লাদেন পরিবারকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে সৌদি আরব
৩০ এপ্রিল ২০১২আল কায়েদা সুপ্রিমো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাস, ৯/১১-র মাস্টারমাইন্ড, গোটা দুনিয়ায় সন্ত্রাসের জাল বিছিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসী নেতা ওসামা বিন লাদেন কোন দেশের মানুষ ছিল? অনেকেই এই প্রশ্নের উত্তর জানেন৷ যারা জানেন না, তাঁদের অবগতির জন্য জানানো দরকার, ওসামা বিন লাদেন ছিল সৌদি নাগরিক৷ সুতরাং, লাদেনের একাধিক স্ত্রী এবং প্রচুর সন্তান সন্ততিরা সকলে সেই সুবাদে সৌদি আরবের মানুষ বলেই ধরতে হবে৷ আর সেই সৌদি আরবকে তো লাদেনের জন্য, মানে নিহত লাদেনের পরিবারবর্গের জন্য দরজা খুলতেই হবে৷
তো, সেটাই করেছে সৌদি আরব৷ গত বৃহস্পতিবার কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে, যাকে বলে গাড়িশুদ্ধ কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে লাদেনের তিন স্ত্রী আর তার পরিবারের ১১টি সন্তানকে নিয়ে যাওয়া হয় বিশেষ বিমানে চড়িয়ে জেদ্দায়৷ তারপরে সম্প্রতি জেদ্দায় লাদেন পরিবারের এই পুনর্বাসনের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সৌদি প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ অফিসারের বক্তব্য, লাদেনের পরিবারকে সেদেশে আশ্রয় দেওয়ার একমাত্র কারণ হল মানবিকতা৷
মানবিকতা দেখানো ছাড়া উপায়ও ছিল না আর৷ কোথায় যাবে এই লাদেনের একাধিক স্ত্রী আর তার সন্তান সন্ততিরা? পাকিস্তানে তারা ‘অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ' করেছিল এবং অ্যাবোটাবাদের বাড়িতে থেকে গিয়েছিল এতগুলো বছর৷ মার্কিন সেনাবাহিনীর বিশেষ অপারেশনের মাধ্যমে লাদেন খতম অভিযান হওয়ার আগে পর্যন্ত পাকিস্তানি প্রশাসন তো সে খবর রাখত না! অতএব লাদেনকে খতম করাটা হয়ে যাওয়ার পর তড়িঘড়ি প্রশাসন লাদেনের পরিবারকে আইনের আওতায় এনে সাজা দেয়৷ এবং আদালত চলতি বছরের মার্চে জানিয়ে দেন, ৪৫ দিনের কারাবাসের সাজা হল তাদের৷ সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পাকিস্তান ছেড়ে তাদের চলে যেতে হবে৷ সেই নিয়ম মোতাবেক গত ২৬ এপ্রিল একটি বিশেষ বিমানে পাকিস্তান ছেড়ে চলে যায় লাদেন পরিবার৷ যে পরিবারে রয়েছে লাদেনের তিন বিধবা স্ত্রী, সাত ছেলেমেয়ে এবং চারটি নাতি নাতনি৷
জেদ্দায় লাদেন পরিবারের কতজনের আশ্রয় হয়েছে বা কীভাবে হয়েছে, সে বিষয়ে বিশদে কিছু জানায়নি সৌদি গণমাধ্যম৷ স্বভাবতই ব্যাপারটাকে গোপনেই রাখা হয়েছে৷ কিন্তু লাদেন পরিবার সৌদি আরবের বেশ প্রভাবশালী আর ধনী পরিবার বলে পরিচিত৷ সেই সুবাদে সেদেশে তাদের বিস্তর ধন সম্পত্তি, বাড়িঘর, জায়গাজমি রয়েছে৷ সুতরাং সৌদিতে লাদেন পরিবারের সমস্যা হওয়ার কথাও নয়৷
সামাজিক দিক থেকে দেখতে গেলেও সৌদি আরবে লাদেনের পরিবারের লোকজন বরং অনেক বেশি সুরক্ষিত৷ আদতে যেহেতু সেটাই তাদের দেশ৷ সৌদি প্রশাসনের তরফে ওই উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মানবাধিকার, আইনি ও প্রশাসনিক দিকগুলি বিচার করেই সৌদি আরব প্রশাসন লাদেনের পরিবারকে সেদেশে থাকতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ অবশ্য তার আগে পাকিস্তান থেকে লাদেনের পরিবারের তরফেও সৌদিতে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল৷ সেই আবেদনে তারা সাড়া দিয়েছে ‘মানবিক' দৃষ্টিভঙ্গী দেখিয়ে৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়, রয়টার্স, এপি
সম্পাদনা : রিয়াজুল ইসলাম