রোম ঘুরে দেখার টিপস
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদক এলিজাবেথ ইয়র্ক ফন ভার্টেনবুর্গ ছ’মাস ধরে রোমে আছেন৷ এই নগরীতে দৃষ্টিনন্দন এত কিছু আছে যে একবারে সেগুলো দেখা সম্ভব নয়৷ সংক্ষিপ্ত সফরে রোমে এলে ভালো লাগার কিছু জায়গা ঘুরে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷
প্রথমেই নির্বাচিত জায়গা
রোমে এত কিছু রয়েছে যে সেগুলো সব ঘুরে দেখার জন্য ছ’মাস যথেষ্ট নয়৷ আপনার হাতে যখন তিন দিন থাকবে তখন আপনি কী করবেন? প্রথমেই চমকপ্রদ জায়গাগুলোতে যাবেন৷
প্রথম দিন – কলোসিয়াম
নির্বাচিত জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে কলোসিয়াম৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই অ্যাম্ফিথিয়েটারে ৫০ হাজারের মতো আসন রয়েছে৷ তবে অনেক দর্শনার্থী আসায় আপনাকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হবে৷ তাই আগেভাগেই অনলাইনে টিকেট কিনে নেওয়া ভালো হবে৷
ফোরাম রোমানাম
আপনি কলোসিয়ামের সঙ্গে ফোরাম রোমানামেরও টিকেট কিনে নিতে পারেন৷ রোমের কেন্দ্রস্থলে এই ফোরামেই সিসেরো তার বিচক্ষণ বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং রোমান সম্রাটরা এখানেই বিজয় উদযাপন করতেন৷
প্যান্থিয়ন
একটু বিশ্রাম নিয়ে আপনি হেঁটেই আবার ঘোরা শুরু করতে পারেন৷ কারণ পরবর্তী গন্তব্য খুব দূরে নয়: পিয়াৎসা ডালা ওটোন্ডায় দর্শনীয় গম্বুজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্যান্থিয়ন৷ এটা এক সময় সব রোমানের কাছে পবিত্র স্থান ছিল৷ ষোড়শ শতক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শেষকৃত্য হয় এই গির্জায়৷ প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী রাফায়েল এবং সম্রাট ভিক্টর ইমানুয়েল দ্বিতীয়-এর মতো ব্যক্তিদের শেষকৃত্য এখানেই হয়েছে৷
ট্রেভি ফোয়ারা
প্যান্থিয়ন থেকে হাঁটার দূরত্বে ইতালির সবচেয়ে বিখ্যাত ফোয়ারা ট্রেভি৷ ফেডেরিকো ফেলিনি পরিচালিত ‘লা দলচে ভিটা’ চলচ্চিত্রের শ্যুটিং হয়েছিল এখানে৷ কেউ রোম পছন্দ করলে এবং আবার আসতে চাইলে তিনি একটি কয়েন ঘাড়ের উপর দিয়ে পানিতে ছুঁড়ে ফেলেন৷ প্রচলিত লোক বিশ্বাস অনুযায়ী, এটা আবারও রোম সফরের নিশ্চয়তা দেয়৷
পিয়াৎসা নাভোনা
রোমের অন্যতম সুন্দর স্কয়ারগুলোর একটি পিয়াৎসা নাভোনার কাছেই আমি থাকি৷ প্রায় সন্ধ্যায়ই আমি এখানে পানাহার করতে আসি৷ এখানকার আকর্ষণীয় ফোয়ারা, বারোক চার্চ, দৃষ্টিনন্দন ভবন, রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে নিয়ে যে চমৎকার পরিবেশ, তা মানুষকে বিমোহিত করে৷ আমার মতে, দারুণ একটি টুর শেষ করার জন্য এটাই হতে পারে উত্তম জায়গা৷
দ্বিতীয় দিন – সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা
সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা দিয়ে আপনার নতুন দিনের ঘোরাঘুরি শুরু করতে পারেন৷ প্রাচীন ঐতিহ্যের পাশাপাশি ভ্যাটিকান সিটির জন্যও বিখ্যাত রোম৷ এখানকার সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জাগুলোর অন্যতম, এর ভেতর ও বাইরেটা করা হয়েছে দারুণ নকশায়৷ তবে পর্যটকদের ভিড়ের কারণে এই গির্জা ঘুরে দেখার জন্যও আপনাকে দীর্ঘ লাইন ধরতে হবে৷
কাসেল সেন্ট এঞ্জেলো
ভ্যাটিকানের অন্যতম দর্শনীয় স্থাপনা কাসেল সেন্ট এঞ্জেলো৷ রোমান সম্রাট হাদ্রিয়ানের (বানানভেদে আদ্রিয়ান) সমাধিস্থল হিসেবে এটা দ্বিতীয় শতকে গড়ে তোলা হয়৷ পরে এটা সেনাবাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ এখান থেকে পোপদের বেরিয়ে যাওয়ার গোপন পথ রয়েছে৷ গোলাকৃতির ভবনটি এখন জাতীয় জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷
স্প্যানিশ স্টেপস
স্প্যানিশ স্টেপস ঘিরে রয়েছে ক্যাফে, রেস্তোরাঁ ও ফ্যাশন বুটিকের সমাহার, যেগুলো ব্যারোক স্থাপত্য শৈলী নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে৷ অনেক পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা এখানে আসেন, সিঁড়িতে বসে আড্ডা-আনন্দে সময় পার করেন৷ বিভিন্ন ধরনের শিল্পীরা রাস্তায় পরিবেশনা দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করেন, রাস্তায় নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা৷
তৃতীয় দিন – রোমের ফটক
রোম খুব সুন্দর, কিন্তু শহরটি বেশ ক্লান্ত করে দেয়৷ এখানে প্রায়ই বেশ গরম থাকে, হয় যানজট, থাকে অনেক মানুষের চলাচল৷ তাই আমার পরামর্শ থাকবে শেষ দিনে রোমের ফটকের বাইরে ঘোরাঘুরির৷ আশপাশে অনেক চমৎকার সব জায়গা ও স্থাপনা রয়েছে৷ যেমন ভিয়া আপিয়া অ্যান্টিকা, রোমান সাম্রাজ্যে এটা ছিল ইটালির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুটগুলোর একটি৷
অস্টিয়া অ্যান্টিকা
ট্রেনে চেপে আরামের সঙ্গে আপনি রোমের প্রাচীন বন্দর নগরী অস্টিয়া অ্যান্টিকায় (বানানভেদে আন্টিকা) পৌঁছাতে পারবেন৷ ৫০ হাজার বাসিন্দার এই নগরীতে থার্মাল বাথ, থিয়েটার, মন্দির ও ভবনগুলো বিস্তৃত পরিসর নিয়ে তৈরি৷ সেখানে পর্যটকরা ঝামেলাহীনভাবে খুব শান্তিতে রোমানদের প্রাচীন জগত ঘুরে দেখতে পারবেন৷
সূর্য, সাগর, সৈকত
সাগর ও সৈকতের ছোঁয়া ছাড়া ইটালি ভ্রমণ সম্পূর্ণ হতে পারে না৷ রোম থেকে নয়, অস্টিয়া অ্যান্টিকা থেকে স্বল্প দূরত্বের লিডো ডি অস্টিয়া সৈকত রোমানদের কাছে খুবই জনপ্রিয়৷ এই এলাকা সাধারণত খুব ব্যস্ত থাকে৷ তবে আপনি যদি পছন্দের একটি জায়গার বন্দোবস্ত করতে পারেন তাহলে রোম সফর শেষ করার জন্য এটাই হবে উপযুক্ত জায়গা৷