রাস্তায় নামবেন করোনা স্বেচ্ছাসেবকরা
২৭ মার্চ ২০২০রোগী অনেক, কিন্তু চিকিৎসক নেই। চিকিৎসক আছেন কিন্তু যথেষ্ট সেবিকা নেই। বয়স্ক মানুষদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার লোক নেই। নেই কবরস্থল বা শ্মশানে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার কাঁধ। করোনায় দিশেহারা গোটা পৃথিবী। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্ত থেকে এমনই খবর মিলছে প্রতিনিয়ত। স্পেনে পরিত্যক্ত খাটে দিনের পর দিন পরে থেকেছে বৃদ্ধের লাশ। চীনে, ইটালিতে সেবিকার অভাব বার বার খবরের শিরোনাম হয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই এক নতুন প্রচারাভিযান শুরু করল ভারত সরকার। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে চাওয়া হল স্বেচ্ছাসেবক। সুখের কথা, তাতে সাড়াও মিলেছে। বহু মানুষ স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করছেন।
গণমাধ্যম এবং সমাজ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে ভারত সরকার। তাতে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য স্বেচ্ছাসেবক চাই। ব্যক্তিগত ভাবে অথবা সংস্থার তরফ থেকে সেখানে নাম নথিভুক্ত করা যাবে। উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে, কোন কোন ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা যাবে। এক, স্বাস্থ্যক্ষেত্র, দুই, যোগাযোগ, তিন, ঘরে বসে উৎপাদন এবং চার, জরুরি পরিষেবা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আবার আলাদা আলাদা বিষয় আছে। যেমন স্বাস্থ্যক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজের সুযোগ আছে। শুধু মাত্র চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাই এ কাজে যোগ দিতে পারবেন। এ ছাড়াও আছে প্যারামেডিক্যাল কাজ। সেখানে যোগ দিতে পারবেন যে কেউ। এ ছাড়াও স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়ক, মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা, অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে রয়েছে।
যোগাযোগ ক্ষেত্রেও নানা ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে। বাড়িতে বসেই রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন হেল্পলাইন অপারেট করা করা সম্ভব। এ ছাড়াও মানুষকে সচেতন করার জন্য নানা ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে সেখানে। বাড়িতে বসে উৎপাদন ক্ষেত্রেও কাজ করার সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে কোনও সংস্থা স্যানিটাইজার এবং মাস্ক উৎপাদন করে সরকারকে দিতে পারে। আর চতুর্থ ক্ষেত্রটি সরাসরি প্রশাসনকে সাহায্য করার। পুলিশ, সরকারি আধিকারিকদের সহকারি হিসেবে কাজ করার।
কেন্দ্রীয় সরকারের এক আধিকারিক ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সরকারের এই সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বহু দেশেই দেখা গিয়েছে, করোনা ছড়িয়ে যাওয়ার পরে স্বাস্থ্যকর্মীর অভবা ঘটেছে। আমাদের দেশে এখনও সংক্রমণ হাতের বাইরে চলে যায়নি। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হলে এই স্বেচ্ছাসেবকদের সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে। এখনই তাঁরা কাজ শুরু করে দিলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শিখে যাবেন।''
বিশিষ্ট চিকিৎসক সাত্যকি হালদারও একই কথা বলেছেন। ডয়চে ভেলেকে সাত্যকি জানিয়েছেন, ''যে ভাবে করোনা ছড়াচ্ছে, তাতে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকাটা সব চেয়ে বড় বোকামি। অনেকেরই আশঙ্কা আগামী দুই সপ্তাহে সংক্রমণ অনেকটাই বাড়বে। তখন এই স্বেচ্ছাসেবকদের অসম্ভব দরকার হবে।''
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নাম নথিভুক্ত করেছেন তথ্য ও প্রযুক্তি কর্মী সুলগ্না। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''এটা সময়ের কাজ। এই ভয়াবহ সময়ে মানুষের পাশে না দাঁড়ালে সভ্যতা বাঁচানো যাবে না। গোটা বিশ্বের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা ভয়াবহ চাপ নিচ্ছেন। জীবন বলি দিয়ে সকলকে সুস্থ করছেন। আমাদেরও তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।'' শুধু তাই নয়, নাম নথিভুক্ত করা অনেকেই বলছেন, লকডাউনেরতিনদিনের মধ্যেই নানা জিনিস নিয়ে কালোবাজারি শুরু হয়ে গিয়েছে। মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না, স্যানিটাইজার মিলছে না। পেলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এমন অবস্থায় ঘরে বসে এগুলি তৈরি করতে পারলে সাধারণ মানুষের কাছে তা নিখরচায় পৌঁছনো সম্ভব হবে। সেটা খুবই জরুরি।
আনন্দের কথা, ভারত সরকার এই প্রচার শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই বহু মানুষ নাম নথিভুক্ত করতে শুরু করেছেন। কতজন যোগ দিচ্ছেন, সেই সংখ্যাটিও দেখা যাচ্ছে পোর্টালে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে নাম লিখিয়েছেন প্রায় ৩৪ হাজার জন। আর প্রায় ১৫০০টি সংস্থা নাম নথিভুক্ত করেছে। সরকারের আশা, দ্রুত এই সংখ্যা লক্ষাধিক হয়ে যাবে।
যুক্তরাজ্যেও একই কাজ করা হয়েছে। ম্যাঞ্চেস্টার থেকে শাশ্বতী সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক ঘরে বসে অথবা রাস্তায় নেমে কাজ করছেন। রাস্তায় নামলেও তাঁরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখছেন। অনেকেই বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের বাড়িতে খাবার, ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের এই সময়ে দূর থেকেই মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন।''
যুক্তরাজ্যে এ ধরনের কাজ ইতিমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। অনেকেরই ধারণা, ভারতেও এই প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হবে।