বিমানের জন্য বায়ো টয়লেট?
২৩ ডিসেম্বর ২০১৬বিমান উড়ে যায় আকাশপথে৷ বিমানে শৌচালয় থাকে৷ যাত্রীরা প্রয়োজনমত সেই শৌচালয় ব্যবহার করেন৷ কিন্তু তার দরুণ যে বর্জ্য তৈরি হয়, সেটা শেষপর্যন্ত কোথায় যায়? সম্প্রতি তার আন্দাজ পাওয়া গেল৷ দিল্লি বিমানবন্দর এলাকার বাসিন্দা সৎবন্ত সিং দাহিয়া গত অক্টোবরে ভারতের পরিবেশ আদালতে অভিযোগ জানান যে, প্রতিদিন উড়ন্ত বিমান থেকে তাদের এলাকায় মানব-বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হয়, যা ঘরেদোরে, এমনকি লোকের গায়েও এসে পড়ে৷ গত বছর ডিসেম্বরেই দিল্লির আরেক বাসিন্দা, ৬০ বছরের এক মহিলা জখম হয়েছিলেন অত উঁচু থেকে গায়ে এসে পড়া বর্জ্যের আঘাতে৷ সৎবন্ত সিং দাহিয়ার অভিযোগের পরই বিষয়টি জাতীয় নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নজরে আনা হয় এবং পরিবেশ আদালত শেষ পর্যন্ত উড়ান সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেয়, বিমানে সঞ্চিত মানব-বর্জ্য ঠিকভাবে যাতে জমা করা হয়, সেই ব্যবস্থা নিতে৷ কারণ কোনো জনপদ এই বর্জ্যের কারণে সমস্যায় পড়বে, এটা হতে পারে না৷
ভারতীয় বিমানসংস্থাগুলির জন্যে কিন্তু বর্জ্য নিষ্কাশনের নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দেওয়া আছে৷ সেখানে পরিষ্কার বলা আছে, উড়ন্ত বিমান থেকে কোনো অবস্থাতেই সেপটিক ট্যাংক খালি করা যাবে না৷ সেটা খালি করতে হবে বিমানবন্দরে, বিমান মাটিতে নামার পর৷ তার জন্য নির্দিষ্ট সাফাইকর্মীরা থাকেন বিমানবন্দরে, যাঁরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিমানের সেপটিক ট্যাংক সাফ করেন৷ এবং এক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম হলো, বিমান অবতরণের পর যদি দেখা যায় তার সেপটিক ট্যাংক খালি, তা হলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে৷
একটি কারণেই বিমানের বর্জ্য মাঝ আকাশে, উড়ন্ত অবস্থায় খালি করার দরকার হতে পারে৷ যদি সেপটিক ট্যাংক কোনো কারণে ‘লিক’ করে বা বিমানের বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়, তবে সেক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট নিয়ম আছে৷ বিমান যখন অতি উচ্চতায় থাকবে, সেই বর্জ্য হিমায়িত করে বরফ কুচির আকারে পরিবেশে ছেড়ে দিতে হয়৷ কিন্তু পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, বিমান সংস্থাগুলি বরং ভারতীয় রেলের থেকে শিক্ষা নিতে পারে৷ রেলকামরার শৌচালয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ব্যবহার বিধি আছে৷ ট্রেন স্টেশনে থাকা অবস্থায় বা রেলপথে অন্য কোথাও দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কামরার শৌচালয় ব্যবহার নিষিদ্ধ৷ কিন্তু তাতেও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা যায় না, যেহেতু মানব-বর্জ্য কোথাও না কোথাও ঠিকই পড়ে, নোংরা হয়৷ যে কারণে রেল মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের প্রত্যেকটি রেলের কামরায় জৈব শৌচালয়, অর্থাৎ বায়ো টয়লেট বসানোর৷
কীভাবে কাজ করে এই শৌচালয়? সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে সঞ্চিত বর্জ্যকে প্রথমে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিচ্ছিন্ন করে নেওয়া হয়৷ তারপর অতি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাক্টেরিয়ার সাহায্যে সেটিকে মিথেন গ্যাস এবং জলে রূপান্তরিত করা হয়৷ ফলে দূষণের কোনো সম্ভাবনাই থাকে না৷ ভারতীয় রেল মন্ত্রক ২০১৬ সালে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, পরের পাঁচ বছরের মধ্যে সমস্ত রেল কামরায় এই জৈব শৌচালয় বসিয়ে ফেলবে৷ সেই মতো কাজও শুরু হয়ে যায় এবং এখন সেই কাজের যা অগ্রগতি, নির্দিষ্ট সময়সীমার দু'বছর আগেই, অর্থাৎ ২০১৯ সালের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে৷
পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, ভারতীয় রেল যদি পারে, তা হলে বিমান সংস্থাগুলি কেন পারবে না এমন কোনো সমাধান খুঁজে নিতে, যাতে মানব-বর্জ্য সমাজ জীবনে দূষণ না ঘটায়!
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷