1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে’

২২ অক্টোবর ২০১৭

শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন, রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে এই অঞ্চলে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটতে পারে৷ আর এটা শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো অঞ্চলের জন্যই হবে ভয়াবহ৷

https://p.dw.com/p/2mJec
Bangladesch Rohingya fliehen aus Myanmar
ছবি: Reuters/Z. Bensemra

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সঙ্গে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের এই নোবেলজয়ী অধ্যাপক রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনেক খোলামেলা কথা বলেন৷ ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশ কীভাবে এ বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে বা কতদিন এভাবে আশ্রয় দিতে পারবে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘এটা শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়৷ এটা রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার বিষয়ও৷ ১০ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে৷ তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে৷ পুরো অঞ্চলটি খুব শিগগিরই সন্ত্রাসবাদের আখড়া হয়ে উঠবে৷'' 

Sahidul Haq.mp3 - MP3-Stereo

তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর নেটওয়ার্কও এখানে কাজ করা শুরু করবে৷ ফলে এটা বাংলাদেশের জন্য তো বটেই, পুরো অঞ্চলের জন্যই হবে ভয়াবহ৷ একসময় সবকিছু মিলিয়ে একটা বিস্ফোরণ হবে৷ আমি বলতে চাই, এসব ঘটার আগেই এ সমস্যা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করতে হবে৷''

হেফাজতে ইসলাম রোহিঙ্গা স্রোত ব্যবহার করছে, তারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিয়েছে৷ আর এই হেফাজত নিয়ে অবস্থান জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না৷ পুরো অঞ্চলই এতে জড়িয়ে পড়বে৷ ভারত ও পাকিস্তানও এতে জড়াবে, সব জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোও এতে জড়াবে৷'' 

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সু চি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন৷ বিশ্বব্যাপী তিনি তাঁর একটি ইমেজ তৈরি করেছেন, সারা বিশ্ব তাকে সম্মান করে৷ কিন্তু এখন তিনি পুরোপুরি উল্টো আচরণ করছেন৷ বিশ্ব এখন তার ভিন্ন রূপ দেখছে৷ নিজ দেশের মানুষের গণহত্যার সাথে নিজের নাম জড়াচ্ছেন সু চি৷''

সু চিকে কতোটুকু দোষ দেওয়া যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তিনি বলতে পারেন, সেনাবাহিনী তাকে চাপে রেখেছে, তাহলে তো তাঁর পদত্যাগ করা উচিত৷ কারণ তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না৷ রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের নাগরিক৷''

যদি সু চির সাথে সরাসরি কথা হয়, তাহলে তাকে কী বলতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘তাকে বলতাম যে আপনার তো একটি অবস্থান নেওয়া উচিত৷ বছরের পর বছর ধরে আপনি আপনার যে ইমেজ তৈরি করেছেন, সেটি রক্ষা করতে হবে৷ আপনি মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার একজন নেত্রী হিসেবে নিজের ইমেজ তৈরি করেছেন৷ এখন এসব নীতি, নৈতিকতার কী হলো?''

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স এটাশে এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল শহীদুল হক ড. ইউনূসের রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেয়া বক্তব্যকে বাস্তবতার প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আগে থেকেই বলে এসেছি এই রোহিঙ্গা সমস্যার যদি দ্রুত সমাধান করা না হয় তাহলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা হুমকির মুখে পড়বে৷ রোহিঙ্গারা এখন জঙ্গি বা অপরাধমূলক কাজের রিক্রুটমেন্টের উর্বর ক্ষেত্র৷ আর এর প্রথম শিকার হবে বাংলাদেশ৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও এর প্রভাব পড়বে৷ কিন্তু তারা কি করল তার দিকে চেয়ে আমাদের বসে থাকলে হবেনা৷ আমাদের কাজ আমাদের করতে হবে৷ কারণ রোহিঙ্গা সমস্যার প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ বাংলাদেশ৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী আগুনে পোড়া সম্পদ ও ঘরবাড়ি রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত হয়৷ মিয়ানমার এখন রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে দেয়া ঘরবাড়ি ফসল জমি রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে৷ তাহলে তারা তাদের ফেরত নিয়ে রাখবে কোথায়? তারা আসলে ফেরত নিতে চায় না৷ আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো শেষ পর্যন্ত প্ল্যান ‘বি' অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রেখেই সহায়তা দিতে চাইবে৷ যদি তাই হয় তাহলে তা বাংলাদেশের জন্য হবে মহাবিপর্যয়ের কারণ৷ তাই বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে৷''