শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার
১৮ এপ্রিল ২০১৬শনিবার ভোরে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করার পর ঐ দিনই তাঁকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ৷ বর্তমানে তিনি গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতেই আছেন৷
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শফিক রেহমানকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি৷ তাঁর বিরুদ্ধে যদি সত্যি এই ধরনের অভিযোগ থাকে, তাহলে আদালত থেকে পরোয়ানা এনেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা যেত৷ এছাড়া তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় সাদা পোশাকের পুলিশ সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বাসায় ঢোকে৷ এতে সাধারণ মানুষের কী ধারণা হবে? উল্টে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে৷ মানুষ মনে করবে, বিরোধী মত দমনের অংশ হিসেবে সরকার শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করেছে৷''
শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের কারণ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত রয়েছে৷ পুলিশ সুনির্দিষ্ট মামলা দেখিয়ে গ্রেপ্তার করলেও বিএনপির নেতারা মনে করছেন, শফিক রেহমানকে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, সেটা তাঁকে আটকের মূল কারণ নয়৷ তাঁদের মতে, বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের চাপে রাখতেই শফিক রেহমানকে ধরা হয়েছে৷ আবার কারও কারও ধারণা, কূটনৈতিক পর্যায়ে শফিক রেহমানের যোগাযোগ থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
রবিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, সুনির্দিষ্ট মামলায় এবং পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ অবশ্য নির্দোষ প্রমাণিত হলে তিনি ছাড়া পাবেন৷
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক নেতা কামাল উদ্দিন সবুজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একজন প্রবীণ সাংবাদিককে এভাবে গ্রেপ্তার করা ঠিক হয়নি৷ আমি এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই৷ শফিক রেহমান দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত৷ যারা তাঁর সমালোচনা সহ্য করতে পারেনি তারাই এভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে৷ বিরোধী মতের মানুষকে সরকার কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছে না৷ এটা একটা গণতান্ত্রিক দেশে কাম্য হতে পারে না৷ গণতান্ত্রিক দেশে সব মতের মানুষের কথা বলার সুযোগ থাকতে হবে৷''
শফিক রেহমানকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে৷ সোমবার ছিল তাঁর রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন৷ মামলার তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সজীব ওয়াজেদ জয়কে অ্যামেরিকায় হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু হয় ২০১১ সালে৷ এর অংশ হিসেবে ২০১২ সালে জাসাসের (জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বাসায় একটি বৈঠক হয়৷ এতে মোহাম্মদ উল্লাহ, তাঁর ছেলে রিজভী আহমেদ (সিজার) এবং এফবিআই-এর এক প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন৷ এ বিষয়ে বর্তমানে শফিক রেহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশের) সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাংবাদিক হিসেবে তো আর শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ তিনি একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত৷ ফলে এটা সরকার ও প্রশাসনের বিষয়৷ এছাড়া রিমান্ডে নেয়ার বিষয়ে আমি বলব, একজন অপরাধী যে বয়সেরই হোক না কেন তার অপরাধ বিচার করে রিমান্ডে নেয়া হয়৷ সাধারণ একটি চুরির মামলায় তো রিমান্ডে নেয়ার প্রয়োজন হয় না৷ কিন্তু বিষয়টি যদি রাষ্ট্রীয় হয় বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তির বিষয়ে হয়, তাহলে রিমান্ডে নেয়া যেতেই পারে৷ এখানে আমি সাংবাদিক নেতা হিসেবে কিছু বলতে পারি না৷''
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এই মামলায় ‘আমার দেশ' প্রত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কারাবন্দি মাহমুদুর রহমানের নামও এসেছে৷ তাদের কথায়, শফিক রেহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা ও অপহরণের ষড়যন্ত্রে মাহমুদুর রহমানের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে৷ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই মামলার সঙ্গে মাহমুদুর রহমানেরও সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে৷ তাই সোমবার মাহমুদুর রহমানকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে৷ আদালত আগামী ২৫ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করেছে৷
জানা গেছে, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৭৩টি মামলা রয়েছে৷ এর মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় তাঁর তিন বছর সাজাও হয়৷ সেই জেলেও আছেন প্রায় তিন বছর৷ তবে ইতিমধ্যে ৭১টি মামলায় জামিন পেয়েছেন তিনি৷