ঢাকায় আসছে সু চি’র প্রতিনিধি দল
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭সু চি'র প্রতিনিধি দলে মিয়ানমারের মিনিস্টার অব দি অফিস ও স্টেট কাউন্সিলর উ টিন্ট সোয়ে ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী উ কিয়াও থিন থাকতে পারেন৷ রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক বলেছেন, ‘‘প্রতিনিধি দলটি আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে ঢাকা সফরে আসবে৷ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হবে৷’’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ‘‘এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন মিয়ানমার স্টেট কাউন্সিলর অফিসের ইউনিয়ন মন্ত্রী উ টিন্ট সোয়ে৷ তিনি মিয়ানমারের একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং রাখাইন বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত৷ তিনি একজন পেশাদার কূটনীতিক এবং ১০ বছর জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷’’ তিনি আরো জানান, ‘‘গত জুলাই মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন৷ অক্টোবরের ১ বা ২ তারিখে প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় আসছে৷ এই সফর এক বা দুই দিনের হতে পারে৷’’
সবর্শেষ গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাইড লাইনের বৈঠকে মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং টুন রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তাব দেন৷ সব মিলিয়ে এটা এখন নিশ্চিত যে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে ঢাকা-মিয়ানমার বৈঠক হচ্ছে৷
আর গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে সহিংসতা শুরু হলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবার জন্য মিয়ানমার তিন মাস সময় নিয়েছিল৷ জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার সরকার ‘কেউ টিন’ নামে এক বিশেষ দূতকে কোনো ম্যান্ডেট ছাড়াই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ঢাকায় পাঠায়৷ সে বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি৷
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে চার লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে৷ আর আগে থেকেই বাংলাদেশে আরো চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ছিল৷
সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এর চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের এবারের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে৷ কারণ, মিয়ানমার এবার রাখাইনে রোহিঙ্গা জাতিগত নিধন নিয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে৷ অতীতেও অনেক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে তবে তা তেমন কোনো ফল বয়ে আনেনি৷ এবার রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের সহায়তা এবং তাদের মিয়ানমারে ফেরত নেয়া – এই তিন বিষয়ে বৈঠকে বাংলাদেশকে জোর দিতে হবে৷ কোফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ চাপ দিতে হবে বাংলাদেশকে৷ এজন্য আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতাও বাংলাদেশকে অব্যাহত রাখতে হবে৷’’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিল কি দিল না এটা খুব গুরত্বপূর্ণ নয়৷ গুরুত্বপূর্ন হলো তাদের আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসা দেয়া৷ বাংলাদেশ সাধ্যমতো তা করছে৷ আর ইউএনএইচসিআর প্রধানও বলেছেন বাংলাদেশ তাদের শরণার্থী, রাষ্ট্রহীন বা অন্য যে-কোনো নামেই ডাকুক না কেন, রোহিঙ্গাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে৷ আমি মনে করি, বাংলাদেশ তার অবস্থানে ঠিক আছে৷ কারণ, শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো আরো জটিল হবে৷’’
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা মুসলিমদের মিয়ানমার এখন নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না৷ আর বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বলে ‘অনুপ্রবেশকারী’৷
রোহিাঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে জাপান
ঢাকা সফররত জাপানের পার্লামেন্টারি ভাইস মিনিস্টার অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স আইয়াও হরি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাঁর দেশ বাংলাদের পাশে আছে৷ তিনি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷
বুধবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাকিদের এ তথ্য জানান৷
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘‘আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে টেকসই সমাধান চাই৷ আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটা সম্ভব৷ এজন্য আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে জাপান আমাদের পাশে থাকবে৷’’
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...