রোমক সাম্রাজ্যের পতনও জলবায়ুর পরিবর্তন থেকে, বলছেন বিজ্ঞানীরা
১৪ জানুয়ারি ২০১১বয়সের সঙ্গে সঙ্গে গাছ শুধু উচ্চতাতেই বাড়ে না, বাড়ে পরিধিতে৷ গাছের গুঁড়ি কাটলে দেখা যায় গুঁড়িটা কতোগুলো বৃত্তাকার স্তরের সমষ্টি: প্রতিবছর গাছটি একটি করে বৃত্ত যোগ করেছে৷ আবার সেই বৃত্ত কতোটা পুরু, তার উপর নির্ভর করবে গাছটা সে'বছর ভালো ছিল না খারাপ ছিল৷ অর্থাৎ গাছ, কিংবা সেই গাছের কাঠই আমাদের বলে দিতে পারে, সুদূর অতীতের কোনো এক বছরে পৃথিবীর কোন কোণে জল-বায়ু কেমন ছিল৷
জার্মানি, অস্ট্রিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা এই সহজ তত্ত্বটিকেই তাঁদের অস্ত্র করেছেন৷ তবে তারা এযাবৎ যে সব পুরনো কাঠ এবং কাঠের গুঁড়ি পরীক্ষা করা হয়েছিল, তার চেয়ে আরো এক হাজার বছর অতীতে ফেরত গেছেন৷ অর্থাৎ ইউরোপের গত আড়াই হাজার বছরের অতীত, জলবায়ুর দৃষ্টিকোণ থেকে৷
মধ্য ইউরোপের ওক এবং পাইন গাছগুলোর বৃদ্ধি পরীক্ষা করে তাঁরা দেখেছেন, উষ্ণ এবং আর্দ্র গ্রীষ্মে গাছের গুঁড়ির পরিধিও বেড়েছে সেই পরিমাণে৷ কৃষিজীবীদের সমাজে এগুলো ছিল সমৃদ্ধির সময়, যেমন রোমক সাম্রাজ্য যখন তুঙ্গে, অথবা মধ্যযুগে৷ - আবার জলবায়ু যখন স্থিতিশীল নয়, ঠিক এমন সময়ে রোমক সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে, যেমন তৃতীয় থেকে সপ্তম শতাব্দীতে৷ চতুর্দশ শতাব্দীতে ইউরোপে যে ব্যুবোনিক প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল, সেটাও ছিল সম্ভবত ঐ জলবায়ুর স্থিতিহীনতার কারণে৷ প্লেগ নাকি ভেজা, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশেই বেশী ছড়ায়৷ আবার সপ্তদশ শতাব্দীটা ছিল অতি ঠাণ্ডা: কে জানে, সেজন্যই হয়তো ইউরোপীয়দের মধ্যে সে আমলে আমেরিকায় পালানোর প্রবণতা দেখা দিয়েছিল৷
কাজেই বিজ্ঞানীদের সাবধানবাণী হল, একবিংশ শতাব্দীতেও জলবায়ুর পরিবর্তনকে উপেক্ষা করার প্রতিফল হবে, তার ফলে চলতি অথবা নিহিত রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটগুলি আরো গুরুতর হয়ে দাঁড়াবে৷ তাছাড়া আধুনিক বিশ্বে সপ্তদশ শতাব্দীর মতো অভিবাসনও সম্ভব হবে না৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: সাগর সরওয়ার