1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রেশনিং কি বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ জুলাই ২০২২

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি মোকাবেলায় রেশনিং শুরু করেছে সরকার৷ চাহিদার চেয়ে দেড় হাজার মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ নিয়ে এলাকাভিত্তিক এক ঘন্টার লোডশেডিং দিয়ে এটা শুরু হয়েছে৷ কিন্তু তাতে কি পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে?

https://p.dw.com/p/4EMbN
Bangladesh Blackout
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এতে হয়তো সাময়িক উপশম হবে৷ কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যেতে হবে৷আর সেটা সম্ভব গ্যাস ও কয়লা দিয়ে৷ তবে এই খাতে লুটপাট বন্ধ না হলে কিছুতেই কিছু হবে না।
সরকার বিদ্যুতের রেশনিং-এর সাথে সাথে ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে ৷তাতে আরো এক হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হবে৷ সব মিলিয়ে দেশে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা আছে  ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট৷ পাওয়া যাচ্ছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট৷ ঘাটতি আছে এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট৷ এই ঘাটতি মেকাবেলা করতেই এখন এলাকা ভিত্তিক প্রতিদিন গড়ে এক ঘন্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে৷ এতে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম লাগবে বলে সরকার বলছে।
তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম মনে করেন,"বিদ্যুৎ উৎপাদনের হিসেবে ফাঁকি আছে৷ পিক আওয়ারে যদি শপিংমলসহ দোকান পাট  বন্ধ রাখা হয় তাহলে খুব সামান্যই লোডশেডিং হওয়ার কথা, এক ঘণ্টা নয়৷ বাস্তবে গ্রামে আগে থেকেই লোডশেডিং আছে৷ এখন এক ঘন্টা নয় আরো বেড়েছে।
সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য আজ ( মঙ্গলবার) থেকে রাত আটটার পর শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে৷ অফিস সময়ও পরিবর্তন হতে পারে৷ সব দাপ্তরিক মিটিং ভার্চুয়ালি করার জন্য বলেছে৷ নামাজ ও প্রার্থনার সময় ছাড়া মসজিদ ও উপসনালয়ে এসি বন্ধ রাখতে বলেছে৷ আর জ্বালানি তেলের ওপর চাপ কমাতে সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করছে৷
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ খান বলেছেন, পরিস্থিতি দেখে এক সপ্তাহ পর লোডশেডিং দিনে দুই ঘন্টা করা হতে পারে।
সরকারের পরিকল্পনায় খরচ কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে৷ কারণ এলএনজি ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে৷ বাংলাদেশে এখন দিনে উৎপাদন হয় ২৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস৷ আর ৮৫ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা হয়৷ যা দিয়ে মোট  চাহিদা মেটে না৷আর জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল ১০০ ডলারে নেমে এলেও বিপিসি লোকসানে আছে৷ ৮৫ ডলার হলে বিপিসির লোকসান হয় না।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মকবুল ই ইলাহী বলেন,"লোডশেডিং করে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি সামলানো যাবে৷ কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটা সমাধান নয়৷ আর সাশ্রয়ী মানে হলো বিদ্যুতের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমানো৷ এখন আমাদানি ব্যয় বেড়ে গেছে৷ টাকার তুলনায় ডলারের দাম বেড়ে গেছে৷ তাই এটা করা ছাড়া সরকারের উপায় নেই৷ কিন্তু আমাদের যে গ্যাস আছে তা আসলে এখনো আমরা সঠিকভাবে পরিমাপ করতে পারিনি৷ গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন না বাড়ালে হবে না৷ কয়লাভিত্তিক উৎপাদনে যেতে হবে৷ এছাড়া সমাধানের কোনো উপায় নেই।
সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে বলে সরকার যে বলছে সে ব্যাপারে তিনি বলেন," ওই সময় থেকে ডিসেম্বর জানুয়ারি পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে৷ সবচেয়ে বড় কৃষিখাতে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে না৷ আর আবহাওয়ার কারণে ঘরে, অফিসে কম বিদ্যুৎ লাগে৷ সরকার আশা করছে ওই সময়ের মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে যাবে, রামপালের একটি প্ল্যান্টও উৎপাদনে যাবে৷ এগুলো কয়লাভিত্তিক বলে উৎপাদন খরচ অনেক কম৷ কিন্তু সেটা তো এখনো পরিকল্পনার মধ্যেই আছে।
বিদ্যুতের লোডশেডিং-এর জন্য এলাকা ভিত্তিক শিডিউল তৈরি করা হয়েছে৷ কোন এলাকায় কখন এক ঘন্টা করে বিদ্যুৎ থাকবে না ম্যাপে তা উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে৷ ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে এখন পর্যন্ত লোডশেডিং-এর শিডিউল মানা হলেও গ্রামাঞ্চলে মানা হচ্ছে না৷ গ্রামে আগে থেকেই লোডশেডিং বেশি৷ এখন আরো বেড়ে গেছে৷ কোনো কোনো এলাকায় চার-পাঁচ ঘন্টাও হচ্ছে৷ বিশেষ করে রংপুর এলাকায় শহর গ্রাম কোথাও লোডশেডিং-এর শিডিউল মানা হচ্ছে না বলে খবর পাওয়া গেছে।
বুয়েটের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম  বলেন, "সরকারের এই লোডশেডিং করা ছাড়া এখন আরা কোনো উপায় নেই৷ আর বিশ্ব পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে এখানে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে৷ কারণ যুদ্ধ মাথায় রেখে তো আর পরিকল্পনা করা যায় না৷ কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে বিদ্যুতের ব্যবহার আরো কমাতে হবে৷ এর আশু কোনো সমাধান দেখছি না।
তার কথা,"জ্বালানি আমদানি করতে হয়, সব দেশই করে৷ তবে আমরা যদি আমাদের গ্যাসের হিসাবটা করতে পারতাম৷ সেটা যদি উত্তোলন করতে পারতাম তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো৷ নিজেদের গ্যাসের চেয়ে আমদানি করা গ্যাসের দাম তো সব সময় বেশিই হবে৷ আমি জানিনা এই গ্যাসের হিসাবটা কবে হবে৷ পাঁচ বছর, পাঁচ বছর বলে কত সময় কাটিয়ে দেয়া হবে! নিজস্ব গ্যাস, কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে৷ রিনিউএবল এনার্জি যতটা সম্ভব উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে।”
বাংলাদেশে রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে সমালোচনা আছে৷ তাদের বসিয়ে বসিয়ে অর্থ দেয়া হচ্ছে৷ এখানে কোনো মহলকে সুবিধা দেয়ার অভিযোগ আছে৷ তেমনি নিজেদের গ্যাস নিয়ে গড়িমসির নেপথ্যে বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেয়ার অভিযোগ আছে৷ ড. শামসুল আলম বলেন,"এখন যেটা করা হচেছ সেটা কোরামিন দিয়ে কোনোভাবে বাঁচিয়ে রাখা৷ এখানে আসল সমস্যা হচ্ছে লুটপাটের৷ সেটা বন্ধ করতে না পারলে কিছুতেই কিছু হবে না৷ ব্যাপক দুর্নীতিও চলবে আবার সক্ষমতার সাথে প্লান্টও কাজ করবে এটা বাংলাদেশ কেন বিশ্বের কোনো দেশেই সম্ভব নয়।

ম. তামিম

ড. শামসুল আলম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য