বুদ্ধিজীবীর ছেলের সাক্ষাৎকার
১৪ ডিসেম্বর ২০১৩১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীকে অপহরণ করে আল-বদর বাহিনী৷ তারপর হত্যা করা হয় তাঁকে৷ তন্ময়ের বয়স তখন মাত্র চার বছর৷ খুব অল্প বয়সে বাবাকে হারানো এই মানুষটি এখনো ফেসবুকে শেয়ার করেন বাবার ছবি৷ বাবাকে নিয়ে ভাসাভাসা স্মৃতিগুলো এখনো মনে করার চেষ্টা করেন তিনি৷ স্বাভাবিকভাবেই বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাওয়াটা তাঁর অধিকার৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথোপকথনে সেদিকটাই চলে আসে ঘুরে ফিরে৷
স্বাধীনতার ৪২ বছর পর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত৷ ১৯৭১ সালে আল-বদর বাহিনীর নেতা ছিলেন এই দু'জন, যাদের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অন্যতম হোতা বলা হয়৷ তারা এখন বিদেশে আছেন৷ এদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার বিষয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে৷ এই প্রসঙ্গে আসিফ মুনীর বলেন, ‘‘যতদিন পর্যন্ত চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামানকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষিত হয়ে আছে, ততদিন ইংল্যান্ড এবং অ্যামেরিকা থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা আইনগতভাবে সম্ভব নয়৷ এখানে বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করলেও সম্ভব হবে না৷''
তাহলে তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার উপায় নেই? আসিফ মুনীর নিজেই জানালেন এক সম্ভাব্য বিকল্পের কথা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি এটুকু শুনতে পাচ্ছি, যদি কোনো কারণে এদের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এরকম কিছু দেয়া হয় তাহলে হয়ত সেই দেশগুলো বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে৷ তবে সেটা আমরা যারা ভুক্তভোগী পরিবার আছি তারা গ্রহণ করবো কিনা সেটাও একটি বিষয়৷ চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামানের ক্ষেত্রে যে এগারোটি অভিযোগ আনা হয়েছিল সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে৷ সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ শাস্তি যেটা আছে মৃত্যুদণ্ড, এরচেয়ে কম কিছু অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না৷''
আসিফ মুনীর স্বীকার করেন, এই দুই যুদ্ধাপরাধীকে ফিরিয়ে আনা খুবই দুরূহ ব্যাপার৷ তবে কূটনৈতিক উপায়ে এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে একটি উপায় বের করার পক্ষে তিনি৷ এমন কোনো সমন্বিত উদ্যোগ এখনো তাঁর চোখে পড়েনি৷
প্রসঙ্গত, একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে ১২ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার৷ শহিদ পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে সন্তুষ্ট তন্ময়৷ তিনি মনে করেন, ‘‘আমি দেখেছি ঢাকাসহ সারাদেশে এবং দেশের বাইরে অনেক বাঙালির মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে একধরনের নতুন স্পৃহা বা আস্থা জন্মেছে৷ আমাদের বিদেশিরা বা দুর্জনেরা যা-ই বলুক না কেন৷''
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একজনের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হলেও আরো কয়েকজন এখনো বাকি আছেন৷ এদিকে নির্বাচনও আসন্ন৷ ফলে অনেকের মাঝে একটি শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে, বাকি রায় কি আদৌ কার্যকর করা সম্ভব হবে? ডয়চে ভেলের এমন এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মুনীর বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা দেখেছি যে জুডিশিয়াল সিস্টেম রয়েছে সেটি সবসময় তার নিজস্ব গতিতে চলে না৷ অথবা স্বতন্ত্রভাবে চলে না৷ এটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়৷ এমনকি রায়কে পরিবর্তনও করা হয়ে থাকে৷''
তবে আসিফ মুনীর ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, যদি আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে আবারো সরকার গঠন করতে পারে তাহলে তাঁরা এই রায়গুলো কার্যকর করা শুধু নয়, ট্রাইব্যুনালকে তার গতিতে এগোতে দিয়ে আরো যে বিচারগুলো করা দরকার, সেগুলোরও একটি প্রক্রিয়ায় যাবে৷
সাক্ষাৎকার: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: জাহিদুল হক