লোকসভা ২০২৪: প্রচারে কী ধরনের চমক আনলেন নরেন্দ্র মোদী?
লোকসভা নির্বাচনের প্রচার কৌশল বদল করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি এখন মোদী-পরিবার, মোদী-গ্যারান্টির কথা বলছেন।
নতুন কৌশল
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন পুরোদমে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নেমে পড়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই তিনি হয় জনসভা করছেন অথবা সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছেন মোদী। আর তিনি এবার প্রচারে নিয়ে এসেছেন নতুন বিষয়। নতুন কৌশল।
মোদীর গ্যারান্টি
কিছুদিন হলো মোদীর গ্যারান্টি নিয়ে ভরপুর প্রচার চলছে। এই গ্যারান্টি কি? গরিবদের আরো পাঁচ বছর বিনা পয়সায় সরকারি রেশন, পাঁচ লাখ পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিমা, কম দামে গ্যাসের সিলিন্ডার, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বিনা পয়সায় বাড়ি, নারী স্বনিযুক্ত গোষ্ঠীকে ১৫ হাজার টাকা, বয়স্কদের পেনশন, লাখপতি দিদির মতো একগুচ্ছ প্রকল্পই হলো মোদীর গ্যারান্টি।
সরকারি প্রকল্প
এ সবই সরকারি প্রকল্প। রেডিও, টিভি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, খবরের কাগজ, পত্রিকা, পেট্রোল পাম্প সব জায়গাতে এর ভরপুর প্রচার চলছে। এই বিজ্ঞাপন কৌশল দিয়ে সাধারণ মানুষের মন জয় করতে চাইছেন মোদী। আগেরবার বলা হয়েছিল, 'মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়'। এবার বলা হচ্ছে, 'মোদী কা গ্যারান্টি হ্যায়'।
মোদী-পরিবার
পশ্চিমবঙ্গে এসে মোদী এই প্রচার শুরু করেছেন। মোদী-পরিবারের প্রচার। বারাসতের সভায় তিনি বলেছেন, তরুণ বয়সে শুধু একটা ঝোলা নিয়ে তিনি গহত্যাগ করেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যান। সেখানকার ভাষা জানতেন না। পকেটে পয়সা নেই। কিন্তু কোনো না কোনো পরিবার তাকে ঠিক খাবার দিয়েছে । মোদীর ঘোষণা, ভারতীয়রা সকলেই মোদীর পরিবার।
মোদীর স্লোগান
জনসভায় মোদী বলতে থাকেন, 'আমি'। সামনে বসা মানুষ জবাব দেন 'মোদীর পরিবার'। এটাই মোদী তথা বিজেপি-র নতুন স্লোগান। বিজেপি বলছে, এটাই তাদের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে চলেছে। জনতার সঙ্গে মোদীর একাত্মতার মোকাবিলা বিরোধীরা করতে পারবে না বলে বিজেপি নেতাদের দাবি।
মোদীর নারীশক্তি
আরো বেশি করে নারীদের ভোট পেতে উদ্যোগী হয়েছেন মোদী। সংসদে ও বিধানসভায় নারীদের জন্য এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের বিল পাস হয়েছে। সেই ব্যবস্থা কার্যকর হবে ২০২৯ থেকে। মোদী গরিব মেয়েদের প্রশিক্ষণের জন্য বিশ্বকর্মা যোজনা, ছোট ব্যবসা করার জন্য স্বনিধি যোজনার কথা বলছেন। লাখপতি দিদি নিয়ে প্রচার চলছে। মেয়েদের বিনা সুদে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা বছরে এক লাখ টাকা রোজগার করতে পারেন।
নতুন ভোটারদের প্রভাবিত করতে
কিছুদিন আগেই বিজেপি নেতা ও কর্মীদের মোদী নির্দেশ দিয়েছিলেন, এবার ১৮ বছর বয়সি যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের সকলের কাছে পৌঁছাতে হবে। মোদী এবার প্রচারে যুব ও প্রথমবারের ভোটদাতাদের মন পেতে তাদের জন্য তিনি কী করেছেন, তা বিস্তারিতভাবে বলবেন।
ধারণা তৈরির খেলা
এবার মোদীর আরেকটি স্লোগান হলো, আব কি বার, চারশ পার। অর্থাৎ, এবার চারশ পার করে যাবে এনডিএ। বিজেপি পাবে অন্তত ৩৭০টি আসন। এবার এনডিএ-র পরিধি বাড়ানো হয়েছে। চন্দ্রবাবু নাইডু আবার এনডিএ-তে ফিরেছেন। বিজু জনতা দলের নেতা নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করা নিয়ে বিজেপি-র আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে। মোদী একটা ধারণা তৈরি করতে চাইছেন, তিনি জিতবেনই।
মতুয়াদের সিএএ-উপহার
পশ্চিমবঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মালদহ ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষ আছেন। তারা সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ও বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আসা নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ। বনগাঁও-সহ তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে তারাই ভোটের ফল নির্ধারণ করেন। তাদের ভোটাধিকার থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে নাগরিক স্বীকৃতি নেই। সিএএ চালু করে তাদের নাগরিক হওয়ার পথ সুগম করা হলো বলে বিজেপি প্রচারে নেমে গেছে।
কেন বারবার পশ্চিমবঙ্গে?
পশ্চিমবঙ্গে গত দুই সপ্তাহে তিনবার এসেছেন মোদী। জনসভা করেছেন আরামবাগ, বারাসত, শিলিগুড়িতে। মেট্রো রেল সম্প্রসারণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে মেট্রো সফর করেছেন। সন্দেশখালির নারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। গতবার ১৮টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। এবার সেই সংখ্যা ধরে রেখে একটা হলেও আসন বাড়াতে চায় তারা। তাই এত ঘনঘন মোদীর পশ্চিমবঙ্গ সফর।
নতুন মুখ নিয়ে আসা
মোদীর নির্বাচনী কৌশলের একটা অঙ্গ হলো, নতুনদের প্রার্থী করা। পুরনোদের মধ্যে যাদের জয় নিয়ে তিলমাত্র সন্দেহ আছে, তাদের বাদ দিয়ে দেয়া। এবারো সেই পথে হেঁটেছেন মোদী। দিল্লিতে পাঁচটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। চারটিতে নতুন প্রার্থীকে সুযোগ দেয়া হয়েছে।