রোহিঙ্গাদের বেদনায় বেদনার্ত তিন নোবেলজয়ী নারী
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮তিন নোবেলজয়ী নারী ইরানের বিজয়ী শিরিন এবাদি, আয়ারল্যান্ডের মারেইড ম্যাগুয়ার এবং ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান রবি ও সোমবার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন৷ রবিবার বিকেলে তাঁরা উখিয়ার কুতুপালং রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন৷ পরিদর্শনের পর মারেইড ম্যাগুয়ার ও তাওয়াক্কুল কারমান কথা বলতে গিয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন৷ তাঁরা অং সাং সুচির নীরবতার সমালোচনা করে তাঁকেও রোহিঙ্গা নির্যাতনের জন্য প্রকারান্তরে দায়ী করে বলেন, ‘‘বোন, আপনিও এর শিকার হতে পারে৷’’
সোমবার তাঁরা উখিয়ার বালুখালী, থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান৷ ক্যাম্পের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছেন তাঁরা৷ নারী শরণার্থীদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন৷ এর আগে সকালে কক্সবাজারে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অফিসে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা৷ নোবেলজয়ী এই তিন নারী সোমবার সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেন আলাদা আলাদাভাবে৷
আয়ারল্যান্ডের নোবেলজয়ী মারেইড ম্যাগুয়ার বলেন, ‘‘যে নারীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তাঁরা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন৷ কেউ কেউ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ এক নারীর শিশু সন্তানকে জবাই করেছে মিয়ানমারের সেনারা৷ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান মিয়ানমারের সরকার এবং সেনাবাহিনীর সুস্পষ্ট গণহত্যা৷ মিয়ানমার থেকে, সে দেশের ইতিহাস থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা৷’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা তীব্রভাবে মিয়ানমার সরকারের এই গণহত্যা নীতিকে প্রত্যাখ্যান করছি৷ দোষীদের অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নিয়ে বিচার নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি৷’’
ইরানের নোবেল বিজয়ী শিরিন এবাদি বলেন, ‘‘বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ায় আমি সত্যিই বাংলাদেশের সরকার এবং এ দেশের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি৷ এখনো বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে৷ এটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য সত্যিই একটা চাপ৷ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগঠিত মিয়ানমার সরকারের সমস্ত অপরাধের বিচার হওয়া উচিত৷’’ এই বিচার নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে বলেন এবাদি৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মাধ্যমে ওই বিচার নিশ্চিতের তাগিদ দেন তিনি৷
ইয়েমেনের নোবেলজয়ী তাওয়াক্কুল কারমান বলেন, ‘‘আমি বাংলাদেশের সরকার এবং জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে, তাঁরা বিপুল পরিমাণ শরণার্থীর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে৷ আমরা এই সংকটকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছি এবং সংকটের আশু সমাধান দাবি করছি৷ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছুই প্রায় করছে না৷ তাদের নীরবতা লজ্জার৷’’ তিনি বলেন, ‘‘যারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধকর্মে জড়িত, তাদের আন্তর্জাতিক আদালতের আওতায় নিয়ে বিচার নিশ্চিত করা উচিত৷’’
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমতকে আরও সংহত করতে বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘নারীপক্ষ’র উদ্যোগে নোবেলজয়ী তিন নারীর বাংলাদেশ সফরের আয়োজন করা হয়৷ তাঁরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তা তুলে ধরবেন৷
তিন নোবেলজয়ী নারী মঙ্গলবার কক্সবাজারে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের তিন দিনের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন৷ আর ঢাকায় তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন বুধবার৷
প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷