আইসিসির চিঠির জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ
৮ জুন ২০১৮চিঠি পাঠানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ যেহেতু রোম সংবিধিতে সই করেছে, সেহেতু আইসিসির চিঠির জবাব দেওয়ার এক ধরনের বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের ছিল৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যেসব তথ্য চেয়েছে, আমরা কেবল সেগুলোই তাদের দিয়েছি৷’’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এখনও মনে করে, মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই এ সংকটের সমাধান সম্ভব৷’’
এর আগে এ বছরের মে মাসে রোহিঙ্গা নিপীড়ণ নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করা যায় কি না, সে বিষয়ে বাংলাদেশের মতামত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)৷
গত এপ্রিলে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের ঘটনায় বিচারের এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আছে কি না তা জানতে চেয়ে হেগের আইসিসি কৌঁসুলি ফাতোও বেনসুদা একটি আবেদন করেন৷
এর ভিত্তিতে আইসিসির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার ১ চিঠিতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে বা গোপনে তিনটি বিষয়ে মতামত দিতে অনুরোধ করে৷
এগুলো হলো, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ সীমান্তে আসার সময়ের পরিবেশ, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পাঠানো নিয়ে কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রসিকিউটরের আবেদনে উল্লেখিত বিষয়গুলোর মধ্যে কোনোটির বিষয়ে দক্ষ বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের মতামত, যা আবেদন বিবেচনায় চেম্বারকে সহায়তা করবে৷
ওই আবেদন বিচার প্রক্রিয়ায় যাবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের মতামত সহায়তা করবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতবছর নিউ ইয়র্কে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সে বিষয়গুলো এখনও আলোচনায় আছে৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা এ বিষয়ে আন্তরিক৷’’
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য হলেও মিয়ানামার সদস্য নয়৷ ফলে কৌঁসুলি ফাতোও বেনসুদা আইসিসির বিচারিক এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন৷ আইসিসি বিষয়টি বিচারের এখতিয়ার রাখে বলে রুল পাওয়া গেলে রোহিঙ্গা বিতাড়নের বিষয়ে তদন্ত করার পথ তৈরি হবে বলে বেনসুদা এরইমধ্যে আশা প্রকাশ করেছেন৷
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তারা অবশ্য এর আগে বলেছিলেন, সুদানের দার্ফুরের ঘটনায় ওমর আল-বশির এবং লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিচার আইসিসিতে করার নজির বাংলাদেশ হয়ত চিঠিতে তুলে ধরতে পারে৷ সিরিয়া ও লিবিয়া আইসিসির সদস্য না হলেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশে হেগের আদালতে ওই দুটি বিচার পরিচালনা করে৷
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যে গতবছর ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷
জাতিসংঘ একে বর্ণনা করে আসছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে৷ আন্তর্জাতিক আইনে দেশান্তরে বাধ্য করার বিষয়টি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মধ্যে পড়ে৷
এর আগে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতীকী বিচারের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হলেও ফাতোও বেনসুদাই প্রথম আন্তর্জাতিক আদালতে বিষয়টি তোলার চেষ্টা করেন৷ তিনি এ বিষয়ে শুনানি করতে আদালতের কাছে আবেদন করেন৷ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষ ও অগ্রহীদেরও সেই শুনানিতে রাখতে অনুরোধ করেন৷
বাংলাদেশ আইসিসিতে মিয়ানমারের বিচারের পক্ষে মত দিয়েছে কি না সেই প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো উত্তর না দিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘‘আইসিসি যেসব তথ্য চেয়েছে, আর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা যা যা জানি, তার সবই আমরা তাদের জানিয়েছি৷’’
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র৷ আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়ম মেনেই বাংলাদেশ সব কিছু করে৷’’
এইচআই/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)