রিও-র বনাঞ্চলকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা
২০ মে ২০১৬কয়েক বছর আগেও নাকি তিনি এখান থেকে ঝিনুক আর স্যালমন মাছ ধরেছেন – জানালেন আমাদের গাইড ক্রিস্টিয়ানো সোয়ারেস৷ ধীবর ক্রিস্টিয়ানো সোয়ারেস-এর কথায়, ‘‘দেখুন এখানে, কতটা নোংরা৷ পানিতে সব কিছু ভাসছে৷ শুধু এই ম্যানগ্রোভ গাছগুলো আমাদের মতো জেলেদের পরিবেশ দূষণের ফলশ্রুতি থেকে বাঁচায়৷ জল থেকে হানিকর পদার্থ শুষে নেবার পর গাছগুলেো নিজেরাই মারা পড়ে৷ ম্যানগ্রোভ অরণ্য না থাকলে, আমরা সত্যিই বিপদে পড়তাম৷''
ক্রমবর্ধমান দূষণের ফলে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যে সংকটের মুখে৷ নগর বিকাশ কর্মকর্তা মার্সিও ভিয়েইরা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন৷ তিনি জাননা, ‘‘ভবিষ্যতে এই ম্যানগ্রোভ অরণ্য শহরের পক্ষে একটা অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে৷ আমরা জানি যে, জলবায়ু পরিবর্তন আসছে; সাগরের পানির উচ্চতা বাড়লে এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যই হবে আমাদের শেষ সম্বল৷ কেননা ডুকে ডি কাসিয়াস একটু নীচু জায়গায়, এখানে বন্যার আশঙ্কা আছে৷''
শহরের উত্তরে আরো একটি এলাকা আছে, নগর পরিকল্পকরা যেখানে কোনোরকম নির্মাণকার্যের অনুমতি দেবেন না৷ সেটি হলো অ্যাটলান্টিক রেইন ফরেস্ট বা বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় অরণ্য৷ এখানে ২০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ ও দু'হাজারের বেশি প্রজাতির প্রাণীর বাস৷ সিজেলি মেদেইরোস হলেন সেই সংরক্ষিত এলাকার পরিচালক৷ এককালে ব্রাজিলের ভূখণ্ডের একটা বড় অংশ এই অ্যাটলান্টিক রেইন ফরেস্টে ঢাকা ছিল৷ আজ তার মাত্র সাত শতাংশ বাকি আছে৷
সিজেলি মেদেইরোস বললেন, ‘‘অরণ্যের পক্ষে সবচেয়ে বড় বিপদ হলো মানুষ৷ আমাদের আরো ভালোভাবে বোঝাতে হবে যে, অক্ষুণ্ণ অরণ্য যে সমৃদ্ধি আনতে পারে, অরণ্য ধ্বংস করে তা কোনোদিন পাওয়া যাবে না৷''
শহরের পানীয় জল আসে এখান থেকে৷ এছাড়া এই বনানী গোটা অঞ্চলকে ঠান্ডা রাখে৷ এই অ্যাটলান্টিক রেইন ফরেস্ট আরো একটি কারণে মার্সিও ভিয়েইরা-র মতো নগর পরিকল্পকদের কাছে অপরিহার্য৷ তাঁর কথায়, ‘‘খুব বৃষ্টি হলে, রেইন ফরেস্ট এই পানি ধরে রাখে আর ধীরে ধীরে নীচে শহরের দিকে ছাড়ে৷ জঙ্গল এভাবে বিপুল পরিমাণ পানি আটকে রেখে বন্যা প্রতিরোধ করে৷ অর্থাৎ রেইন ফরেস্ট মানুষের প্রাণ বাঁচায়৷''
এই অরণ্য ছাড়া তিন বছর আগের বন্যা অনেক বেশি বিধ্বংসী হতো৷ সেই বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আগে যেখানে নদীর ধারেই বাড়ি তৈরি করা হতো, আজ সেখানে জমি খালি রাখা হয়৷ মার্সিও ভিয়েইরা বলেন, ‘‘যখন না ভেবেচিন্তে বাড়ি তৈরি করা হতো, আমরা সে পর্যায়কে পিছনে ফেলে এসেছি৷ এখন আমরা বলি, যখন বাড়ি তৈরি হচ্ছে, তখন তার কাছে কিছুটা জমি ফাঁকা রাখতে হবে৷ বাড়ির পাশে বাড়ি, মানুষের ওপর মানুষের ভিড় করে কারো কোনো লাভ হবে না, কোয়ালিটি অফ লাইফ বাড়বে না৷ বরং এখানকার মতো বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা থাকবে৷ আমরা এমন একটা শহর চাই, যেখানে প্রকৃতির জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে৷''
হয়ত ডুকে ডি কাসিয়াস শহর এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারবে, সংরক্ষিত প্রাকৃতিক এলাকাগুলিকে আরো ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবে৷ তা-তে এখানকার বাসিন্দাদের লাভ বৈ লোকসান হবে না৷