1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লক্ষ্যভ্রষ্ট ছাত্র রাজনীতি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রদের, বিশেষ করে ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা সবার জানা৷ ছাত্র রাজনীতির এই গৌরবের ধারা স্বাধীন বাংলাদেশেও ছিল৷ কিন্তু এখন সেখানে উলটো হাওয়া৷

https://p.dw.com/p/2s4Km
Bangladesch Historische Bilder
ছবি: Journey/S.-M. Gorki

ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আফসানা ইভা৷ তিনি থাকেন বেগম রোকেয়া হলে৷ গত ৪ জানুয়ারি তিনি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালিতে যেতে অস্বীকৃতি জানান৷ আর তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে যান ছাত্রলীগের নেতারা৷ এরপর তাঁকে রাত ১১টায় হল থেকে বের করে দেয়া হয়৷ তাঁর জিনিসপত্র পুড়িয়ে দেয়া হয়৷ পরের দিন সকাল ৯টা থেকে এর প্রতিবাদে হলের সামনে একটি প্ল্যাকার্ড এবং ব্যাগ, বালিশ এবং বিছানা নিয়ে আমরণ অনশন শুরু করেন ইভা৷ প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘ছাত্রলীগ কর্তৃক হল থেকে বের করে দেয়ার প্রতিবাদে আমরণ অনশন'৷  বিকেল ৪টার দিকে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তিনি অনশন ভাঙেন এবং হলে ফিরে যান৷ আর ছাত্রলীগ নেতারা তখন দাবি করে, ‘‘ওই ছাত্রী সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছে৷'' 

Dr Safiul Alam Bhuyan - MP3-Stereo

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার ফল প্রকাশসহ নানা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন৷ তাঁরা উপচার্যের কার্যালয়ও ঘেরাও করেন৷ ২২ জানুয়ারি তাঁদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা৷ এর প্রতিবাদে এবং হামলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে ২৩ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ' উপচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করেন৷ তাঁরা গেট ভেঙে উপচার্যকে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন৷ এক পর্যায়ে অবরুদ্ধ উপচার্যকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা উদ্ধার করে৷ এই উদ্ধার অভিযানে তাঁরা প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের দিয়ে ব্যাপক মারপিট করেন৷ বিশেষ করে ছাত্রীদের মারপিটের দৃশ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে ব্যাপক সমালোচনা হয়৷ এই বিষয়ে তদন্ত কমিটি হলেও ছাত্রলীগ উলটো হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের বিচার দাবি করেছে৷

১৯৪৮ সালে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার বিপ্লবের মূলশক্তি ছিল ছাত্র সমাজ৷ ‘জার' আমলে রাশিয়ায় ছাত্ররাই বিভিন্ন বিপ্লবী আন্দোলনের সূচনা ঘটায়৷ এমনকি ১৯৫৫ সালে আর্জেন্টিনায়, ১৯৫৮ সালে ভেনিজুয়েলায়, ১৯৬০ সালে কোরিয়ায় ছাত্র সমাজ পালন করে ঐতিহাসিক ভূমিকা৷ ১৯৬৪ সালে ভিয়েতনাম ও বলিভিয়ার ক্ষেত্রেও জাতীয় সংকটে ছাত্র সমাজের অবদান ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবেই বিবেচিত হবে৷

শরীয়তপুরে ছয় নারীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ ও সেই ধর্ষণের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হোসেন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ 

Dr Mohammad Hannan - MP3-Stereo

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে বহিষ্কৃত এবং আটক) আরিফ হোসেন হাওলাদার এই সময়ে ব্যাপক আলোচিত৷ তার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ছয় নারী৷ আরিফ নারীদের ব্যক্তিগত দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেন এবং তা সমাজিক মাধ্যমে ছেড়ে দেন৷

সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগের একজন শীর্ষ নেতার বিলাসবহুল নতুন বাড়ির ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে৷

কিন্তু ছাত্রনেতা এবং ছাত্ররাজনীতির এ সব দৃশ্য ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্য নয়৷ ছাত্র রাজনীতি এবং ছাত্র আন্দোলনের আছে সোনালি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস৷ বিশেষ করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪'র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, '৬২-র কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, '৬৬-র ঐতিহাসিক ৬ দফা ও ১১ দফা, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, '৭০-এর নির্বাচন, '৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনসহ প্রতিটি ঐতিহাসিক গণতান্ত্রিক বিজয়ে ছাত্র রাজনীতি এবং ছাত্র আন্দোলন সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছে৷ ছাত্ররাই ইতিবাচক আন্দোলনের সূচনা করেছে৷ স্বাধীন বাংলাদেশে '৯০-এর গণঅভ্যুত্থান ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও এ দেশের ছাত্র রাজনীতির রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক ভূমিকা৷

ড. মোহাম্মদ হান্নান বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির একজন গবেষক৷ ধারবাহিকভাবে ছাত্র রাজনীতির ওপর গবেষণা করছেন তিনি৷ ‘বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস' নামে এ পর্যন্ত তার ১০ খণ্ড বই বের হয়েছে৷ সরকারি চাকুরে এই গবষেক অবসরে গিয়েও তাঁর গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি আমার ১০ খণ্ডের বইয়ে ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনীতির ইতিবাচক ধারা তুলে ধরার কাজ করছি৷ আর ১৮শ' সাল থেকে আমি তা তুলে ধরছি৷ তখন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন ছিল সামাজিক, সাংস্কৃতিক গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের৷ আমরা যদি শুরুর দিকটা দেখি, তাহলে দেখবো তখন শিক্ষার হার তেমন ছিল না৷ সুশীল সমাজ গড়ে ওঠেনি৷ ছাত্ররাই ছিল সমাজের আলোকিত অংশ৷ তাই তাঁরাই পথ দেখানোর চেষ্টা করেছে৷ তাঁরা পরাধীনতার বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সামাজিক সংস্কারের আন্দোলন করেছে, শিক্ষার জন্য আন্দোলন করেছে৷ আন্দোলন করেছে সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে৷ তখন ছাত্র আন্দোনে কোনো বৈষয়িক লাভের বিষয় ছিল না৷'' 

Bahadur Bepari - MP3-Stereo

তাঁর মতে, স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি কলুষিত হতে শুরু করে৷ ছাত্র সংগঠনগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লেজুড় বা হাতিয়ারে পরিণত হতে শুরু করে৷ এটা ছাত্র নেতাদের অনেকের বৈষয়কি লাভের বিষয়ে পরিণত হয়৷ ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সরসরি অংশ নেন ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ড. ওয়াহিদুর রহমান টিপু৷ পরে তিনি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসেও কাজ করেছেন৷ এখন আইন পেশায় নিয়োজিত৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের সময় আমরা কেউ কেউ পুরনো শার্ট-প্যান্ট পরেই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি৷ ঠিকমতো খেতেও পাইনি৷ অর্থকড়ি ছিল না৷ আমাদের অনেকের তখন সেরকম চিন্তাও ছিল না৷ কিন্তু তখনও একটি গ্রুপ ছিল, যারা ছাত্র রাজনীতির নামে নিজেদের আখের গুছিয়েছে৷ সেই তারাই এখন আবার জাতীয় রাজনীতির বড় নেতা৷ ত্যাগীদের মূল্যায়ন দলও করে না৷ তাই আমি বলবো, আদর্শিক ছাত্র রাজনীতির মৃত্যু হয়েছে, যার ফলে ছাত্র রাজনীতির এই করুণ পরিণতি৷''

ড. মোহাম্মদ হান্নান বলেন, ‘‘স্বধীনতার পর ছাত্র রাজনীতিতে অস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঘটে৷ আর তা অর্থের সংযোগ ঘটায়৷ রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে ছাত্ররাজনীতিকে ব্যবহার শুরু করে৷ ফলে ছাত্ররাজনীতি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়৷ শুধু রাজনৈতিক দল নয়, ব্যবসায়ী শিল্পপতিরাও তাদের ব্যবহার করছে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘১৯৯০-এর গণঅভুত্থানকে ছাত্র আন্দোলনের আরেকটি মাইল ফলক হিসেবে দেখা হয়৷ কিন্তু এখানেও অস্ত্র এবং টাকার খেলা ছিল৷ সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের হাতে অস্ত্র টাকা ছিল৷ বিরোধী ছাত্র সংগঠনের হাতেও অস্ত্র ছিল৷''

Razeeb Ahsan - MP3-Stereo

বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না৷ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যেমন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে, তেমনি ভোট পেতে, ছাত্রদের সমর্থন পেতেও ছাত্র সংগঠনগুলোকে ইতিবাচক কাজ করতে হয়৷ ছাত্রদের নানা সমস্যা এবং শিক্ষা বিষয়ে কথা বলতে হয় তাদের৷ আন্দোলন করতে হয়৷ কিন্তু ছাত্র সংসদ  নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্রনেতাদের এখন আর সেই ভাবনা নাই৷ তারা দখলদারী রজনীতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন৷ হল দখল, সিট দখল থেকে শুরু করে মার্কেট দখলেরও অভিযোগ পওয়া যায়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ বছর ধরে ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হয় না৷ সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ১৯৯০ সালের ৯ জুন৷ মজার ব্যাপার হলো, তখন স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার ক্ষমতায় ছিল৷ স্বৈরাচারের সময় '৮৯ এবং '৯০-এ ডাকসু নির্বাচন হলেও এরপর নির্বাচিত কোনো সরকারের অধীনেই ডাকসু নির্বাচন হয়নি৷ বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদায়েও একই অবস্থা৷

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ডাকসু নির্বাচন হওয়া খুবই জরুরি৷ যদি ডাকসুসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়মিতভাবে হতো তাহলে ছাত্র রাজনীতি কলুষিত হতে পারত না৷ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটতো৷ ছাত্র রাজনীতি হতো ছাত্রদের অধিকার ও দাবি নিয়ে৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে লিটন নন্দী বলেন, ‘‘ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদলের রাজনীতির ধারা দেখে ‘বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি পচে গেছে' – এমন মন্তব্য করা ঠিক হবে না৷ তাদের রাজনীতি কলুষিত হয়েছে৷ তারা অস্ত্র আর অর্থের রাজনীতি করছে৷ তারা ক্ষমতার রাজনীতি করছে৷ কিন্তু ছাত্র ইউনিয়ন এখনো সুস্থ ধারার রাজনীতি ধরে রেখেছে৷''

Liton Nandi - MP3-Stereo

একই প্রসঙ্গে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান বলেন, ‘‘ছাত্রদল ছাত্র রাজনীতির সঠিক লাইনেই আছে৷ ছাত্রদল এখন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে আছে৷ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে৷ গত ৯ বছর ধরে দেশে গণতন্ত্র নাই৷ আর যেটুকু কলুষিত হয়েছে তার জন্য বর্তমান সরকার দায়ী৷ দেশে যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকতো, তাহলে ছাত্র রাজনীতিতেও সুস্থ ধারা থাকতো৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ছাত্র সংগঠনগুলো রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন, এমন কথা তাত্ত্বিক কথা ছাড়া আর কিছুই না৷ স্বাধীনতার আগেও ছাত্র সংগঠনগুলো বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বেই চলতো৷ যাঁরা এ সব তাত্ত্বিক কথা বলেন, তাঁরা গণতন্ত্রকেই বাধাগ্রস্ত করতে চান৷''

প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির লক্ষ্য কী? আর অনেক ছাত্র সংগঠনে বছরের পর বছর নতুন কমিটি হয় না৷ অছাত্রদের দিয়ে চলে ছাত্র সংগঠন৷ আর স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির চেহারা কেমন হওয়া উচিত৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ভুঁইয়া মনে করেন, ‘‘ছাত্র রাজনীতি তার মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেছে৷ ১৯৭৫-এর ১৫ অগাস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসকরা টিকে থাকার জন্য ছাত্রদের দলে টেনে অস্ত্র ও অর্থ দিয়েছে৷ বিশেষ করে জিয়াউর রহমান সরাসরি এই কাজটি করেছেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘ছাত্র রাজনীতি এখন আর ছাত্র রাজনীতি নাই৷ তারা লক্ষ্যচ্যুত হয়েছে৷ তারা ছাত্রদের বিষয় নিয়ে কাজ করে না৷ তারা এখন বিত্তবান ক্ষমতাবান৷ মেধাবী ছাত্ররা ছাত্র রাজনীতিতে নাই৷ আর সাধারণ ছাত্রদের রাজনীতির প্রতি এক ধরনের অনীহা তৈরি হয়েছে৷''

DR wahidur Rahman Tipu - MP3-Stereo

এই সময়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আলোচনা সমালোচনায়৷ ড. মোহাম্মদ হান্নান বলেন, ‘‘বর্তমান ট্রেন্ড হলো, যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছাত্র সংগঠনই প্রভাব বিস্তার করে৷ ছাত্রসংগঠগুলো দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন প্রভাব বিস্তার করতে সব সহযোগিতা পায় এবং তারা নানা ধরনের সুবিধা পায়৷''

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী অবশ্য দাবি করেন, ‘‘এখন ছাত্র রাজনীতি আধুনিক৷ আগে কতজন মোবাইল ফোন ব্যবহার করত? অর্থনীতি কেমন ছিল? মাথাপিছু আয় কত ছিল? আধুনিকতা এবং উন্নয়নের ছোঁয়া ছাত্র রাজনীতিতে৷ কোনো ছাত্র নেতা যদি তাঁর মেধা ব্যবহার করে সম্পদশালী হয়, তাহলে তো আপত্তি থাকার কথা নয়৷ ধনী শব্দের মানে কী? সেটা একেকজনের কাছে একেক রকম৷ আমি চাই, ছাত্র রাজনীতি হবে মেধা, চেতনা আর দেশপ্রেমে ধনী৷'' 

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এত কাছে থেকে সব কিছু বোঝা যায় না৷ এখন ছাত্রলীগ যা করছে, তা গৌরবোজ্জ্বল কিনা বোঝা যাবে ২০৪১ সালে৷ যেমন অতীতের গৌরবেজ্জ্বল ভূমিকা এখন বোঝা যায়৷''

ছাত্র রাজনীতির নতুন লক্ষ্য নির্ধারণের কি সময় এসেছে? পরাধীন এবং স্বাধীন দেশে কি ছাত্র রাজনীতির চরিত্র একই হবে? এর জবাবে সফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, ‘‘স্বাধীন দেশে ছাত্র রাজনীতি কেমন হবে, তা আমরা ঠিক করতে পারিনি৷ সে কারণেই ছাত্র রাজনীতির এই অবস্থা৷''

আর ড. মোহাম্মদ হান্নান বলেন, ‘‘ছাত্র রাজনীতি হতে হবে স্বাধীন৷ তারা কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করবে না৷ তারা ছাত্রদের নিয়ে কাজ করবে৷ তাহলে ছাত্ররাজনীতি আবার গৌরবের ধারায় ফিরবে৷ জাতির প্রয়োজনে তারাই মাঠে থাকবে৷''

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য