র্যাবের নিষেধাজ্ঞা সুইচের মতো অন আর অফ করা যায় না: মোমেন
৫ এপ্রিল ২০২২ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন জানায়, সোমবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘এটা ওদের প্রসেস আছে৷ এটা আমাদের কমপ্লিট করতে হবে৷
‘‘এই দেশে প্রায় জিনিসেরই দেয়ার আর মেনি প্রসেসেস… ওই কমিটির ওই লোকগুলোকে সন্তুষ্ট করতে হবে… এটাতে সময় লাগবে৷ সুইচের মতো না যে এক দিনে অন আর অফ করতে পারবে৷’’
বাংলাদেশে অনেক কিছু ‘সহজে’ করা গেলেও যুক্তরাষ্ট্রে সেভাবে করা যায় না মন্তব্য করে মোমেন বলেন, ‘‘আমাদের দেশের সরকার ইয়েস বললে ইয়েস হয়ে গেল৷ এখানে অনেক সময় চাইলেও পারে না৷
‘‘যেমন ট্যারিফ প্রত্যাহারের জন্য ২৩টা কমিটিতে অনুমোদন লাগে৷ তারপর প্রেসিডেন্ট সেটার উপর রেসপন্স দিতে পারেন৷ এর আগে প্রেসিডেন্ট কিছু বলতে পারেন না৷ এখানে একজিকিউভের যথেষ্ট আটকা, সে কারণে এটা সহজে বলতে পারবে না৷ আপনাকে প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হবে৷’’
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ ছিল বাংলাদেশের তরফ থেকে তোলা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷
গত বছর ১০ ডিসেম্বর ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক, বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়৷
এই নিষেধাজ্ঞার পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল ঢাকা৷ ১৫ ডিসেম্বর ব্লিংকেনের সঙ্গে এ বিষয়ে টেলিফোনেও কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন৷
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈঠকে র্যাব গঠন এবং নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী চার মাসে এ এলিট ফোর্সের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘‘আমি বললাম, র্যাবটা আমাদের দেশে এমন সময়ে তৈরি হয়েছিল, যখন আমাদের দেশে সন্ত্রাস, জিহাদি- এগুলোর উৎপাত খুব বেশি ছিল ৷
‘‘একদিনে ৪৯৫টা বোমাবাজি হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়, যার ফলে ২৪ জন লোক মারা যায়, ৩৭০ জন আহত হয় ৷ সারাদেশে মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক ছিল, ওই সময়ে তৈরি হয়েছিল৷’’
র্যাব হয়ত কখনো কখনো ‘অতিরিক্ত বা বেশি কিছু করে’ ফেলেছে- বৈঠকে এমন বক্তব্য দেওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘তবে ইনবিল্ট সিস্টেম আছে জবাবদিহিতার এবং অনেকের শাস্তি হয়েছে ৷ এমনকি লাইফ একজিকিউশনও হয়েছে৷ সুতরাং এখানে জবাবদিহিতা আছে৷’’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘বলেছি, আপনাদের রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টিই বলেছিলেন, র্যাব ইজ দ্য এফবিআই অব বাংলাদেশ৷ প্রতিষ্ঠানটির উপরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আমার তরুণরা ওখানে কাজ করায় নিরুৎসাহিত হবে৷ আমি খুব খুশি হব, আপনি যদি এটা পুনর্বিবেচনা করেন৷’’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন জবাবে কী বলেছেন, সে ধারণা দিয়ে মোমেন বলেন, ‘‘উনি বললেন যে, ‘এটার প্রসেস আছে, সেই প্রসেসে হবে৷ তবে আমাদের জবাবদিহিতা দরকার৷ আমরা এ ব্যাপারে বেশ সোচ্চার’৷
‘‘আমি বললাম, আমরা সব ধরনের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ তখন বললেন যে, ;‘গত চার মাসে কেউ মারা যায়নি’৷ আর ডিএসএ-তেও আমাদের ট্র্যাক রেকর্ড গুড৷ গত চার মাসে একজনও অ্যারেস্ট হয়নি৷ উনি বললেন, ‘এটা ভালো’৷’’
র্যাব ছাড়াও আলোচনায় যা কিছু
সোমবার ওয়াশিংটন সময় দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা মতো চলে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক৷ বৈঠক শেষে ‘খুবই ভালো আলোচনা হয়েছে’ হোটেলে ফিরে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, বাংলাদেশের ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত আসামি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানো, রোহিঙ্গা সংকট, শ্রম অধিকার এবং মানবাধিকারের মতো বিষয় আলোচনায় এসেছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চিঠির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আলোচনা শুরু হয়৷ বাইডেন সেখানে বলেছেন, দুই দেশের গত ৫০ বছরের সম্পর্ক ‘অত্যন্ত মধুর’৷
‘‘আগামী ৫০ বছরে আমাদের যথেষ্ট কাজ করার সুযোগ রয়েছে৷ ক্লাইমেট ইস্যু, হিউম্যান রাইটস, শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার সুযোগ আছে,” বলেন মোমেন৷
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ৯০ শতাংশই যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, সে বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে আরও বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ ‘‘আমি বলেছি, আমাদের দেশে ‘ইজ অব বিজনেস’ খুব পুওর৷ তোমরা আমাদের সাহায্য কর না কেন?’’
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘‘আমরা বলেছি যে, এখানে ৫-৬ লাখ বাঙালি থাকে, তারা দেশে যেতে চায়, বিমানটা যদি চালু করেন৷
‘‘আমরা সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছি, আপনি এটাকে ত্বরান্বিত করেন৷ ৫০ বছর পূর্তিতে যদি এটা করতে পারি, আমরা খুবই খুশি হব৷’’
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘‘বলেছি, আপনাদের পজিশন ভালো৷ আপনাদের আরও বেশি ভূমিকা চাই৷
‘‘আমরা চাই, আপনারা আসিয়ান ও কোয়াড কান্ট্রিজকে ওদের সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে বলবেন৷ আমরা চাই, এর আগে তাদের ওপরে ২০১৬ সালের আগে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, ওইটা আবার আরোপ করেন৷ আপনি এখনো জিএসপি দিচ্ছেন মিয়ানমারকে, এটা গ্রহণযোগ্য না৷’’ বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন এসব কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনকে৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)