রোহিঙ্গা ক্যাম্পের টুকরো স্বস্তি ‘সৌর বিদ্যুৎ'
২০ অক্টোবর ২০১৭ক্যাম্পে তীব্র গরমসহ নানা অসুবিধার মধ্যেও এই সৌরবিদ্যুৎ তাঁদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয়৷ নিজ নিজ অংশ কিছুটা সময়ের জন্য হলেও আলোকিত করা সম্ভব হয়, ব্যবহার করা যায় ফ্যান, বিশেষ করে মোবাইল ফোন বা অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চার্জ দিতে পারা অনেকটাই স্বস্তি এনে দেয় তাদের জীবনে৷
মিয়ানমারে জাতিগত নিধন শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা যে মূল্যবান বস্তুটি সাথে করে নিয়ে এসেছেন, তা হলো সোলার প্যানেল৷ আবার অনেক রোহিঙ্গা তাঁদের সাধ্যের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের দোকানদারদের কাছ থেকে কিনে নেন সোলার প্যানেল৷
মিয়ানমারে চিংড়ি ঘেরে কাজ করতেন ৪৬ বছর বয়সি কবির আহমেদ৷ এ বছরের আগস্টে প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন তিনি৷ বালুখালি ক্যাম্পে ঢোকার মুখেই তাঁর অস্থায়ী মুদি দোকানটিও আলোকিত সোলার প্যানেলের সাহায্যে৷ ‘‘এখন রাতের বেলায় আমরা আলো জ্বালাতে পারি আর খুব গরমের সময় ফ্যানের বাতাস আমাদের অনেক স্বস্তি দেয়৷'' কবির আহমেদের ছেলে জানায়, ক্যাম্পে সৌরবিদ্যুৎই ভরসা৷ তবে পালিয়ে আসার সময় তাঁরা সেখানকার সোলার প্যানেলটা নিয়ে আসতে পারেননি, এখন যেটা ব্যবহার করছেন সেটা তাঁরা বাংলাদেশ থেকেই কিনেছেন বলে জানান৷ কাছের বাজারে ৩০ টাকা দিয়ে মোবাইল চার্জের ব্যবস্থা আছে বলেও জানান তাঁরা৷ অবশ্য বেশিরভাগ রোহিঙ্গারই সে সামর্থ্য নেই৷
যেহেতু ক্যাম্পে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই, সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের একটা বড় অংশই সোলার প্যানেল ব্যবহার করে৷ রান্নার জন্য তাঁরা ব্যবহার করেন কাঠ৷
কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম তাঁর ছোট সোলার প্যানেলটাকে সরু পথের উপর একটা ইটের উপর বসিয়েছেন, যাতে যতটা সম্ভব বেশি সূর্যের আলো পাওয়া যায়৷ ভেতরে একটা ছোট ব্যাটারির সাথে সোলার প্যানেলটি সংযুক্ত, যা দিয়ে একটা লাইট জ্বালানো আর মোবাইল চার্জ দেয়া সম্ভব হয়৷ গত মাসের শুরুর দিকে ৩০ বছর বয়সি আনোয়ারা বেগম বাংলাদেশে আসেন৷ তিনি জানান, সোলার প্যানেল থাকায় সাড়ে পাঁচটার সময় সূর্য অস্ত গেলেও এখন আর অন্ধকারে বসে রাতের খাবার খেতে হয় না৷
মিয়ানমারের উত্তরে অনুন্নত এক অংশে মূল জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বাস করতো রোহিঙ্গারা, যেখানে অনেক মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাবের পাশাপাশি ছিল না কোনো বিদ্যুতের ব্যবস্থাও৷ রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমার সরকার তাঁদের অবৈধ মনে করতো, ফলে দেশের যে অংশে তাঁরা থাকতন, সেখানে কোনো রকম বিনিয়োগই করা হয়নি৷ যদিও কেবল রোহিঙ্গারা নয়, মিয়ানমারের ৫০ ভাগ মানুষই বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত৷
জাতিসংঘের হিসাব মতে, বাংলাদেশে আগস্ট থেকে প্রায় ৫ লক্ষ ৮২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷
আরএন/এসিবি (এফপি)