1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লাল গ্রহের রহস্য জানতে উড়ে গেল ‘কৌতূহল’

২৭ নভেম্বর ২০১১

সাড়ে আটমাস ধরে ৩৫৪ মিলিয়ন মাইল পথ পেরিয়ে লাল গ্রহের দিকে যাত্রা করল নাসার নতুন প্রজন্মের মহাকাশযান৷ সঙ্গে গেছে এক রোবট৷ দু’বছর ধরে সে থাকবে লালগ্রহে৷ সংগ্রহ করে আনবে নানা তথ্য৷ মহাকাশ বিজ্ঞানের এক নতুন অধ্যায়৷

https://p.dw.com/p/13I3D
মঙ্গলের মাটিছবি: AP

ফ্লোরিডার কেপ কার্নিভাল থেকে তেরো হাজারেরও বেশি দর্শকের উর্দ্ধমুখী দৃষ্টির সামনে রূপোলি রঙের রকেটটি উড়ে গেল৷ নাম তার অ্যাটলাস ফাইভ৷ এ রকেট এক্বেবারে নতুন প্রজন্মের৷ নাসার বিশেষ তত্বাবধানে তৈরি৷ পেটের ভিতরে সে ভরে নিয়ে গেছে কিউরিওসিটি বা উৎসাহ বা কৌতূহল নামের ছয় চাকা আর একটি হাত বিশিষ্ট বিশেষ এক মহাকাশযানকে৷ যে কিনা মঙ্গলে হাজির হবে পাক্বা সাড়ে আট মাস পরে৷ আর এই কিউরিওসিটির পেটের ভিতরে আবার বসে আছে ৯০০ কেজি ওজনের একখানা সর্বোচ্চ প্রযুক্তির রোবট৷ যে রোবট আসলে মহাকাশচারী৷

পুরো ব্যাপারটা শুনলে কল্পবিজ্ঞানের গাঁজাখুরি কাহিনী বলে মনে হতেই পারে, কিন্তু বিযয়টা আসলে তা নয়৷ বিষয় হল বাস্তব৷ সৌরমন্ডলের লালগ্রহ মঙ্গলে যে জল নেই, প্রাণের কোনরকমের চিহ্ন নেই, সেকথা বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন কিছুদিন যাবৎ৷ তাতে কর্ণপাত করতে রাজি নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ তারা মঙ্গলকে নিয়ে পড়েছে৷ সেখানে জল থাকতে পারে, আর কে না জানে যে, জল থাকলেই জীবনও থাকার সম্ভাবনা৷ তার ফলে কত কিছুই যে ঘটে যাবে! যদি, তেমন একখানা আবিষ্কার হয়ে যায়!

তো, সেই আবিষ্কারের জন্যই এই এত কান্ড৷ দেড় বিলিয়ন পাউন্ড খরচা করে এই পেল্লাই মিশন৷ ২০১২ সালের অগাস্টে কিউরিওসিটি পৌঁছবে মঙ্গলে৷ যাত্রা মসৃণ হবে যদি ধরে নেওয়া যায়, তাহলে তারপরেই নাসার বিজ্ঞানীদের জন্য শুরু হবে কর্মতৎপরতার আরেক নতুন অধ্যায়৷ যখন কিউরিওসিটির যন্ত্রপাতি দিয়ে মঙ্গলের মাটি খুঁড়ে পাথর থেকে শুরু করে যাবতীয় নমুনা সংগ্রহ করে সেসবের পরীক্ষানিরীক্ষার পালা শুরু হবে৷

নাসার এই মঙ্গলযাত্রা এল দীর্ঘ আট বছর পর৷ আগামী চার বছর ধরে চলবে এই যাত্রা এবং তার থেকে পাওয়া তথ্যাদির বিশ্লেষণের পালা৷ নাসার মঙ্গল যাত্রা বিভাগের যিনি প্রধান, সেই ডুগ ম্যাককুইসটন ফ্লোরিডার সাংবাদিক সম্মেলনে হাসিমুখে বলেছেন, তাঁর আশা, এই অভিযান থেকে এত তথ্য পাওয়া যাবে, যা এর আগে কখনোই সম্ভব হয়নি৷ কারণ, যে রোবোটকে কিউরিওসিটিতে ভরে দেওয়া হয়েছে, সেটি হল প্রযুক্তির দিক থেকে এই বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিকতম, সবচেয়ে কর্মক্ষম এবং সবচেয়ে জটিল রোবোট৷ তার অসাধ্য প্রায় কিছুই নেই৷ সুতরাং, মঙ্গলের যবতীয় রহস্য সে যে ছেনে আনবে, তাতে আর সন্দেহ কী?

সন্দেহ নেই বটে, তবে তাই বলে নাসার বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতও হতে পারছেন না কিছুতেই৷ যাত্রা মসৃণ হয়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে এখনও পর্যন্ত৷ প্রতি ঘন্টায় মহাকাশযানের কাছ থেকে খবরসবরও পৌঁছচ্ছে, এ পর্যন্ত কোন বখেড়া নেই৷ ৫৭০ মিলিয়ন কিলোমিটার বা ৩৫৪ মিলিয়ন মাইলের এই বিশাল দূরত্ব পার হতে সাড়ে আট মাস লাগবে৷ তারপরে শুরু হবে আসল কাজকর্ম৷ কিউরিওসিটি সেসব যন্ত্রপাতি আর প্রযুক্তি সঙ্গে করেই নিয়ে গেছে৷ আর রোবোট তো রয়েইছে পৃথিবী থেকে বিজ্ঞানীদের দেওয়া হুকুম তামিল করতে৷

পৃথিবীর সবথেকে নিকটতম প্রতিবেশী হল এই মঙ্গল৷ দেখা যাক, সেখানেও মানুষ একদিন ঘরবাড়ি বানাতে পারে কিনা৷ যে হারে এই বিশ্বে আমরা সংখ্যায় বেড়ে চলেছি, তাতে অন্যত্র জমিজমা তো দেখতেই হবে!

প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম