রোববার থেকে ফের দুই দিনের টানা অবরোধ
২ নভেম্বর ২০২৩এর আগে ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষ হবে শুক্রবার সকাল ছয়টায়। শনিবার কোনো কর্মসূচি রাখেনি বিএনপি। শুক্রবার জুমার নামাজের পর তাদের চলমান আন্দোলনে নিহত এবং আহতদের জন্য দোয়া ও মোনাজাতের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে।
বিএনপি মনে করছে এখন তাদের আর পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের আগ পর্যন্ত তাদের নভেম্বরের আগে কোনো কঠোর কর্মসূচির পরিকল্পনা ছিল না। পরিস্থিতির কারণে তারা পরের দিন রোববার সকাল সন্ধ্যা হরতাল দেয়। এরপর একদিন বিরতি দিয়ে তারা মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার ৭২ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় তারা আবারও ৪৮ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচি দিল। বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত তারা এভাবেই টানা কর্মসূচিতে থাকবেন। কারণ এখন ‘নরম' কোনো কর্মসূচি দিলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়তে পারেন। তারা মনে করতে পারেন যে গ্রেপ্তার , আটকের মুখে দল নরম হয়ে গেছে। নেতারা ভয় পেয়েছেন। তাই তারা সভা-সমাবেশ বা গণমিছিলের মতো নরম কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছেন না।
নির্বাচনের তফসিল যদি শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করা হয় তাহলেও তারা একই ধরনের কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বিএনপির তৃণমূল এবং বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা মনে করেন, দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা কারাগারে থাকলেও আন্দোলন চালিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হবেনা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাইরে থাকা নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করে আান্দোলন এগিয়ে নিচ্ছেন। মূলত আন্দোলনের কর্মসূচি এখন তিনিই ঠিক করে দিচ্ছেন। তবে নেতারা যারা বাইরে আছেন তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলে হুদা বাবুল বলেন, "এখন পর্যন্ত আন্দোলন সমন্বয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বিভিন্ন পর্যায়ে সমন্বয়কারী আগেই ঠিক করা আছে। আর নেতাদের যতদূর সম্ভব গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। কিন্তু কেউ গ্রেপ্তার হলে তারপর কে দায়িত্ব পালন করবেন তা আগে থেকেই ঠিক করা আছে। আর বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক নেতা আছেন। পুলিশ কত জনকে গ্রেপ্তার করবে?” তার কথা," এখন তৃণমূলও কঠোর আন্দোলন চায়। আমরা ধারবাহিক কঠোর আন্দোলনই আশা করছি।”
বিএনপির এক নেতা বলেন, আমরা মনে করি আমাদের হরতাল ও অবরোধ সফল হয়েছে। যতই বাধা ও পুলিশের তৎপরতা থাকুক না কেন আমাদের নেতা-কর্মীরা আমাদের কৌশল মতো মাঠে আছেন। তারা মিছিল পিকেটিং করছেন। তবে আমরা সব শক্তি একবারে ব্যবহার করছি না। কারণ আমরা মনে করি এই চূড়ান্ত কঠোর আন্দোলন আমাদের হয়তোবা কয়েক মাস ধরে চালিয়ে যেতে হতে পারে। তাই আমরা শক্তি ব্যবহারেও কৌশল অবলম্বন করছি।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, "সরকার যে এরকম দমন পীড়ন চালাতে পারে সেই আশঙ্কা আমাদের আগেই ছিলো। সেই কারণেই আমাদের ওই পরিস্থিতিতে কীভাবে দল ও আন্দোলন চলবে তার পরিকল্পনা করা ছিলো। আমরা এখন সেভাবেই এগোচ্ছি।”
তার কথা,"সরকার যা করে করুক আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। একটার পর একটা কর্মসূচি আসবে। আমরা কোনোভাবেই এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। এই সরকার পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা মনে করি আমাদের হরতাল অবরোধ সফল হচ্ছে। মানুষ সাড়া দিচ্ছে। আর সংঘাত সহিংসতার দায় সরকারের। তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য এসব করছে।”
রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, অবরোধ চলাকালে গত ২৪ ঘন্টায় তাদের ২৭২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৬টি মামলা হয়েছে এবং এক হাজার ৩৫৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৪০ জন। বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকে এ পর্যন্ত মোট চার হাজার ৫৫৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৯৮টি। আহত হয়েছেন তিন হাজার ৪৭৬ জন। নিহত হয়েছেন একজন সাংবাদিকসহ ৯ জন।
অবরোধের তৃতীয় দিনে বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় গাড়ি ভাঙচুর এবং আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জে দুইটি বাসে আগুন দেয়ার পর পুলিশ গুলি ছুঁড়ে।