1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা ইস্যুতে নোবেলজয়ীরা

আসমা মিতা
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ও কট্টরপন্থি বৌদ্ধরা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে ওঠে গত অক্টোবর থেকে৷ সহিংসতার মুখে সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৪ লাখ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷

https://p.dw.com/p/2jyyr
ছবি: picture-alliance/ZumaPress

রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়ন বন্ধে ব্যর্থতার জন্য শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চির সমালোচনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে৷ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও সু চি সমালোচনার মুখে পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

এই আলোচনা-সমালোচনা এখন আর কেবল রাজনৈতিক অঙ্গনের বিষয়বস্তু নয়৷ রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রত্যাশিতভাবেই শান্তির দূতরাও মুখ খুলতে শুরু করেছেন৷ তাঁদের কারও কারও কঠোর অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার৷ আবার অনেকেই এ ব্যাপারে রহস্যজনকভাবে একেবারেই মুখ খুলছেন না সেটাও সত্য৷ এক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো, নোবেলজয়ীদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠজনই সাহস দেখিয়েছেন সবার আগে৷ মালালা ইউসুফজাইয়ের পর একে একে ডেসমণ্ড টুটু, ড.মুহাম্মদ ইউনুসসহ অনেকে বিবৃতি দিতে শুরু করেন৷ 

এখন পর্যন্ত ১৩ নোবেল জয়ী এবং আরও ১৯ জন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব রোহিঙ্গা ইস্যুতে অং সান সু চির সমালোচনা করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের কাছে বিবৃতি পাঠিয়েছে৷ বিবৃতিতে স্বাক্ষদানকারী নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ীদের মধ্যে আছেন, পূর্ব তিমুরের হোসে রামোস হোর্তা, উত্তর আয়ারল্যাণ্ডের মেইরিড মগুইয়ের, দক্ষিণ আফ্রিকার ধর্মযাজক ডেসমন্ড টুটু, কোস্টারিকার অস্কার আরিয়াস, ইরানের শিরিন এবাদি, বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাইসহ বেশ কয়েকজন৷

‘মানবতা যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে এই রকম একটা দেশের নেতৃত্বে ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক একজন ব্যক্তির থাকা এখন খুবই বেমানান’
‘মানবতা যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে এই রকম একটা দেশের নেতৃত্বে ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক একজন ব্যক্তির থাকা বেমানান’ছবি: picture-alliance/dpa/D. Reinhardt

সংকট সমাধানে শান্তিতে নোবেলজয়ী কয়েকজনের প্রতিক্রিয়া এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো

ডেসমন্ড টুটু

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সরকারের আচরণ নিয়ে নীরব ভূমিকায় থাকা দেশটির সরকারপ্রধান ও শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সাং সু চির সমালোচনা করেছেন আরেক নোবেল জয়ী ডেসমন্ড টুটু৷ সরকারের আচরণে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে হস্তক্ষেপ করতে সুচিকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান দক্ষিণ আফ্রিকার এই এমিরেটাস ধর্মযাজক৷

৭ সেপ্টেম্বর প্রিটোরিয়ায় নিযুক্ত মিয়ানমার দূতাবাসের মাধ্যমে সূচিকে দেয়া এক খোলা চিঠির মাধ্যমে এই আহ্বান জানান তিনি৷ চিঠিতে তিনি সু চিকে অত্যন্ত প্রিয় বোন হিসেবে উল্লেখ করেন৷ বলেন, ‘‘আমার ডেস্কে তোমার একটি ছবি থাকত আর সেই ছবির দিকে তাকিয়ে সব সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথাই ভাবতাম সব সময়৷''

রোহিংঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘‘নীরবতাই যদি মিয়ানমারের সর্বোচ্চ কার্যালয়ে যাওয়ার রাজনৈতিক মূল্য হয় তাহলে এই মূল্য সত্যিই খুব চড়া৷''

‘‘রোহিঙ্গাদের দুঃখ-কষ্ট সবার মনে যন্ত্রণা আর ভয় ধরিয়ে দিয়েছে৷ মানবতা যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে এই রকম একটা দেশের নেতৃত্বে ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক একজন ব্যক্তির থাকা এখন খুবই বেমানান৷''

‘‘এ সব ভয়ংকর চিত্র আসার সঙ্গে সঙ্গে আপনার জন্যও প্রার্থনা করছি, আপনি আবার ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও মানুষের মত্যৈক্য তৈরিতে কাজ করুন, হয়ে উঠুন স্পষ্টভাষী৷''

মালালা ইউসুফজাই

শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন৷ একইসঙ্গে তিনি রোহিঙ্গাদের পক্ষে মুখ খোলার জন্য মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানান৷

বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মানবাধিকারকর্মী মালালা বলেন, ‘‘হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, এ অবস্থায় আমরা চুপ থাকতে পারি না৷''

মালালা বলেন, ‘‘এটি মানবাধিকার ইস্যু৷ সরকারের উচিত প্রতিক্রিয়া দেখানো৷ জনগণ ঘরহারা হচ্ছে৷ সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে৷ শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকে৷ সহিংস অবস্থার মধ্যে তাদের বাস করতে হচ্ছে৷ এমন সহিংস অবস্থার মধ্যে বাস করাটা খুবই কঠিন৷ আমাদের উচিত এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং আমি আশা করব, অং সান সু চিও সাড়া দেবেন৷''

৩ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে এক টুইটে মালালা বলেন, ‘‘মুসলমানদের ওপর ওই অমানবিকতা হৃদয়বিদারক৷ মিয়ানমারের শিশুদের ছবি আমি দেখেছি৷ এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হয় না৷''

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমস্যা দূর করতে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে খোলা চিঠি দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ও সদস্যদের উদ্দেশে ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘মিয়ানমারের রাখাইন এলাকায় মানবিক ট্রাজেডি ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ভয়ংকর রূপ নিয়েছে৷ এ ব্যাপারে অবিলম্বে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন৷'

ড. মুহাম্মদ ইউনূস চিঠিতে জাতিসংঘের উদ্দেশে বলেন, ‘‘গত বছরের শেষে পরিস্থিতির বেশ অবনতি হলে বেশ কয়েকজন নোবেলজয়ী ও বিশ্বের বিশিষ্ট নাগরিকসহ আমি এ বিষয়ে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আপনাদের নিকট যৌথভাবে অনুরোধ জানিয়েছিলাম৷ আপনাদের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি৷''

রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে জাতিসংঘকে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস চিঠিতে বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার ২০১৬ সালে যে রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশন গঠন করেছিল, তার সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারকে উদ্বুদ্ধ করতে আপনারা জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন৷ এ জন্য আমার বিশেষ অনুরোধ৷''

সম্প্রতি টিআরটি ওয়ার্ল্ড নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারেও একই সুরে কথা বলেন তিনি৷

বারাক ওবামা

পরপর দুই মেয়াদে থাকা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শান্তিতে নোবেলজয়ীও বটে৷ শাসনকালে তো বটেই এখনও দুনিয়াব্যাপী তার ভক্ত অনুসারীর অভাব নেই৷ তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখনও পর্যন্ত মুখে একেবারে কলুপ এঁটেছেন শান্তির এই দূত৷

কোফি আনান

গত অক্টোবরে রাখাইন রাজ্যের সীমান্তে সন্ত্রাসী হামলার জেরে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করলে ডিসেম্বরে কোফি আনান মিয়ানমার সফর করেন৷ তিনি রাখাইন রাজ্যের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখার পাশাপাশি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিন কিউ, সশস্ত্র বাহিনীপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লায়েং ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির সঙ্গেও বৈঠক করেন৷

রাখাইন রাজ্যের জনগণের কল্যাণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ তৈরির জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি গত বছর জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানকে প্রধান করে ওই পরামর্শক কমিটি গঠন করেন৷

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারকে পরিচয় যাচাইয়ে একটি সমন্বিত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয় সেই কমিশন৷ এছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়াসহ দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে একটি যৌথ কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করা হয়৷ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া ও তাঁদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদের অবাধে রাখাইন এলাকায় যাওয়ার জন্যও সুপারিশ করে কমিশন৷

তবে এখনও ওই কমিশন গঠনের বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি মিয়ানমার৷

নোবেলজয়ী কোফি আনান এখন পর্যন্ত এই কমিশন নিয়ে কাজ করলেও এর বাইরে কোন মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া দেখাননি৷

শিরিন এবাদি

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া বিশেষ ব্যক্তিদের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন তিনি৷ এছাড়া সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শিরিন শান্তিতে নোবেলজয়ী আরেক ‘ফেলো' সু চির কঠোর সমালোচনা করেন৷ বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টিকে অবহেলা করছেন সু চি৷ তারপরও আমি বলবো, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য তিনি যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন৷''

নোবেল বিজয়ীদের বক্তব্য প্রসঙ্গে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান