রোবট যখন কারখানায় আপনার সহকর্মী
১০ জানুয়ারি ২০১৭আজকের শিক্ষানবিশদের একদিকে হাতের কাজ শিখতে হয়, অন্যদিকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তিও আয়ত্ত করতে হয়৷ রোবট-এর নিয়ন্ত্রণ ও তার প্রোগ্রামিং শেখা যেমন প্রয়োজন, যন্ত্র দিয়ে প্রয়োজনমতো ধাতু রূপান্তর করার কাজও জানতে হয়৷
‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০' গড়ে তোলার কাজে শামিল হতে পেরে টোবিয়াস খুশি৷ মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার কাজের অংশ হয়ে আলিনা-ও আপ্লুত৷ টোবিয়াস ভেবার ও আলিনা হাইব জার্মানির গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী ‘বশ' কোম্পানিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন দুই তরুণ-তরুণী৷
অনেক যন্ত্রের সঙ্গে ‘অগমেন্টেড রিয়ালটি' সফটওয়্যার যুক্ত করা হয়েছে৷ ফলে দুই শিক্ষানবিশ ভার্চুয়াল জগতেই কাজের ধাপগুলি সম্পর্কে জানতে পারছেন৷ তাঁদের কাজ ঠিক না ভুল হচ্ছে, মনিটরেই তা দেখা যাচ্ছে৷
এখনো প্রশিক্ষকরা সঙ্গেই থাকছেন বটে, কিন্তু পরে একাই সব কিছু সামলাতে হবে৷ আলিনা হাইব বলেন, ‘‘ছবি দেখে বোঝা যায় কী করতে হবে৷ তাই আমার কাছে এটা বেশি সহজ লাগে৷ আগে হলে কেউ এখানে এসে বোঝাতো, কী করতে হবে অথবা নির্দেশিকা ধরিয়ে দিতো৷''
শিল্পক্ষেত্রে আধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে ডিজিটাল হয়ে পড়ছে৷ এই প্রক্রিয়ার পোশাকি নাম ‘ডিজাটাল ফোর পয়েন্ট জিরো'৷ অর্থাৎ সবকিছু নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত৷ রোবটরা আরও জটিল প্রক্রিয়ার দায়িত্ব নিচ্ছে৷ তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা না থাকলে ভবিষ্যতে কাজ করা কঠিন হবে৷
টোবিয়াস ভেবার প্রযুক্তিকে ভয় পান না৷ প্রশিক্ষণের তৃতীয় বছরে তিনি হালের প্রজন্মের রোবট নিয়ে কাজ করছেন৷ এগুলি আর আগের মতো খাঁচা বা কাচের আড়ালে লুকানো নেই, মানুষের মতোই চারিদিকে দিব্যি চলেফিরে বেড়াচ্ছে৷ সেন্সরের সাহায্যে তারা সহকর্মীদের সামনে প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০' প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সিমন হ্যুলকে বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি মোবাইল, স্মার্টফোন আর ট্যাবলেট ব্যবহার করে বড় হয়েছে, তার মধ্যে রোবট চালানোর সহজাত প্রবৃত্তি থাকার কথা৷ অর্থাৎ আইপ্যাড চালাতে পারলে এখানেও নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হবে না৷ দু'টোরই একই ভিত্তি৷''
ওয়ার্কশপে দুই শিক্ষানবিশের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য এক রোবট রয়েছে৷ সেটি প্রোগ্রাম করে হাতেনাতে ফল দেখা যায়৷ কারণ কোনো এক সময়ে রোবট সহকর্মী হয়ে উঠবে৷ টোবিয়াস ভেবার বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে যন্ত্র অনেক স্বাবলম্বী হবে ও অনেক জায়গায় যেতে পারবে৷ এক জায়গায় গুটিয়ে নিয়ে অন্য জায়গায় গড়ে তোলা যাবে৷ কাজ আরও রোমাঞ্চকর হয়ে উঠবে৷''
বশ-এর মতো আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলি ভবিষ্যতের কর্মীদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷ যেমন স্মার্ট গ্লাস ব্যবহার করছেন তাঁরা৷ অন্যদিকে সাধারণ ভোকেশানাল স্কুল তাদের পুরানো পাঠক্রম নিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে৷ কোম্পানিগুলির জন্য এটা বড় সমস্যা৷ বশ কোম্পানির প্রশিক্ষণ প্রধান আন্ড্রেয়াস নস বলেন, ‘‘আজই আমাদের চাহিদা রয়েছে৷ সেই চাহিদা অনুযায়ী পাঠক্রম স্থির হতে সময় লাগবে৷ এটাই একমাত্র অসুবিধা৷ কিন্তু এখন হাত গুটিয়ে বসে থেকে কোনো লাভ নেই৷ এটা কোনো ভালো প্রক্রিয়া নয়৷''
শুধু কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ নিয়েও কোনো লাভ নেই৷ আলিনা হাইব-কে হাতের কাজও শিখতে হয়৷ ধাতু নিয়ে কাজ করতে হলে লেদ মেশিন চালাতে হয়৷ ‘ফোর পয়েন্ট জিরো' জমানায় শিক্ষানবিশকে একাধারে টিকনিশিয়ান, মিস্ত্রী ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হতে হবে৷
ক্লাউডিয়া লাসচাক/এসবি