শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সংস্কৃতিগত পরিবর্তন প্রয়োজন
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮জানা যায়, শব্দ কমানো হয়নি, বরং তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়৷ কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাঁকে প্রহার করা হলে তিনি মারা যান৷ সমাজে কী রকম অস্থিরতা তৈরি হলে এ রকম ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটতে পারে৷ এ প্রেক্ষিতে সচেতন মানুষমাত্রই প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছেন৷ এর আগে ময়মনসিংহ এবং পাবনায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে৷ দেশের আরো কোথাও হয়ত হয়েছে, যা হয়ত আমাদের জানা নেই৷
গবেষণা থেকে এটি স্পষ্ট যে, শব্দদূষণের সঙ্গে বধিরতার সম্পর্ক রয়েছে৷ আকস্মিক তীব্র শব্দে অন্তত কানের ক্ষতির কারণে মানুষ আংশিক বা সম্পূর্ণ বধির হয়ে যেতে পারে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, প্রতি ১,০০০ জনের মধ্যে একজন জীবনের কোনো-না-কোনো সময় বধির হয়ে যেতে পারে৷ এছাড়া প্রতি ১,০০০ জনের মধ্যে ১জন বধিরতা নিয়ে জন্মায়৷ বধির ব্যক্তিদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য শব্দ কোনো ভূমিকাই রাখে না৷ কিন্তু এমন কেউ নেই যিনি কানে শোনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে চাইবেন৷ শব্দদূষণের কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদস্পন্দনে পরিবর্তন এবং হৃত্পিণ্ডে ও মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যেতে পারে৷ এ জন্য শ্বাসকষ্ট, মাথাঘোরা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, দিক ভুলে যাওযা, দেহের নিয়ন্ত্রণ হারানো, মানসিক অসুস্থতাসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা তৈরি করে৷
শব্দ প্রাণীকুলের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম৷ অতিরিক্ত এবং সুরবিহীন শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে৷ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করার লক্ষ্যে উত্পাদন, পরিবহণ এবং ভৌত অবকাঠামো তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে৷ কিন্তু অনিয়ন্ত্রিতভাবে কল-কারখানা, যানবাহন এবং নির্মাণ শিল্পের প্রসারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটলেও বিভিন্ন রকম পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি শব্দদূষণও সৃষ্টি করছে৷ কল-কারখানা, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, যানবাহন, বিশেষ করে যানবাহনের হর্ন শব্দদূষণের অন্যতম কারণ৷ সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান, এমনকি বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত শব্দ যন্ত্র থেকেও দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে৷
প্রতিদিন একজন মানুষ কতটুকু শব্দের মধ্যে অবস্থান করতে পারবেন এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত মানদণ্ড:
শব্দের মাত্রা অনুমোদনীয় স্থিতিকাল (প্রতিদিন)
১৩০ ডেসিবেল ১ সেকেন্ডের কম
১২৫ ডেসিবেল ৩ সেকেন্ড
১২০ ডেসিবেল ৯ সেকেন্ড
১১৫ ডেসিবেল ২৮ সেকেন্ড
১১০ ডেসিবেল ৩০ সেকেন্ড
১০৫ ডেসিবেল ৪ মিনিট
১০০ ডেসিবেল ১৫ মিনিট
৯৫ ডেসিবেল ৪৭ মিনিট
৯০ ডেসিবেল ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট
৮৫ ডেসিবেল ৮ ঘণ্টা
অর্থাত্, একজন মানুষ প্রতিদিন কতটুকু শব্দের মধ্যে কত সময় ধরে অবস্থান করতে পারবেন, তার একটি সীমা রয়েছে৷ সেটি অতিক্রম করলেই তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন৷ এই ক্ষতি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির নয়, এটি সামষ্টিক৷ কেননা, শব্দ দূষণজনিত অসুস্থতার কারণে রাষ্ট্রের চিকিত্সা খাতে ব্যয় বাড়ছে৷ অসুস্থতার জন্য একজন মানুষ যে অবদান রাখতে পারতো তা থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে৷ ভীষণরকম অসুস্থতা ছাড়াও শব্দদূষণ মনযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে বিধায় মানুষ অনেক কাজ সুচারুভাবে করতে পারছে না৷ শব্দদূষণে বিরক্তি ও ক্লান্তির কারণেও অনেকের কর্মস্পৃহা নষ্ট হয়৷ বিশেষ করে রাতের বেলায় ভালো ঘুম হওয়া প্রয়োজন, যা মানুষের ক্লান্তি দূর করে কর্মোদ্যোমী করে তোলে৷ কিন্তু সেই সুযোগ কোথায়? সারাদিন অসহ্য শব্দ যন্ত্রণা ভোগ করার পর এখন আমরা অনেক সময় রাতের বেলা বিশ্রামের অধিকারটুকু থেকেও বঞ্চিত৷
বিশেষ করে রোগী এবং শিশুরা এজন্য অধিক ক্ষতির শিকার৷ আর সুস্থ এবং বিকশিত প্রজন্ম তৈরির ক্ষেত্রেও শব্দদূষণ একটি বড় অন্তরায়৷ শিক্ষার্থীগণ শব্দদূষণের কারণে পড়ালেখায় ঠিক মতো মনযোগী হতে পারে না৷ কারণ পাশের বাড়িতে উচ্চশব্দে গান বাজছে, পাইলিংয়ের কাজ চলছে, ধর্মীয় সভা অথবা রাজনৈতিক সভা হচ্ছে৷ আমরা এগুলি করছি আনন্দ বা কল্যাণের জন্য৷ কিন্তু তা যদি ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে আমাদের ভাবতে হবে৷ কীভাবে শব্দদূষণ না করে এ কাজগুলি করতে পারি, সে উপায় বের করতে হবে৷ কল-কারখানায় যন্ত্রপাতির ব্যবহার, যানবাহনের হর্ন ব্যবহারসহ সকলক্ষেত্রেই আমাদের নিয়ম-নীতি মানার প্রয়োজন রয়েছে৷ এমনকি কথা বলার ক্ষেত্রেও আমরা এতটা উচ্চকিত যে, কখনো কখনো তা চিত্কারের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়৷ আমরা মোবাইলে বা জনাসমাগমস্থলে এমনভাবে কথা বলি বা আলোচনা করি যে, ভুলে যাই আমাদের পাশে অন্য মানুষ আছে এবং তাঁরা বিরক্ত হচ্ছেন৷ অনেক দেশেই, বিশেষ জাপানিরা কম শব্দ করে কথা বলে৷ সেটি রপ্ত করা হয়ত সময়সাপেক্ষ৷ তবে সভ্যতার মাপকাঠিতে নিজেদের উত্তোরণ চাইলে এটি আজ না হয় কাল অর্জন করতেই হবে৷
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশে কাজ হচ্ছে৷ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ধারাবাহিকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে৷ অবশেষে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ সালের আলোকে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ প্রণয়ন করা হয়েছে৷ উক্ত বিধিমালায় শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে৷ শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ নির্দেশিত এলাকাভেদে শব্দের মানমাত্রা:
ক্রমিক নং এলাকার শ্রেণি মানমাত্রা দিবা রাত্রি
১. নীরব এলাকা ৫০ ৪০
২. আবাসিক এলাকা ৫৫ ৪৫
৩. মিশ্র এলাকা ৬০ ৫০
৪. বাণিজ্যিক এলাকা ৭০ ৬০
৫. শিল্প এলাকা ৭৫ ৭০
বিধিমালা নির্ধারিত মানমাত্রা অতিক্রম করছে কিনা তা দেখার জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রাজধানীতে গবেষণা হয়েছে৷ সব সময়ই নির্বাচিত স্থানসমূহে রেকর্ডকৃত শব্দের মাত্রা বিধিমালা নির্ধারিত মানমাত্রা অতিক্রম করেছে৷ তারা বিষয়টি গণমাধ্যমের সহযোগিতায় সরকার ও জনগণকে জানানোর চেষ্টা করেছে৷
কিন্তু দীর্ঘ সময় এ বিষয়ে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি৷ অর্থাত্, বায়ু, পানি ও মাটি দূষণের মতো শব্দদূষণ সেভাবে গুরুত্ব পায়নি৷ অথচ জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় সরকারের উদ্যোগে এ বিষয় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ হওয়া প্রয়োজন৷ বিশেষ করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিবেশ অধিদপ্তরের অন্যতম কাজ হচ্ছে শব্দদূষণের ক্ষতির হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করা৷ এ জন্য তাদের ধারাবাহিক কাজ থাকার কথা৷ যেমন নিয়মিত শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা৷ এছাড়া বিধিমালা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণারও দরকার ছিল৷ দুঃখের সঙ্গে সেই ঘাটতি আমরা লক্ষ্য করেছি৷ তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রত্যেকের ভূমিকা রয়েছে৷ আর এক অর্থে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব শব্দদূষণের মতো ক্ষতিকর দূষণ নিয়ন্ত্রণে একযোগে কাজ করা৷
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ছাড়াও আরো কিছু আইন ও নীতিমালা রয়েছে, যেগুলি শব্দ দূষণের ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষায় জনগণের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে৷
শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এ বলা আছে প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসমূহ নিজ নিজ এলাকার মধ্যে আবাসিক, বাণিজ্যিক মিশ্র, শিল্প বা নীরব এলাকাসমূহকে চিহ্নিত করিয়া স্ট্যান্ডার্ড সংকেত বা সাইনবোর্ড স্থাপন ও সংরক্ষণ করবে, যাতে করে মানুষ বুঝতে পারে সে কোথায় কী করতে পারবে৷ নীরব এলাকা, অর্থাত্ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, উপসানালয় রয়েছে এমন এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোনো প্রকার হর্ণ বাজানো যাবে না৷ এটি জানা থাকলে নাগরিকদের প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে৷
এমনকি পুলিশের পক্ষে পদক্ষেপ নেয়া সহজ হবে৷ বিধিমালায় মোটরযান (সকল প্রকার)-এর অনুমোদিত মানমাত্রা ৮৫ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হয়েছে৷ অর্থাত্ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন প্রদান এবং ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানের ক্ষেত্রে খেয়াল করবে যাতে এই মাত্রা অতিক্রম না করে৷ এছাড়া মোটর, নৌ বা অন্য কোনো যানে অনুমোদিত শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ণ ব্যবহার যাবে না বলেও দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে৷ এছাড়া আমদানী নীতি আদেশ ২০১৫-তে ৮৫ ডেসিবেলের অধিক মাত্রার হর্ন আমদানী নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩-তে নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়েছে৷
শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এ উল্লেখ রয়েছে, আবাসিক এলাকার শেষ সীমানা হতে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে ইট বা পাথর ভাঙার মেশিন ব্যবহার করা যাবে না এবং সন্ধ্যা ৭ (সাত) টা থেকে সকাল ৭ (সাত) টা পর্যন্ত মিকচার মেশিনসহ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য যন্ত্র বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাবে না৷ ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় সন্ধ্যা ৬ টা থেকে সকাল ৬ টা পর্যন্ত কোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার বা নির্মাণ পদ্ধতির মাধ্যমে নির্মাণ সাইট বা প্রকল্প স্থলে বিরক্তিকর কোনো আওয়াজ বা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যাবে না এবং দিন-রাত্রির কোনো সময়ই সাইটে পাথর বা খোয়া ভাঙানো মেশিন ব্যবহার করা যাবে না৷ শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ সালে কোনো ধরনের অনুষ্ঠানে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যে কোনো যন্ত্রপাতি দৈনিক ০৫ (পাঁচ) ঘণ্টার বেশি সময়ব্যাপী ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা যাবে না এবং অনুমোদনের সময়সীমা রাত্রি ১০ (দশ) টা অতিক্রম করবে না৷ বিধিমালা সম্পর্কে সর্বস্তরে জানান দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে৷
মেট্রোপলিটন এলাকার পুলিশ কমিশনার, জেলাধীন এলাকায় জেলা প্রশাসক, থানার আওতাভূক্ত এলাকায় থানা নির্বাহী কর্মকর্তা ( টিএনও) এর নিকট থেকে এ শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুমতি নিতে হবে৷ এমনকি অনুমতি নিলেও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলে তাঁরা সেগুলি তাত্ক্ষণিক বন্ধ করে দিতে পারবেন বলে উল্লেখ আছে৷ শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী, সরকার বা পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বাস্তবায়নের জন্য ক্ষমতা প্রদান করতে পারবেন৷ বিধিমালায় আরো উল্লেখ আছে শব্দদূষণ থেকে প্রতিকার পেতে একজন নাগরিক টেলিফোন, মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত যে কোনো কর্মকর্তাকে অবহিত করতে পারবেন৷ বর্তমানে ‘৯৯৯'-এ কল করেও নাগরিকেরা এই সেবা পেতে পারেন৷ তবে এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পুলিশ প্রশাসনের সামনে কোনো আইন লঙ্ঘন হলে তা থেকে জনসাধারণকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবে তাদের উপরই বর্তায়৷ সুতরাং তাঁরা স্বপ্রণোদিত হয়ে কাজটি করবেন বলেই আমরা প্রত্যাশা করি৷ কিন্তু তাঁদের সামনে শব্দদূষণ হলেও নির্বিকার থাকতে দেখা যায়৷
পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক কর্মসূচি (২০১৫-১৭) বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যার আওতায় দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে শব্দের মানমাত্রা পরিমাপ বিষয়ক একটি জরিপ করা হয়েছে৷ জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, নির্ধারিত সবগুলি স্থানেই শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করেছে৷ সুতরাং, এই ফলাফলের উপর ভিত্তি করে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন৷ এ সকল স্থানে যানবাহন এবং এর হর্ন শব্দের উত্স প্রধান হিসেবে পাওয়া গিয়েছে৷ উল্লেখ্য, অনেক স্থানেই মাত্র ১০ মিনিটে ৫০০ থেকে ১০০০ বারের মতো হর্ন বাজাতে দেখা যায়৷ এছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, নির্মাণ কাজ এবং কল-কারখানা থেকেও শব্দদূষণ সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে৷
এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য আমাদের যথেষ্ট আইন ও নীতিমালা রয়েছে৷ এখন সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন৷ তবে ভবিষ্যতে এগুলির সংশোধনের উপর আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে৷ শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এ অনেক কিছু আওতামুক্ত রয়েছে, যেমন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, রেল ইত্যাদি৷ এছাড়া শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশকে সরাসরি ক্ষমতা প্রদান না করা, জেনারেটর বা শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির জন্য শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে না দেওয়া ইতাদি৷ বর্তমানে মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩-তে নিষিদ্ধ হর্ন বাজানোর জন্য জরিমানা মাত্র একশত টাকা৷ এগুলো সম্পর্কে আমাদের ভাবা প্রয়োজন৷ তাছাড়া শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, ২০১০-এ শব্দদূষণ বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন৷ তবে আইন, বিধিমালা যা-ই বলি না কেন, সর্বস্তরে শব্দ দূষণের ক্ষতি সম্পর্কে অবহিত করা না হলে সুফল পাওয়া যাবে না৷ সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই শব্দদূষণের মতো নীরব ঘাতককে রুখে দেওয়া সম্ভব৷ যেমন করে এ দেশ থেকে ডায়রিয়াজনিত রোগ থেকে মৃত্যূ রোধ করা সম্ভব হয়েছে৷ সমাজের মধ্যে জ্ঞান সৃষ্টির মাধ্যমেই মানুষের আচরণে পরিবর্তন আসবে৷ অর্থাত্ হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকা, সন্ধ্যার পর নির্মাণ কাজ না করা, শব্দ কম হয় সেরকম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দ এড়িয়ে চলা ইত্যাদি৷ এভাবেই সংস্কৃতিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে৷
এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷