রোজিনাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ
১৮ মে ২০২১ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বেলা সাড়ে ৪টার দিকে রোজিনা ইসলাম বলেন, "সচিবের সাথে দেখা করতে আমি তার একান্ত সচিব সাইফুলের কক্ষে আসি৷ এরপর হঠাৎ করে পুলিশ ডেকে এনে আমাকে এই কক্ষে আটক করা হয়৷”
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করলে আংশিক শুনানি শেষে বিচারক বাকি শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার তারিখ রেখেছেন৷ তার আগ পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে এই সাংবাদিককে৷ মঙ্গলবার সকালে রোজিনাকে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করার পর শুনানি শেষে বিচারক মোহাম্মদ জসীম এই আদেশ দেন৷
সরকারি নথি ‘চুরির চেষ্টার' অভিযোগে সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়৷ রাতে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডিবিধির কয়েকটি ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ৷
সোমবার রাতে রোজিনাকে থানা হাজতে রাখার পর মঙ্গলবার সকালে তাকে আদালতে হাজির করে শাহবাগ থানা পুলিশ৷ এই সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক আরিফুর রহমান সর্দার৷
সাংবাদিক রোজিনার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি ও আশরাফ উল আলম৷ শুনানিতে এহসানুল হক সমাজি বলেন, "পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকের উপর এ ধরনের দুঃখজনক আচরণ করা হয়েছে৷ মামলায় যা বলা হয়েছে তার আদৌ কোনো যৌক্তিকতা নেই৷ এ সংবাদগুলো টপ সিক্রেট নয়, বরং ওপেন সিক্রেট৷ কিন্তু তাকে গ্রেপ্তারের নামে মেন্টালি ও ফিজিক্যালি অ্যাবিউজ করা হয়েছে৷” আইনজীবী আশরাফ উল আলম বলেন, "এখানে সাহিত্যিক আনিসুল হক ( প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ) উপস্থিত আছেন, তিনি জামিনদার থাকবেন৷ আমরা জামিন চাই৷”
বিচারক বলেন, "এখানে রিমান্ড বাতিল করা ও জামিন একই দিনে দেওয়ার রেওয়াজ আমাদের নেই৷ আপনারা সামনের দিনে জামিন চান৷ ভার্চুয়াল কোর্ট হবে, ওই বিচারক দেখবেন বিষয়টি৷”
পরে বিচারক আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে বৃহস্পতিবার জামিন শুনানির দিন ঠিক করেন বলে আশরাফ উল আলম জানান৷
যা ঘটেছিল
সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা সোমবার বিকালে রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে ছুটে যান৷ যে কক্ষে তাকে রাখা হয়েছিল, ছয়জন নারী পুলিশ সদস্য সেখানে ছিলেন এবং কক্ষের বাইরে ছিলেন আরো কয়েকজন পুলিশ সদস্য৷ ঘটনা জানতে উপস্থিত সাংবাদিকরা সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সাথে কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন৷
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বেলা সাড়ে ৪টার দিকে রোজিনা ইসলাম বলেন, "সচিবের সাথে দেখা করতে আমি তার একান্ত সচিব সাইফুলের কক্ষে আসি৷ এরপর হঠাৎ করে পুলিশ ডেকে এনে আমাকে এই কক্ষে আটক করা হয়৷” আটকের পর দেহ তল্লাশি করা হয়েছে জানিয়ে এই সাংবাদিক বলেন, "মিজান নামে এক পুলিশ সদস্য আমাকে নাজেহাল করেছে৷ এ দপ্তর থেকে কোনো ধরনের নথি আমি নিইনি৷”
রোজিনাকে আটক করার কারণ জানতে চাওয়া হলে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম রাত ৯টার দিকে প্রধান সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগের বিষয়গুলো তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, "সচিবের পিএসের রুমে ঢুকে রোজিনা ইসলাম মোবাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল-নথির ছবি তোলেন৷ আর কিছু কাগজপত্র তিনি সাথে নিয়ে যাচ্ছিলেন৷”
"একজন অতিরিক্ত সচিব, পুলিশের একজন সদস্য দেখে তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, এটা তিনি নিয়ে যেতে পারেন না৷ পরে পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে যায়৷”
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)