রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প সরানো নিয়ে বিতর্ক
১৫ জুন ২০১৫জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর মতে, বর্ষা মৌসুমে কয়েক ফুট পানির নীচে তলিয়ে যায় নোয়াখালীর হাতিয়ার ঠ্যাঙ্গার চর৷ কোনো বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থাই নেই দ্বীপে৷ আর এ অবস্থায় পর্যটন ব্যবসার ক্ষতি করছে এমন অজুহাত তুলে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার যে পরিকল্পনা করছে তা উদ্বেগের৷ তাদের মতে, ওই দ্বীপে কক্সবাজার থেকে তালিকাভুক্ত ৩২ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থানান্তর ও পুনর্বাসন বাস্তবভিত্তিক নয়৷
এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের মিয়ানমার শরণার্থী বিষয়ক সেলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব অমিত কুমার বাউল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হাতিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে৷'' তিনি জানান, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার৷ সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর কারণে পর্যটন শিল্পের ক্ষতি হচ্ছে৷ ক্যাম্পগুলো সরিয়ে নেওয়ার পর সেখানে হোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে৷''
বাংলাদেশ সরকারকে এ পরিকল্পনা বাতিল করার অনুরোধ জানিয়েছেন মোহাম্মদ ইসলাম নামে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক নেতা৷ তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন,‘‘বাংলাদেশ সরকারের এমন পদক্ষেপে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে৷'' তাই কক্সবাজারে ক্যাম্প রেখেই বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
হাতিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. মঈনুদ্দীন এর আগে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছিলেন, ‘‘হাতিয়ার পূর্ব দিকের ঠ্যাঙ্গার চরে কোনো জনবসতি নেই৷ সেখানে বন বিভাগের ১২ হাজার একর জমি রয়েছে৷ সেই জমি থেকেই ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে নোয়াখালী জেলা প্রশাসন৷''
‘‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, জরিপ করে ওই চরের জমি বন বিভাগের কাছ থেকে নিতে হবে৷ তবে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছুটা সময় লাগবে৷''
তিনি জানান, ‘‘জায়গাটি হাতিয়া উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরের পথ৷ আমি জায়গা পরিদর্শন করেছি৷ এখানে কোনো মানুষের বসতি এখন নেই৷'' আর নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস সোমবার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘১২ হাজার একর জমির মধ্যে যে ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যায় বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়৷ আশেপাশের এলাকা তলিয়ে যায়৷''
তিনি বলেন, ‘‘সরকার এখনো উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করেনি৷ শুরু করলে বোঝা যাবে আসলে ঠ্যাঙ্গার চরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কেমন হবে৷ নিশ্চয়ই সেখানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হবে৷'' তাঁর মতে, ‘‘পুরো নোয়াখালী এলাকাই বন্যাপ্রবণ৷ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে বন্যার পানি ঠোকানো হয়৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছি মাত্র৷ সরকার শেষ পর্যন্ত ঠ্যাঙ্গার চরে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প স্থানান্তর করবে কিনা – সে সিদ্ধান্ত আমরা এখনো জানি না৷''
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে ৩২ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন৷ এর বাইরে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে বলে সরকারের হিসাব বলছে৷
মিয়ানমারে জাতিগত ও রাজনৈতিক কারণে নিপীড়নের শিকার মুসলিম রোহিঙ্গারা দুই দশক আগে ব্যাপক হারে বাংলাদেশে ঢোকা শুরু করে৷ এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে দীর্ঘ দিন ধরে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার৷
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজের দেশের নাগরিক হিসেবেও মানতে নারাজ৷ এ নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপও উপেক্ষা করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে৷
২০১২ সালে মিয়ানমারে নতুন করে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হলে সীমান্তে রোহিঙ্গাদের চাপ বাড়লেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ নতুন করে কাউকে ঢুকতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷
১৯৯১ সাল থেকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর৷