রিকশা বন্ধ কি যানজট নিরসনের সমাধান!
১৫ এপ্রিল ২০১১আটটি রুটে রিকশা বন্ধের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ২৮ মার্চ৷ রিকশা বন্ধ করা হয়েছে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে মালিবাগ-মৌচাক হয়ে মগবাজার-বাংলামটর ও রামপুরা পর্যন্ত৷ নীলক্ষেত থেকে নিউমার্কেট, মৎস্যভবন থেকে শিল্পকলা একাডেমী, খামারবাড়ি সড়ক, রাজমনি সিনেমা হল থেকে রাজস্ব ভবন এবং দোয়েল চত্বর থেকে হাইকোর্ট এলাকা পর্যন্ত৷
এর আগে আরও দু'দফায় কয়েকটি রাস্তায় রিকশা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৷ একবার ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত৷ এবং এরপর ২০০৯ সালে শুধুমাত্র মিরপুর এলাকায়৷ সেসময় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ মিরপুরের কিছু সড়কে রিকশা বন্ধ করেছিল৷ এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন' এর নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বললেন,
‘‘এর আগে মিরপুরের যে রাস্তাগুলোতে রিকশা বন্ধ করা হয়েছিল সেখানে ‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন' এর সাম্প্রতিককালের জরিপে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি রুটে গাড়ির গতি কমেছে, গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে৷ এবং সেখানে বিকল্প পাবলিক যানবাহন না থাকায় যাত্রীদের ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে৷ সেই বিষয়গুলো আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি৷ বলেছি যে আসলে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা ছাড়া ঢাকায় পরিবেশবান্ধব যানবাহন রিকশা বন্ধ করা উচিত নয়৷''
এ বছর রিকশা বন্ধের পর বেশ কয়েকটি সংস্থা তাদের প্রতিবাদ ও রিপোর্ট তুলে ধরে৷ সেখানে বলা হয়, রিকশা বন্ধের নেপথ্যে কাজ করছে কয়েকটি গাড়ি বিক্রয়কারী বিদেশি কোম্পানি৷ এতে উৎসাহ যোগাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক এবং অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান যারা প্রাইভেট কারের জন্য ঋণ দেয়৷ এছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু নির্মাণ প্রতিষ্ঠান যাদেরকে বিদেশ থেকে আর্থিক ঋণ ও সহায়তা করা হয়৷ অথচ ঢাকার যানবাহন সমন্বয় বোর্ড ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এর সর্বশেষ ২০১০ সালের প্রতিবেদনে ঢাকার যাত্রীরা কী ধরণের যানবাহন ব্যবহার করছে তার মধ্যে দেখা যায়, রিকশা ব্যবহার করছে ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ৷ বিশেষ করে নারীরা নিরাপদ যান হিসেবে ৪৭ দশমিক ৪ ভাগ এবং স্কুলগামী বাচ্চারা ৪১ শতাংশ রিকশা ব্যবহার করছে৷''
‘‘সাম্প্রতিককালে যানজটের যে অজুহাতে রিকশা বন্ধ করা হচ্ছে এর ফলে আমরা দেখছি ঢাকার এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্যাটারি চালিত রিকশা চালু করা হচ্ছে৷ এর যন্ত্রাংশগুলো বেশিরভাগ আসছে ভারত ও চীন থেকে৷ এতে বিদ্যুতের যেমন ঘাটতি হচ্ছে৷ এবং পরিবেশ বান্ধব নয় বলে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা ও কমিটি থেকে বলা হয়েছে এটি কীভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছে৷''
এইসব রিপোর্টে বলা হচ্ছে, দৈনিক একটি রিকশা ৪০ জন যাত্রী বহন করে৷ অথচ একটি প্রাইভেট কার ব্যবহার করে তিন থেকে চারজন যাত্রী ৷ আর প্রতি বছর রিকশা যে পরিমাণে যাত্রী বহন করছে সেই পরিমাণ যাত্রী বহন করতে প্রাইভেট বা পাবলিক বাসের ৫ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি খরচ হতো৷
‘‘রিকশা বন্ধের বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচক ভাবে নিচ্ছিনা৷ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং ঢাকার যানবাহন সমন্বয় বোর্ডের কাছে যথাযথ যুক্তি উপস্থাপন করে প্রস্তাব দিয়েছি যে কোনভাবেই পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী, জনপ্রিয় ও কর্মসংস্থানমূলক এই যানবাহনকে বন্ধ করা যাবেনা৷''
এর আগে মিরপুরে দেখা গেছে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত বিকল্প পাবলিক যানবাহনের ব্যবস্থা করতে পারেনি৷ ফলে যাদের পর্যাপ্ত সামর্থ্য নাই তারাও প্রাইভেট কার কিনেছে৷ ফলে গাড়ির সংখ্যা আরও বেড়েছে৷ বেড়েছে যানজটও৷ তাই এই বিষয়টি নিয়ে যাদের যথেষ্ট ধারণা রয়েছে তাঁদের পরামর্শ না নিয়ে কেবল বিশ্বব্যাংকের এবং অন্যান্য লাভজনক কোম্পানিগুলোর পরামর্শে উচ্ছেদ করা ঠিক হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এই ক্ষেত্রে তাঁরা কিছু প্রস্তাবনা দিচ্ছেন৷
‘‘যেসব রুটে রিকশা বন্ধ করা হয়েছে সেখানে পৃথক লেন তৈরি করে তা চালু করা৷ সঠিক স্থানে রিকশা স্ট্যান্ড নির্মাণ, ভাড়া নির্ধারণ, চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, সাইকেলের ও রিকশার জন্য যাতায়াত উপযোগী রাস্তা নির্মাণ, রিকশার কাঠামোগত উন্নয়ন করা, চালকদের মালিকানা প্রদান, আবাসনের ব্যবস্থা করা এবং গ্যারেজ তৈরি করা৷ এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য, রিকশার লাইসেন্স ১৯৮৬ সালে সিটি কর্পোরেশন বন্ধ করে দেয়৷ অথচ প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৫০টি গাড়ি নতুন করে লাইসেন্স বা নবায়ন হচ্ছে৷''
প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন