাধিকার সূত্রে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর বড় সংকট নিয়ে নতুন সরকার যাত্রা শুরু করেছে৷ মোটা দাগে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা ও আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা – এই তিনটি সংকট নতুন সরকারের জন্য বড় মাথাব্যাথার কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে, যা সামনের দিনগুলোতে সরকারের চিন্তার ভাঁজকে অনেক বাড়াবে৷  নতুন সরকারের জন্য এখন অর্থনীতির গলার কাঁটা উচ্চ মূল্যস্ফীতি আর ডলার সংকট৷ জিনিসপত্রের লাগামহীন দামে সৃষ্ট বাড়তি খরচের চাপে দিশেহারা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ৷ জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে জ্যামিতিক হারে৷ কিন্তু মানুষের আয় গাণিতিক হারেও বাড়ছে না৷ মূল্যস্ফীতি কোনোভাবেই ৯ শতাংশের নিচে নামছে না৷ বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘খাদ্যনিরাপত্তা' সংক্রান্ত হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাবারের ক্রমবর্ধমান দাম দেশের ৭১ শতাংশ পরিবারের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

ডলার সংকটের কারণে একদিকে যেমন রিজার্ভের ঝুঁকি বাড়ছে অন্যদিকে পুরো ব্যাংক খাত অস্থির হয়ে পড়েছে৷ দফায় দফায় পদক্ষেপ নিয়েও ডলার সংকট কাটাতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক৷ বরং সংকট বাড়ছে৷ ব্যাংক খাতের আরেকটি চিরাচরিত সমস্যা খেলাপি ঋণও লাগামছাড়া৷ ২০২২ সালের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ৷ পাশাপাশি দেশের ব্যাংকগুলো এখন যেভাবে টাকার সংকটে ভুগছে তা কাটিয়ে ওঠা নতুন সরকারের সামনে আর্থিক খাতের আরেকটি বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ নাজুক পরিস্থিতিতে থাকা কিছু কিছু ব্যাংক মাঝে মাঝেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় ধার নিয়ে সমস্যা মেটাচ্ছে৷ তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তাদের কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ঋণ দিতে পারছে না৷ রেমিট্যান্সের হারও সন্তোষজনকভাবে বাড়ছে না৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের তুলনায় গত বছরে প্রবাসী আয় বেড়েছে মাত্র ৬০ কোটি টাকা, অর্থাৎ, বৈদেশিক আয়ের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি এসেছে মাত্র ৩ শতাংশ৷ উপরন্তু রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি থেকে যাওয়ায় খরচ মেটাতে সরকারের দেনা বাড়ছে৷ চলতি অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয় যাবে৷ কমছে বিদেশি সাহায্যের পরিমাণও৷ বর্তমান অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) শুল্ক-করসহ সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ১৬ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা৷ রাজস্ব আয়ে গতি না বাড়াতে পারলে, নতুন সরকারের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হবে৷ সুদের হার বাড়ানোয় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমছে, পরিণামে শঙ্কায় পড়ছে বিনিয়োগ৷ চাপে পড়বে কর্মসংস্থান৷

রাজনৈতিক দিক থেকে নতুন সরকারকে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে৷ প্রথমত, নির্বাচন হয়ে গেলেও দেশে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হয়নি৷ সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক বিরোধী প্রতিপক্ষ বিশেষ করে বিএনপি কিভাবে মাঠে আন্দোলন করছে এবং তাতে পরিস্থিতি কোনদিকে যায় সেটির ওপর সরকারের জন্য রাজনৈতিক সংকটের চাপের মাত্রা নির্ভর করবে৷ দ্বিতীয়ত, সরকার নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করার জন্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর যে নিবর্তনমূলক রাজনৈতিক ব্যবহারের নিদর্শন রেখেছিল সেটি অব্যাহত থাকলে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে৷ এটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শুধু বাধা সৃষ্টিই করবে না পাশাপাশি বহির্বিশ্বে সরকারের ইমেজকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করবে৷ এমনিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন নির্বাচনের পর রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ইমেজ নিয়ে একটা সংকট থেকেই যাচ্ছে৷ তৃতীয়ত, সরকারের দলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জের নতুন মাত্রা যোগ করেছে৷ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে অবাধে স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থীদের অংশগ্রহণ করতে দেয়ার মাধ্যমে সরকারী দল আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যে সংঘাত তৈরি করেছে, তা সরকারের জন্য গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করবে৷ দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷ বিশেষ করে বাংলাদেশে দল ও সরকারের মধ্যে প্রায়োগিক দিক থেকে তেমন বড় পার্থক্য না থাকায় নিজ দলীয় সংঘাত সরকারের কর্মউদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যথেষ্ট বিচ্যুতি ঘটাবে৷

কূটনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো শ্যাম ও কূল উভয় দিক রক্ষা করা৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপিবিহীন নির্বাচনকে ভারত, চীন ও রাশিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলো স্বীকৃতি দিয়েছে৷ অন্যদিকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান এক্ষেত্রে এখনও বিপরীত৷ তাদের সমর্থন আদায় ও সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ৷ আবার ভারত ও চীন পরস্পরবিরোধী হওয়ায় দুটো দেশের সাথে সমান তালে সম্পর্ক ধরে রাখাও অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করবে৷

অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক এ সমস্যাগুলো একদিকে যেমন পুরাতন তেমনি অন্যদিকে এগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়৷ একটি আরেকটির সাথে ব্যাপকভাবে সম্পর্কিত৷ যেমন দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ না থাকলে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব নয়৷ উপরন্তু অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হলে তা রাজনৈতিক সংকটকে আরো তীব্র রূপ দিতে পারে৷ আবার পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে না পারলে তা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে৷ কারণ বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার প্রধানত ইউরোপ-আমেরিকা নির্ভর৷ এ কারণে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার যে আশঙ্কা রয়ে গেছে সেটি কাটিয়ে উঠতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর চরম প্রভাব ফেলতে পারে৷ বাংলাদেশের অবস্থা বিবেচনা করে এটি ভাবা খুবই স্বাভাবিক যে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসলে রপ্তানি কমে যাবে, বিনিয়োগ হ্রাস পাবে৷ ফলে কমবে কর্মসংস্থান, যা প্রভাব ফেলবে দেশের মানুষের জীবনযাত্রায়৷

নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো হঠাৎ করে উদয় হয়নি৷ এগুলো আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল৷ তাই আওয়ামী লীগ সরকার এসব চ্যালেঞ্জ অতীতে কীভাবে মোকাবিলা করেছিল বা করার চেষ্টা করেছিল তা থেকে সামনের দিনগুলোতে এগুলো মোকাবিলার ধরন কেমন হবে সে সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে৷ অর্থনীতি ও রাজনীতি – দুটো ক্ষেত্রেই ২০১৪ সালের পরবর্তী সময় থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরকারের মধ্যে যে কোনো সমস্যা মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা দেখা গেছে৷ এমনকি সরকারের সর্বোচ্চ থেকে সব পর্যায়ে নীতিনির্ধারকদের বক্তব্যেও সবসময় নিয়ন্ত্রণের নীতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷ যেমন মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নের জন্য বিরোধী দলকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি৷ কিন্তু গত কয়েক দশকে এমন একটি দেশের উদাহরণ তুলে ধরা যাবে না, যারা সংশ্লিষ্ট খাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর নজর না দিয়ে শুধু নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির মাধ্যমে সফলতা পেয়েছে৷ আধুনিককালে রাজনীতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নিয়ন্ত্রণ নয় ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হয়৷ শ্রীলংকার মতো অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর দেশেও জিনিসপত্রের দাম কমেছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না৷ বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভূটান, মালদ্বীপ, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পর সরকারের কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনায় দেশগুলোতে জিনিসপত্রের দাম কমেছে৷ গত বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওঠানামা করেনি৷ সরকার বারবার রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে কোনো সুফল পায়নি৷ উপরন্তু যে দেশের ৬৭ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী সেদেশে বাজার ও ব্যাংকিং খাতে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনতে পারে না৷ আবার দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানুষের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের ক্ষেত্রেও সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছে৷ এ ধরনের নীতি বজায় থাকলে সামনের দিনগুলোতে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সমস্যা আরো জটিল করে তুলতে পারে৷ আবার একশ্রেণীর ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আমলাদের দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা থাকলেও এ বিষয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়নি৷ নির্বাচনের সময় সরকারি দলের অনেক প্রার্থীর হলফনামা দেখে চক্ষু চড়ক গাছ হলেও দুর্নীতি রোধে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ কমই দেখা যায়৷ অর্থনীতি ও রাজনীতির বেসামাল অবস্থায় এটি সামনের দিনগুলোতে বড় ইস্যু হয়ে দেখা দিতে পারে৷  

সাধারণভাবে বলা হয়, কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যের দ্বারা প্রয়োজনীয় কাজ করিয়ে নেয়ার কৌশল হলো ব্যবস্থাপনা৷ ব্যবস্থাপনাকে যদি একটি বৈজ্ঞানিক কৌশল বা প্রক্রিয়া হিসেবে ধরা হয়, তাহলে এর সবশেষ ধাপ হলো নিয়ন্ত্রণ৷ অথচ বাংলাদেশ সরকার বিগত কয়েক বছরে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমেই নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিকেই অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে৷ মূল্যস্ফীতি কমানো, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গণতান্ত্রিক চর্চার প্রসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, আর্থিকখাতে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করাসহ আওয়ামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নিজেদের ইশতেহারে যে ১১টি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছিল তার কোনোটিই নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির মাধ্যমে অর্জন সম্ভব নয়৷ কিন্তু সরকারের কাজের ধরন, নিদেনপক্ষে নিকট অতীতে সরকারের আচরণ থেকে এটি বলা কঠিন যে, নতুন সরকার রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য ব্যবস্থাপনার ওপর বেশি জোর দেবে৷ কার্যকর ব্যবস্থাপনা নীতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানে নানা মত ও দৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হয়৷ নানা মত ও পথ থেকে কার্যকর পথটি বেছে নিলে এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা মাফিক কাজ করলে সাফল্য আসে৷ কিন্তু প্রথমেই নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি গ্রহণ করলে মতের বৈচিত্র্যতা রুদ্ধ হয়ে যায়৷

নির্বাচনে জেতার পর রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতির নানা বহুমুখী অসম্পূর্ণ অধ্যায়ের রাশ টেনে ধরতে হবে সরকারকে৷ কিন্তু টানা চতুর্থ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জের তালিকাটা বেশ দীর্ঘ৷ এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নীতিগত সিদ্ধান্তে ভুল থাকলে চ্যালেঞ্জগুলোর দৃশ্যমানতাই শুধু প্রকট হবে না, এগুলোর গভীরতা আরো বিস্তৃত হবে৷ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দিয়ে হয়তো পরিস্থিতি সাময়িকভাবে সামাল দেয়া যাবে৷ কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ও নিবর্তনমূলক নীতি থেকে সরে এসে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর নজর দেয়ার বিষয়টি অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত ব্যাপার৷ তখন পরিস্থিতি হবে ‘কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস' – প্রবাদের মতো৷ তখন এটিই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে৷